পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిy রবীন্দ্র-রচনাবলী হবে । তাই নিয়ে ও দুঃখ করছিল- আমি ওকে বললুম ভিক্ষা করতে গিয়ে তুমি যে কত বেড়াতে পাও, সবাই তো সে পায় না । - ঠাকুরদা । বাবা, ঘরে বসে থাকলেই বা এত কিসের দুঃখ ? অমল। না, না, দুঃখ নেই। প্ৰথমে যখন আমাকে ঘরের মধ্যে বসিয়ে রেখে দিয়েছিল আমার মনে হয়েছিল যেন দিন ফুরোচ্ছে না, আমাদের রাজার ডাকঘর দেখে অবধি এখন আমার রোজই ভালো লাগে- এই ঘরের মধ্যে বসে বসেই ভালো লাগে- একদিন আমার চিঠি এসে পৌছোবে, সে কথা মনে করলেই আমি খুব খুশি হয়ে চুপ করে বসে থাকতে পারি। কিন্তু রাজার চিঠিতে কী যে লেখা থাকবে তা তো আমি জানি নে । ঠাকুরদা । তা না-ই জানলে । তোমার নামটি তো লেখা থাকবে- তা হলেই হল। মাধব দত্তের প্রবেশ মাধব দত্ত । তোমরা দুজনে মিলে এ কী ফেসাদ বাধিয়ে বসে আছ বলো দেখি ? ঠাকুরদা। কেন, হয়েছে কী ? মাধব দত্ত। শুনছি, তােমরা নাকি রটিয়েছ, রাজা তােমাদেরই চিঠি লিখবেন বলে ডাকঘর ঠাকুরদা। তাতে হয়েছে কী ? মািণ দত্ত। আমাদের পঞ্চানন মােড়ল সেই কথাটি বাজার কাছে লাগিয়ে বেনামি চিঠি লিখে ঠাকুরদা। সকল কথাই রাজার কানে ওঠে, সে কি আমরা জানি নে ? মাধব দত্ত । তবে সামলে চল-না কেন । রাজাবাদশার নাম করে আমন যা-তা কথা মুখে আনাে কেন ? তোমরা যে আমাকে সুদ্ধ মুশকিলে ফেলবে । অমল । ফকির, রাজা কি রাগ করবে ? ঠাকুরদা। অমনি বললেই হল ! রাগ করবে ! কেমন রাগ করে দেখি-না। আমার মতো ফকির আর তোমার মতো ছেলের উপর রাগ ক’রে সে কেমন রাজগিরি ফলায় তা দেখা যাবে। অমল । দেখো ফকির, আজ সকালবেলা থেকে আমার চোখের উপর থেকে-থেকে অন্ধকার হয়ে আসছে ; মনে হচ্ছে সব যেন স্বপ্ন । একেবারে চুপ করে থাকতে ইচ্ছে করছে। কথা কইতে আর ইচ্ছে করছে না । রাজার চিঠি কি আসবে না ? এখনই এই ঘর যদি সব মিলিয়ে যায়- যদি— ঠাকুরদা । (অমলকে বাতাস করিতে করিতে) আসবে, চিঠি আজই আসবে। কবিরাজ্যের প্রবেশ কবিরাজ ।। আজ কেমন ঠেকছে ? অমল । কবিরাজমশায়, আজ খুব ভালো বোধ হচ্ছে- মনে হচ্ছে যেন সব বেদনা চলে গেছে | কবিরাজ ; (জনান্তিকে মাধব দত্তের প্রতি) ঐ হাসিটি তো ভালো ঠেকছে না। ঐ-যে বলছে খুব ভালো বোধ হচ্ছে ঐটেই হল খারাপ লক্ষণ । আমাদের চক্ৰধরদত্ত বলছেন মাধব দত্ত। দোহাই কবিরাজমশায়, চক্ৰধরদত্তের কথা রেখে দিন। এখন বলুন ব্যাপারখানা কী । কবিরাজ। বােধ হচ্ছে, আর ধরে রাখা যাবে না। আমি তো নিষেধ করে গিয়েছিলুম। কিন্তু বোধ হচ্ছে বাইরের হাওয়া লেগেছে । মাধব দত্ত। না কবিরাজমশায়, আমি ওকে খুব করেই চারি দিক থেকে আগলে সামলে রেখেছি। ! ওকে বাইরে যেতে দিই নে- দরজা তো প্ৰায়ই বন্ধ রাখি । কবিরাজ । হঠাৎ আজ একটা কেমন হওয়া দিয়েছে- আমি দেখে এলুম, তোমাদের সদর-দরজার ভিতর দিয়ে হু হু করে হওয়া বইছে। ওটা একেবারেই ভালো নয়। ও-দরজাটা বেশ ভালো করে তালাচাবি-বন্ধ করে দাও । না-হয় দিন দুই-তিন তোমাদের এখানে লোক-আনাগোনা বন্ধই