পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

व्लंs ৪৬৯ ৷ সরলা মৃদুস্বরে বললে, “মফস্বল থেকে হঠাৎ অনেকগুলো অর্ডার এসেছে দেখে কোনোমতে আসছে। বর্ষার আগেই বেশি করে গাছ বানাতে পণ করেছেন। আমি বারণ করেছিলুম।” “বারণ করেছিলে বুঝি ! আচ্ছা, আচ্ছা, ডেকে দাও হলা মালীকে ৷” এল হিলা মালী। নীরজা বললে, “বাবু হয়ে উঠেছ ? গোলাপের ডাল পুঁতিতে হাতে খিল ধরে ! দিদিমণি তোমার অ্যাসিস্টেন্ট মালী নাকি । বাবু শহর থেকে ফেরবার আগেই যতগুলো পারিস ডাল পুতবি, আজ তোদের ছুটি নেই বলে দিচ্ছি। পােড়া ঘাসপাতার সঙ্গে বালি মিশিয়ে জমি তৈরি করে নিস বিলের ডান পাড়িতে |” মনে মনে স্থির করলে এইখানে শুয়ে-শুয়েই গোলাপের গাছ সে তৈরি করে তুলবেই। হলা মালীর আর নিষ্কৃতি নেই। হঠাৎ হল প্রশ্রয়ের হাসিতে মুখ ভরে বললে, “বউদিদি, এই একটা পিতলের ঘটি । কটকের হরসুন্দর মাইতির তৈরি । এ জিনিসের দরদ তুমিই বুঝবে। তোমার ফুলদানি মানাবে ভালো।” নীরজা জিজ্ঞাসা করলে, “এর দাম কত ।” জিভা কেটে হল বললে, “এমন কথা বোলো না । এ ঘটির আবার দাম নেব ! গরিব আমি, তা বলে তো ছোটোলোক নই। তোমারই খেয়ে-পরে যে মানুষ।” ঘটি টিপাইয়ের উপর রেখে অন্য ফুলদানি থেকে ফুল নিয়ে সাজাতে লাগল। অবশেষে যাবার-মুখো হয়ে ফিরে দাড়িয়ে বললে, “তোমাকে জানিয়েছি আমার ভািগনীর বিয়ে। বাজুবন্ধর কথা ভুলো না বউদিদি । পিতলের গয়না। যদি দিই তোমারই নিন্দে হবে। এতবড়ো ঘরের মালী, তারই ঘরে বিয়ে, দেশসুদ্ধ লোক তাকিয়ে আছে।” নীরজা বললে, “আচ্ছা তোর ভয় নেই, তুই এখন যা ।” হল চলে গেল। নীরজা। হঠাৎ পাশ ফিরে বালিশে মাথা রেখে গুমরে উঠে বলে উঠল, “রোশনি, রোশনি, আমি ছোটাে হয়ে গেছি, ঐ হলা মালীর মতোই হয়েছে আমার মন ।” ,ቆ" আয় বললে, “ও কী বলছি খোখী, ছি ছি!” নীরজ আপনিই বলতে লাগল, “আমার পোড়া কপাল আমাকে বাইরে থেকে নামিয়ে দিয়েছে, আবার ভিতর থেকে নামিয়ে দিলে কেন । আমি কি জানি নে আমাকে হলা আজ কী চোখে দেখছে। আমার কাছে লাগালাগি করে হাসতে হাসতে বিকশিশ নিয়ে চলে গেল। ওকে ডেকে দে। খুব করে ওকে ধমকে দেব, ওর শয়তানি ঘোচাতে হবে ।” আয়া, যখন হলাকে ডাকবার জন্যে উঠল, নীরজা বললে, “থাক থাক, আজ থাক।” VO) কিছুক্ষণ পরে ওর খুড়তুতো দেওর রমেন এসে বললে, “বউদি, দাদা পাঠিয়ে দিলেন। আজ আপিসে কাজের ভিড়, হােটেলে খাবেন, দেরি হবে ফিরতে ।” নীরজা হেসে বললে, “খবর দেবার ছুতো করে একদীেড়ে ছুটে এসেছ ঠাকুরপো ! কেন, আপিসের বেহারটা মরেছে বুঝি ?” “তোমার কাছে আসতে তুমি ছাড়া অন্য ছুতোর দরকার কিসের বউদি। বেহারা বেটা কী বুঝবে 7रै मृङ-2ालद्म प्रद्धान्न ।” "ওগো মিষ্টি ছড়ােচ্ছ আস্থানে। এ ঘরে এসেছি কোন ভুলে। তোমার মালিনী আছেন আজ একাকিনী নেবুকুঞ্জবনে, দেখো গে যাও ।” . "কুঞ্জবনের বনলক্ষ্মীকে দর্শনী দিই। আগে, তার পরে যাব মালিনীর সন্ধানে।” এই বলে বুকের পকেট থেকে একখানা গল্পের বই বের করে নীরজার হাতে দিল। নীরজা খুশি হয়ে বললে, “অশ্রু-শিকল, এই বইটাই চাচ্ছিলুম। আশীৰ্বাদ করি, তোমার মালঞ্চের মালিনী চিরদিন বুকের কাছে বাধা থাক হাসির শিকলে। ঐ যাকে তুমি বল তোমার কল্পনার দোসর, তোমার স্বপ্নসঙ্গিনী ! কী সোহাগ গো ।”