পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অচলায়তন V8S মধ্যেই ঘুরিয়ে মারে, তার থেকেই বের করে সোজা রাস্তায় বিশ্বের সকল যাত্রীর সঙ্গে দাঁড় করিয়ে দেবার জন্যেই আমি আজ এসেছি । . . আচার্য। ধন্য করেছ। কিন্তু এতদিন আস নি কেন প্ৰভু ? আমাদের আয়তনের পাশেই এই দর্ভকপাড়ায় তুমি আনাগোনা করছি আর কত বৎসর হয়ে গেল আমাদের আর দেখা দিলে না ! দাদাঠাকুর । এদের দেখা দেওয়ার রাস্তা যে সোজা । তোমাদের সঙ্গে দেখা করা তো সহজ করে রাখি নি । পঞ্চক। ভালোই করেছি, তোমার শক্তি পরীক্ষা করে নিয়েছি। তুমি আমাদের পথ সহজ করে দেবে কিন্তু তোমার পথ সহজ নয়। এখন আমি ভাবছি। তোমাকে ডাকব কী বলে ? দাদাঠাকুর, না જી: ? দাদাঠাকুর । যে জানতে চায় না যে আমি তাকে চালাচ্ছি। আমি তার দাদাঠাকুর, আর যে আমার আদেশ নিয়ে চলতে চায় আমি তার গুরু । পঞ্চক। প্ৰভু, তুমি তা হলে আমার দুইই। আমাকে আমিই চালাচ্ছি, আর আমাকে তুমিই চালােচ্ছ এই দুটােই আমি মিশিয়ে জানতে চাই। আমি শোণপাংশু না, তোমাকে মেনে চলতে ভয় নেই। তোমার মুখের আদেশকেই আনন্দে আমার মনের ইচ্ছা করে তুলতে পারব। এবার তবে তোমার সঙ্গে তোমারই বোঝা মাথায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ি ঠাকুর । দাদাঠাকুর । আমি তোমার জায়গা ঠিক করে রেখেছি। পঞ্চক । কোথায় ঠাকুর ? দাদাঠাকুর । ঐ অচলায়তনে । পঞ্চক । আবার অচলায়তনে ! আমার কারাদণ্ডের মেয়াদ ফুরোয় নি ? দাদাঠাকুর । কারাগার যা ছিল সে তো আমি ভেঙে ফেলেছি, এখন সেই উপকরণ দিয়ে সেইখানেই তোমাকে মন্দির গেঁথে তুলতে হবে । পঞ্চক । ঠাকুর, আমি তোমাকে জোড়হাত করে বলছি, আর আমাকে বসিয়ে রাখার কাজে গিয়ে না। তােমার ঐ বীরবেশে আমার মন ভুলেছে— তোমাকে এমন মনোহর আর কখনো দেখি দাদাঠাকুর । ভয় নেই। পঞ্চক । অচলায়তনে আর সেই শান্তি দেখতে পাবে না। তার দ্বার ফুটাে করে দিয়ে আমি তার মধ্যেই লড়াইয়ের ঝোড়ো হাওয়া এনে দিয়েছি। নিজের নাসাগ্রভাগের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে বসে থাকবার দিন এখন চিরকালের মতো ঘুচিয়ে দিয়েছি। পঞ্চক । কিন্তু অচলায়তনের লোকে যে আমাকে আপনি বলে গ্ৰহণ করবে না প্ৰভু । দাদাঠাকুর । আমি বলছি তুমি অচলায়তনের লোকের সকলের চেয়ে আপন । পঞ্চক। কিন্তু দাদাঠাকুর, আমি কেবল একলা, একলা, ওরা আমাকে সবাই ঠেলে রেখে দেবে। দাদাঠাকুর । ওরা তোমাকে গ্ৰহণ করতে চাচ্ছে না, সেইজন্যেই ওখানে তোমার সব চেয়ে দরকার। ওরা তোমাকে ঠেলে দিচ্ছে বলেই তুমি ওদের ঠেলতে পারবে না। পঞ্চক । আমাকে কী করতে হবে ? দাদাঠাকুর । যে যেখানে ছড়িয়ে আছে। সবাইকে ডাক দিয়ে আনতে হবে। পঞ্চক । সবাইকে কি কুলোবে ? দাদাঠাকুর । না। যদি কুলোয় তা হলে এমনি করে দেয়াল আবার আর-একদিন ভাঙতেই হবে সেই বুঝে গেঁথো— আমার আর কাজ বাড়িয়ে না । পঞ্চক । শোণপাংশুদেরদাদাঠাকুর । হাঁ, ওদেরও ডেকে এনে বসাতে হবে, ওরা একটু বসতে শিখুক । পঞ্চক। ওদের বসিয়ে রাখা ! সর্বনাশ ! তার চেয়ে ওদের ভাঙতে চুরতে দিলে ওরা বেশি ঠাণ্ডা *াকে । ওরা যে কেবল ছটফট করাকেই মুক্তি মনে করে ।