পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ठळ3 8や2° দিলে। দেশের লোকের কাছে আমার জাত যাবে। আমি কি কুলিমজুর।” “আচ্ছা, এখন যা । তোদের দিদিমণি যখন তোকে ইটসুরকি বইতে বলবে। আমার নাম করে বলিস আমি বারণ করেছি। দাড়িয়ে রইলি যে ?” “দেশ থেকে চিঠি এসেছে বড়ো হালের গোরুটা মারা গেছে।” বলে মাথা চুলকোতে লািগল । নীরজা বললে, “না, মারা যায় নি, দিব্যি বেঁচে আছে। নে দুটাে টাকা, আর বেশি বকিস নে ৷” এই বলে টিপাইয়ের উপরকার পিতলের বাক্স থেকে টাকা বের করে দিলে। “আবার কী ।” “বউয়ের জন্যে একখানা পুরোনো কাপড় । জয়জয়কার হবে তোমার।” এই বলে পানের ছোপে কালো-বর্ণ মুখ প্রসারিত করে হাসলে। নীরজা বললে, “রোশনি, দে তো ওকে আলনার ঐ কাপড়খানা ।” । রোশনি সবলে মাথা নেড়ে বললে, “সে কী কথা, ও যে তোমার ঢাকাই শাড়ি ।” “হােক-না ঢাকাই শাড়ি। আমার কাছে আজ। সব শাড়িই সমান। কবেই বা আর পরব।” রোশনি দৃঢ়মুখ করে বললে, “না, সে হবে না। ওকে তোমার সেই লালপোড়ে কলের কাপড়টা দেব। দেখ হলা, খোখীকে যদি এমনি জ্বালাতন করিস বাবুকে বলে তোকে দূর করে তাড়িয়ে দেব।” হল নীরজার পা ধরে কান্নার সুরে বললে, “আমার কপাল ভেঙেছে বউদিদি ৷” “কেন রে, কী হয়েছে তোর ” “আয়াজিকে মাসি বলি আমি । আমার মা নেই, এতদিন জানতেম হতভাগা হলাকে আয়াজি ভালোবাসেন । আজ বউদিদি, তোমার যদি দয়া হল উনি কেন দেন বাগড়া । কারও দোষ নয়, আমারই কপালের দোষ । নইলে তোমার হলাকে পরের হাতে দিয়ে তুমি আজ বিছানায় পড়ে !” “ভয় নেই রে, তোর মাসি তোকে ভালোই বাসে । তুই আসবার আগেই তোর গুণগান করছিল। রোশনি, দে। ওকে ঐ কাপড়টা, নইলে ও ধন্না দিয়ে পড়ে থাকবে ।” অত্যন্ত বিরস মুখে আয় কাপড়টা এনে ফেলে দিলে ওর সামনে । হলা সেটা তুলে নিয়ে গড় হয়ে প্ৰণাম করলে। তার পরে উঠে দাড়িয়ে বললে, “এই গামছােটা দিয়ে মুড়ে নিই বউদিদি । আমার ময়লা হাত, দাগ লাগবে।” সম্মতির অপেক্ষা না রেখেই আলনা থেকে তোয়ালেটা নিয়েই কাপড় মুড়ে দ্রুতপদে হলা প্ৰস্থান করলে । নীরজা আয়াকে জিজ্ঞাসা করলে, “আচ্ছা আয়া, তুই ঠিক জানিস বাবু বেরিয়ে গেছেন ?” “নিজের চক্ষে দেখলুম। কী তাড়া। টুপিটা নিতে ভুলে গেলেন।” “আজি এই প্রথম হল। আমার সকালবেলাকার পাওনা ফুলে ফাকি পড়ল। দিনে দিনে এই ফাঁকি বাড়তে থাকবে । শেষকালে আমি গিয়ে পড়ব আমার সংসারের আঁস্তাকুড়ে, যেখানে নিবে-যাওয়া পোড়া কয়লার জায়গা ।” সরলাকে আসতে দেখে আয় মুখ বাকিয়ে চলে গেল। : সরলা ঢুকল ঘরে। তার হাতে একটি অর্কিড। ফুলটি শুভ্ৰ, পাপড়ির আগায় বেগনির রেখা। যেন ডানা-মেলা মস্ত প্ৰজাপতি । সরল ছিপছিপে লম্বা, শামলা রঙ, প্রথমেই লক্ষ্য হয় তার বড়ো বড়ো চােখ, উজ্জ্বল এবং করুণ। মােটা খন্দরের শাড়ি, চুল অযত্নে বাঁধা, শ্লথ বন্ধনে নেমে পড়েছে কাধের দিকে । অসজিত দেহ যৌবনের সমাগমকে অনাদৃত করে রেখেছে। নীরজা তার মুখের দিকে তাকালে না, সরলা ধীরে ধীরে ফুলটি বিছানায় তার সামনে রেখে দিলে। নীরজা বিরক্তির ভাব গোপন না করেই বললে, “কে আনতে বলেছে।” । “আদিতদা।” । । "নিজে এলেন না যে ?” "নিয়ু মার্কেটের দােকানে তাড়াতাড়ি যেতে হল চা খাওয়া সেরেই।” "এত তাড়া কিসের ।”