পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য to নিম তিতে, নিম্বন্দে তিতে, তিতে মাকাল ফল । তাহার অধিক তিতো, কন্তে, বোন-সতিনের ঘর । জাদু, এ তো বড়ে রঙ্গ জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ । চার হিম দেখাতে পার যাব তোমার সঙ্গ । হিম জল, হিম স্থল, হিম শীতলপাটি । তাহার অধিক হিম, কন্তে, তোমার বুকের ছাতি । কবিসম্প্রদায় কবিত্বস্বষ্টির আরম্ভকাল হইতে বিবিধ ভাষায় বিচিত্র ছন্দে নারীজাতির স্তবগান করিয়া আসিতেছেন, কিন্তু উপরি-উদ্ধত স্তবগানের মধ্যে যেমন একটি সরল সহজ ভাব এবং একটি সরল সহজ চিত্র আছে এমন অতি অল্প কাব্যেই পাওয়া যায়। ইহার মধ্যে অজ্ঞাতসারে একটুখানি সরল কৌতুক আছে। সীতার ধনুকভাঙা এবং দ্রৌপদীর লক্ষ্যবেধ পণ খুব কঠিন পণ ছিল সন্দেহ নাই । কিন্তু এই সরলা কন্যাটি যে পণ করিয়া বসিয়াছে সেটি তেমন কঠিন বলিয়া বোধ হয় না। পৃথিবীতে এত কালো ধলো রাঙা মিষ্টি আছে যে, তাহার মধ্যে কেবল চারিটিমাত্র নমুনা দেখাইয়া এমন কন্যা লাভ করা ভাগ্যবানের কাজ। আজকাল কলির শেষ দশায় সমস্ত পুরুষের ভাগ্য ফিরিয়াছে ; ধনুৰ্ভঙ্গ, লক্ষ্যবেধ, বিচারে জয়, এ-সমস্ত কিছুষ্ট আবশ্যক হয় না— উলটিয়া তাহারাই কোম্পানির কাগজ পণ করিয়া বসেন এবং সেই কাপুরুষোচিত নীচতার জন্য তিলমাত্র আত্মশ্লানি অনুভব করেন না। ইহা অপেক্ষা, আমাদের আলোচিত ছড়াটির নায়ক-মহাশয়কে যে সামান্য সহজ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া কন্যা লাভ করিতে হইয়াছিল সেও অনেক ভালো । যদিও পরীক্ষার শেষ ফল উক্ত ছড়াটির মধ্যে পাওয়া যায় নাই তথাপি অনুমানে বলিতে পারি, লোকটি পুরা নম্বর পাইয়াছিল। কারণ, দেখা যাইতেছে, প্রত্যেক শ্লোকের চারিটি উত্তরের মধ্যে চতুর্থ উত্তরটি দিব্য সন্তোষজনক হইয়াছিল। কিন্তু পরীক্ষয়িত্রী যখন স্বয়ং সশরীরে সম্মুখে উপস্থিত ছিলেন তখন সে উত্তরগুলি জোগানো আমাদের নায়কের পক্ষে কিছুমাত্র কঠিন হইয়াছিল তাহা আমরা বলিতে পারি না, ও যেন ঠিক বই খুলিয়া উত্তর দেওয়ার মতো । কিন্তু সেজন্য নিফল ঈর্ষা প্রকাশ করিতে চাহি না । যিনি পরীক্ষক ছিলেন তিনি যদি সন্তুষ্ট হইয়া থাকেন, তবে আমাদের আর কিছু বলিবার নাই । প্রথম ছত্রেই কন্যা কহিতেছেন, “জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ জাদু, এ তো বড়ো রঙ্গ । ইহা হইতে বোধ হইতেছে, পরীক্ষা আরও পূর্বেই আরম্ভ হইয়াছে এবং পরীক্ষার্থী এমন মনের মতন আনন্দজনক উত্তরটি দিয়াছে যে, কন্যার প্রশ্নজিজ্ঞাসার