পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য لا هوايا যে, তাহার সমস্ত দ্বন্দ্বকলহের মাঝখানে একটি স্বকোমল স্নেহ গোপনে সঞ্চিত হইতেছিল— সেই অলক্ষিত স্নেহ সহসা স্বতীব্র অমুশোচনার সহিত আজ তাহাকে বড়ো কঠিন আঘাত করিল। সে খাটের খুরা ধরিয়া কাদিতে লাগিল । বাল্যকালে এই এক থাটে তাহারা দুই ভগিনী শয়ন করিত, এই শয়নগৃহই তাহাদের সমস্ত কলহবিবাদ এবং সমস্ত খেলাধুলার লীলাক্ষেত্র ছিল। বিচ্ছেদের দিনে এই শয়নঘরে আসিয়া, এই খাটের খুরা ধরিয়া, নির্জনে গোপনে দাড়াইয়া, ব্যথিত বালিকা যে ব্যাকুল অশ্রপাত করিয়াছিল সেই গভীর স্নেহ-উৎসের নির্মল জলধারায় কলহভাষার সমস্ত কলঙ্ক প্রক্ষালিত হইয়া শুভ্ৰ হুইয়া গিয়াছে । এই-সমস্ত ছড়ার মধ্যে একটি ছত্রে একটি কথায় সুখদু:খের এক-একটি বড়ো বড়ো অধ্যায় উহ রহিয়া গিয়াছে । নিম্নে যে ছড়াটি উদ্ভূত করিতেছি তাহার দুই ছত্রে আদ্যকাল হইতে অদ্যকাল পর্যন্ত বঙ্গীয় জননীর কত দিনের শোকের ইতিহাস ব্যক্ত হইয়াছে – দোল দোল দুলুনি। রাঙা মাথায় চিরুনি । বর আসবে এখনি । নিয়ে যাবে তখনি ॥ কেঁদে কেন মর । আপনি বুঝিয়া দেখো কার ঘর কর । একটি শিশুকন্যাকেও দোল দিতে দিতে দূরভবিষ্কংবর্তী বিচ্ছেদসম্ভাবনা স্বতই মনে উদয় হয় এবং মায়ের চক্ষে জল আসে । তখন একমাত্র সাত্বনার কথা এই যে, এমনি চিরদিন হইয়া আসিতেছে। তুমিও একদিন মাকে কাদাইয়া পরের ঘরে চলিয়া আসিয়াছিলে— আজিকার সংসার হইতে সেদিনকার নিদারুণ বিচ্ছেদের সেই ক্ষতবেদনা সম্পূর্ণ আরোগ্য হইয়া গিয়াছে— তোমার মেয়েও যথাকালে তোমাকে ছাড়িয়া চলিয়া যাইবে এবং সে দুঃখও বিশ্বজগতে অধিক দিন স্থায়ী হইবে না। পুটুর শ্বশুরবাড়ি-প্রয়াণের অনেক ছবি এবং অনেক প্রসঙ্গ পাওয়া যায়। সে কথাটা সর্বদাই মনে লাগিয়া আছে। পুটু যাবে শ্বশুরবাড়ি, সঙ্গে যাবে কে । ঘরে আছে কুনো বেড়াল, কোমর বেঁধেছে । আম-কঁঠালের বাগান দেব ছায়ায় ছায়ায় যেতে । চার মিনসে কাহার দেব পালকি বহাতে ।