পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8१० রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী রমেন হঠাৎ বললে, “আচ্ছা বউদি, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, ঠিক উত্তর দিয়ে ।” "ן וז8S <bo" “সরলার সঙ্গে আজ কি তোমার ঝগড়া হয়ে গেছে।” “কোন বলো তো ।” "ነ፡ “দেখলুম। ঝিলের ধারে ঘাটে চুপ করে সে বসে আছে। মেয়েদের তাে পুরুষদের মতো কাজ-পালানো উড়ো মন নয়। এমন বেকার দশা আমি সরলার কোনোদিন দেখি নি। জিজ্ঞাসা করলুম, “মন কোন দিকে ” ও বললে, “যে দিকে তপ্ত হাওয়া শুকনো পাতা ওড়ায় সেই দিকে । আমি বললুম, ‘ওটা হল হেঁয়ালি। স্পষ্ট ভাষায় কথা কও ” সে বললে, “সব কথারই ভাষা আছে ? আবার দেখি হেঁয়ালি । তখন গানের বুলিটা মনে পড়ল “কাহার বচন দিয়েছে বেদন ।” “হয়তো তোমার দাদার বচন ।” “হাতেই পারে না । দাদা যে পুরুষমানুষ । সে তোমার ঐ মালীগুলোকে হুংকার দিতে পারে। কিন্তু ‘পুষ্পরাশবিবাগ্নিঃ' এও কি সম্ভব হয় ।” - “আচ্ছা, বাজে কথা বকতে হবে না। একটা কাজের কথা বলি, আমার অনুরোধ রাখতেই হবে। দােহাই তােমার, সরলাকে তুমি বিয়ে করো। আইবড়ো মেয়েকে উদ্ধার করলে মহাপুণ্য ।” “পুণ্যের লোভ। রাখি নে, কিন্তু ঐ কন্যার লোভ রাখি, এ কথা বলছি তোমার কাছে হলফ করে।” “তা হলে বাধাটা কোথায় । ওর কি মন নেই।” “সে কথা জিজ্ঞাসাও করি নি । বলেইছি। তো ও আমার কল্পনার দোসরই থাকবে, সংসারের দোসর शूद का ।” হঠাৎ তীব্র আগ্রহের সঙ্গে নীরজা রমেনের হাত চেপে ধরে বললে, “কেন হবে না, হতেই হবে। মরবার আগে তোমাদের বিয়ে দেখবই, নইলে ভূত হয়ে তোমাদের জ্বালাতন করব বলে রাখছি।” নীরজার ব্যগ্রতা দেখে রমেন বিস্মিত হয়ে কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে রইল চেয়ে । শেষকালে মাথা নেড়ে বললে, “বউদি, আমি সম্পর্কে ছোটাে, কিন্তু বয়সে বড়ো । উড়ো বাতাসে আগাছার বীজ আসে ভেসে, প্রশ্রয় পেলে শিকড় ছড়ায়, তার পরে আর ওপড়ায় কার সাধ্যি ।” “আমাকে উপদেশ দিতে হবে না। আমি তোমার গুরুজন, তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, বিয়ে করো। দেরি কোরো না । এই ফাল্লুন মাসে ভালো দিন আছে।” “আমার পজিতে তিনশো পয়ষট্টি দিনই ভালো দিন । কিন্তু দিন যদি বা থাকে, রাস্তা নেই। আমি একবার গেছি জেলে, এখনো আছি। পিছল পথে জেলের কবলটার দিকে, । ও পথে প্রজাপতির পেয়াদার চল নেই।” “এখনকার মেয়েরাই বুঝি জেলখানাকে ভয় করে ?” “না করতে পারে। কিন্তু সপ্তপদী গমনের রাস্তা। ওটা নয়। ও রাস্তায় বধূকে পাশে না রেখে মনের মধ্যে রাখলে জোর পাওয়া যায় । রইল চিরদিন আমার মনে ৷” । । হরলিকস দুধের পাত্র টিপাইয়ের উপর রেখে সরলা চলে যাচ্ছিল। নীরজা বললে, “যেয়ে না, শোনো সরলা, এই ফোটোগ্রাফটা কার । চিনতে পার ?” সরলা বললে, “ও তো আমার ।” “তোমার সেই আগেকার দিনের ছবি । যখন তোমার জেঠামশায়ের ওখানে তোমরা দুজনে বাগানের কাজ করতে। দেখে মনে হচ্ছে, বয়সে পনেরো হবে। মরাঠি মেয়ের মতো মালকোচা দিয়ে শাড়ি পরেছ।” “এ তুমি কোথা থেকে পেলে ।” “দেখেছিলুম ওর একটা ডেস্কের মধ্যে, তখন ভালো করে লক্ষ্য করি নি। আজ সেখান থেকে আনিয়ে নিয়েছি। ঠাকুরপাে, তখনকার চেয়ে সরলাকে এখন আরো অনেক ভালাে দেখতে হয়েছে।