পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

লোকসাহিত্য ©5& এবং ভাষার বিশুদ্ধি ও নৈপুণ্য বিসর্জন দিয়া কেবল স্বলভ অনুপ্রাস ও ঝুটা অলংকার লইয়া কাজ সরিয়া দিয়াছে ; ভাবের কবিত্ব সম্বন্ধেও তাহার মধ্যে বিশেষ উৎকর্ষ দেখা যায় না। পূর্ববর্তী শাক্ত এবং বৈষ্ণব মহাজনদিগের ভাবগুলিকে অত্যন্ত তরল এবং ফিকা করিয়া কবিগণ শহরের শ্রোতাদিগকে স্থলভ মূল্যে যোগাইয়াছেন। তাহাদের যাহা সংযত ছিল এখানে তাহা শিথিল এবং বিকীর্ণ। র্তাহাদের কুঞ্জবনে যাহা পুপ-আকারে প্রফুল্ল এখানে তাহা বাসি ব্যঞ্জন-আকারে সম্মিশ্রিত । অনেক জিনিস আছে যাহাকে স্বস্থান হইতে বিচু্যত করিলে তাহা বিকৃত এবং দূষণীয় হইয়া উঠে । কবির গানেও সেইরূপ অনেক ভাব তাহার যথাস্থান হইতে পরিভ্রষ্ট হইয়া কলুষিত হইয়া উঠিয়াছে। এ কথা স্বীকার করিতে হইবে যে, বৈষ্ণব কবিদের পদাবলীর মধ্যে এমন অংশ আছে যাহা নির্মল নহে, কিন্তু সমগ্রের মধ্যে তাহা শোভা পাইয়া গিয়াছে। কবিওয়ালা সেইটিকে তাহার সজীব আশ্রয় হইতে, তাহার সৌন্দর্ধপরিবেষ্টন হষ্টতে, বিচ্ছিন্ন করিয়া ইতর ভাষা এবং শিথিল ছন্দ -সহযোগে স্বতন্ত্রভাবে আমাদের সম্মুখে ধরিলে তাহা গলিত পদার্থের ন্যায় কদৰ্য মূর্তি ধারণ করে | বৈষ্ণব কাব্যে প্রেমের নানা বৈচিত্র্যের মধ্যে রাধার খণ্ডিত অবস্থার বর্ণনা আছে । আধ্যাত্মিক অর্থে ইহার কোনো বিশেষ গৌরব থাকিতে পারে, কিন্তু সাহি হিসাবে শ্ৰীকৃষ্ণের এই কামুক ছলনার দ্বারা কৃষ্ণরাধার প্রেমকাব্যের সৌন্দর্যও খণ্ডিত হইয়াছে তাহাতে সন্দেহ নাই । রাধিকার এই অবমাননায় কাব্যশ্রীও অবমানিত হইয়াছে । কিন্তু প্রচুর সৌন্দর্যরাশির মধ্যে এ সকল বিকৃতি আমরা চোখ মেলিয়া দেখি না— সমগ্রের সৌন্দর্ঘপ্রভাবে তাহার দূৰণীয়তা অনেকটা দূর হইয়া যায় । লৌকিক অর্থে ধরিতে গেলে বৈষ্ণব কাব্যে প্রেমের আদর্শ অনেক স্থলে স্থলিত হইয়াছে, তথাপি সমগ্র পাঠের পর বাহার মনে একটা স্বন্দর এবং উন্নত ভাবের স্বষ্টি না হয়, সে হয় সমস্তটা ভালো করিয়া পড়ে নাই নয় সে যথার্থ কাব্যরসের রসিক নহে । কিন্তু আমাদের কবিওয়ালারা বৈষ্ণব কাব্যের সৌন্দর্য এবং গভীরতা নিজেদের এবং শ্রোতাদের আয়ত্তের অতীত জানিয়া প্রধানত যে অংশ নির্বাচিত করিয়া লইয়াছেন তাহা অতি অযোগ্য । কলঙ্ক এবং ছলনা ইহাই কবিওয়ালাদের গানের প্রধান বিষয় । বারম্বার রাধিক এবং রাধিকার সখীগণ কুজাকে অথবা অপরাকে লক্ষ করিয়া তীব্র সরল পরিহাসে শ্যামকে গঞ্জনা করিতেছেন। তাহদের আরও একটি রচনার বিষয় আছে, স্ত্রী-পক্ষ এবং পুরুষ-পক্ষের পরস্পরের প্রতি অবিশ্বাস