পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

༦ Sང་ রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বিশেষ্য শব্দ চন্দ্ৰ হইতে চাদ, বন্ধ হইতে বাধ, কিন্তু বিশেষণ শব্দ মন্দ হইতে হইল- মাদা। এক শব্দকে বিশেষরূপে বিশেষণে পরিণত করিলে ‘একা হয় । ー・ এইরূপ বাংলা দুই-অক্ষরের বিশেষণ অধিকাংশই আকারান্ত । যেগুলি অকারান্ত হিন্দিতে সেগুলিও আকারান্ত ; যথা, ছোেটা বড় ভােলা । ইহার একটা কারণ আমরা এখানে আলোচনা করিতেছি। স্বৰ্গগত উমেশচন্দ্ৰ বটব্যালের রচনা হইতে দীনেশবাবু তাহার “বঙ্গভাষা ও সাহিত্য গ্রন্থে নিম্নলিখিত ছত্ৰকয়টি উদ্ধৃত করিয়াছেন : তাম্রশাসনের ভাষার প্রতি লক্ষ করিলে দেখা যাইবে যে, ইহাতে স্বার্থেক-এর ব্যবহার কিছু বেশি। দৃত স্থানে দূতক, হট্ট স্থানে হটকা, বাট স্থানে বাটক, লিখিত স্থানে লিখিতক, এরাপ শব্দপ্রয়োগ কেবল উদ্ধৃত অংশমধ্যেই দেখা যায় - সমুদায় শাসনে আরো অনেক দেখা যাইবে । দীনেশবাবু লিখিয়াছেন : এই ক (যথা, বৃক্ষক চারুদত্তক পুত্ৰক) প্রাকৃতে অনেক স্থলে ব্যবহৃত হইতে দেখা যায়। গাথা ভাষায় এই ক-এর প্রয়োগ সর্বাপেক্ষা অধিক ; যথা ললিত বিস্তর, একবিংশধ্যায়ে ; সুবাসন্তকে ঋতুবরে আগতকে রতিমো প্ৰিয়া ফুল্লিতপাদপকে । তবরূপ সুরূপ সুশোভনকো বসবৰ্ত্তী সুলক্ষণবিচিত্রিতকো ৷৷ ১ ৷৷ বয়ং জাত সুজাত সুসংস্থতিকাঃ সুখকারণ দেব নরাণবসন্তুতিকাঃ । উখি লঘুপরিভুঞ্জ সুযৌবনকং দুর্লভ বোধি নিবৰ্ত্তয় মানসকম ৷ ২ ৷৷ দীনেশবাবু প্রাচীন বাংলায় এই ক প্রত্যয়ের বাহুল্য প্রমাণ করিয়াছেন । এই ক-এর অপভ্রংশে আকার হয় ; যেমন ঘোটক হইতে ঘোড়া, ক্ষুদ্রক হইতে ছোড়া, তিলক হইতে টিকা, মধুক হইতে মহুয়া, নাবিক হইতে নাইয়া, মস্তক হইতে মাথা, পিষ্টক হইতে পিঠা, শীৰ্ষক হইতে শীষা, একক হইতে একা, চতুষ্ক হইতে চৌকা, ফলক হইতে ফলা, হীরক হইতে হীরা। ভাষাতত্ত্ববিদগণ বলেন, লোহক হইতে লোহা, স্বৰ্ণক হইতে সোনা, কাংস্যক হইতে কঁাসা, তাম্রক হইতে তামা হইয়াছে । , আমরা কিঞ্চিৎ অবজ্ঞাসূচকভাবে রাম-কে রামা, শ্যাম-কে শ্যামা, মধু-কে মোধো (অর্থাৎ মধুয়া), হরি-কে হরে (অর্থাৎ হরিয়া) বলিয়া থাকি ; তাহারও উৎপত্তি এইরূপে। অর্থাৎ, রামক শ্যামক মধুক হরিক শব্দ ইহার মূল। সংস্কৃতে যে হ্রস্ব-অর্থেক প্রত্যয় হয়, বাংলায় উক্ত দৃষ্টান্তগুলি তাহার নিদর্শন। দুই-এক স্থলে মূল শব্দের কি প্রায় অবিকৃত আছে ; যথা, হালকা, ইহা লঘুক শব্দজ ।। লহুক হইতে হলুক ও হলুক হইতে হালকা । এইক প্রত্যয় বিশেষণেই অধিক, এবং দুই-অক্ষরের ছোটাে ছোটাে কথাতেই ইহার প্রয়োগসম্ভাবনা বেশি। কারণ, বড়ো কথাকে ক সংযোগে বৃহত্তর করিলে তাহা ব্যবহারের পক্ষে কঠিন হয়। এইজন্যই বাংলা দুই-অক্ষরের বিশেষণ যাহা অকারান্ত হওয়া উচিত ছিল তাহা অধিকাংশই আকারান্ত । যে-সকল বিশেষণ শব্দ দুই-অক্ষরকে অতিক্রম করিয়াছে তাহদের ঈষৎ ভিন্নরূপ বিকৃতি হইয়াছে ; যথা, পাঠকক হইতে পড়ুয়া ও তাহা হইতে পোড়ো, পতিতক হইতে পড়ুয়া ও পােড়ো, মধ্যমক— মেকুয়া মেঝো, উচ্ছিষ্টক- ঐঠুয়া ঐঠো, জলীয়ক- জালুয়া জোলো, কাষ্ঠিয়ক- কাঠুয়া কেঠো ইত্যাদি। অনুরূপ দুই-একটি বিশেষ্য পদ যাহা মনে পড়িল তাহা লিখি। কিঞ্চিলিক শব্দ হইতে কেঁচুয়া ও কেঁচো হইয়াছে। স্বল্পাক্ষরক পেচক শব্দ হইতে পেঁচা ও বহব্ৰক্ষারক কিঞ্চিলিক হইতে কেঁচো শব্দের উৎপত্তি তুলনা করা যাইতে পারে। দীপরীক্ষক শব্দ হইতে দেরাখুয়া ও দেরখো আর-একটি দৃষ্টান্ত ।