পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\2RN2 রবীন্দ্র-রচনাবলী বিশেষার্থবোধক সর্বনাম-বিশেষণ যুক্ত না হইলে ইহাদের উত্তরে কার প্রত্যয় হয় না ; যথা সেখানকার এপারকার ওধারকার । কিন্তু, ভিতরকার বাহিরকার প্রভৃতি শব্দে সে কথা খাটে না । সময়বাচক যে-সকল শব্দের উত্তর কার প্রত্যয় হয়, তাহার অধিকাংশই বিশেষ্য ; যথা, দিন রাত্রি ক্ষণ বেলা বার বছর হগু ইত্যাদি। এইরূপ সময়বাচক বিশেষ্য শব্দের পূর্বে এ সে প্রভৃতি সর্বনাম-বিশেষণ না থাকিলে তদুত্তরে কার প্রয়োগ হয় না। শুদ্ধমাত্ৰ— বারকার বেলাকার ক্ষণকার হয় না, এবেলাকার এখানকার এক্ষণকার এবারকার হয়। বিশেষণ শব্দে অন্যরূপ । সময়বাচক বিশেষ্য শব্দ সম্বন্ধে অনেকগুলি ব্যতিক্রম দেখা যায়। মাস মুহুর্ত দণ্ড ঘণ্টা প্রভৃতি শব্দের সহিত কার শব্দের যোগ হয় না। ইহার কারণ নির্ধারণ সুকঠিন । যাহা হউক দেশ সম্বন্ধে একটা মোটা নিয়ম পাওয়া যায় । দেশবাচক যে-সকল শব্দে সংস্কৃতে বর্তী শব্দ হইতে পারে, বাংলায় তাহার স্থানে কার ব্যবহার হয়। উর্ধর্ববর্তী নিম্নবর্তী সম্মুখবর্তী পশ্চাদ্বতী অগ্রবর্তী প্রভৃতি শব্দের স্থলে বাংলায় উপরকার নীচেকার সামনেকার পিছনকার আগাকার ইত্যাদি প্রচলিত। ঋজুবতী বক্রবর্তী লম্ববতী ইত্যাদি কথা সংস্কৃতে নাই, ৰূংলাতেও সোজাকার বঁাকাকার লম্বাকার হইতে পারে না । শ্রাবণ ১৩০৫ বাংলা শবদ দ্বৈত বুগমান তাহার ইন্ডোেজর্মনীয় ভাষার তুলনামূলক ব্যাকরণে লিখিতেছেন, একই শব্দকে দুই বা ততােধিকবার বহুলীকরণ দ্বারা, পুনৰ্বত্তি(repetition), দীর্ঘকালবর্তিতা, ব্যাপকতা অথবা প্রগাঢ়তা ব্যক্ত করা হইয়া থাকে। ইন্ডোেজর্মনীয় ভাষার অভিব্যক্তিদশায় পদে পদে এইরূপ শব্দদ্বৈতের প্রমাণ *N32ों याय । ইন্ডোজমান ভাষায় অনেক দ্বিগুণিত শব্দ কালক্রমে সংযুক্ত হইয়া এক হইয়া গেছে ; সংস্কৃত ভাষায় তাহার দৃষ্টান্ত, মর্মর গর্গর, (ঘড়া, জলশব্দের অনুকরণে), গদগদ বর্বর (অস্পষ্টভাষী) কঙ্কণ । দ্বিগুণিত শব্দের এক অংশ ক্রমে বিকৃত হইয়াছে এমন দৃষ্টান্তও অনেক আছে ; যথা কৰ্কশ কঙ্কর ঝঞ্জা বস্তুর (ভ্ৰমর) চঞ্চল । অসংযুক্ত ভাবে দ্বিগুণীকরণের দৃষ্টান্ত সংস্কৃতে যথেষ্ট আছে, যথা, কালে কালে, জন্মজন্মনি, নব নব, উত্তরোত্তর, পুনঃ পুনঃ, পীত্বা পীত্ব, যথা যথা, যদ্যৎ, অহরহঃ, প্ৰিয়ঃ প্ৰিয়ঃ, সুখসুখেন, পুঞ্জপুঞ্জেন । এই দৃষ্টান্তগুলিতে হয় পুনরাবৃত্তি, নয় - প্ৰগাঢ়তার ভাব ব্যক্ত হইতেছে। যতদূর দেখিয়াছি তাহাতে বাংলায় শব্দদ্বৈতের প্রাদুর্ভাব যত বেশি, অন্য আর্যভাষায় তত নহে । বাংলা শব্দদ্বৈতের বিধিও বিচিত্র ; অধিকাংশ স্থলেই সংস্কৃত ভাষায় তাহার তুলনা পাওয়া যায় না । দৃষ্টান্তগুলি একত্র করা যাক | মধ্যে মধ্যে, বারে বারে, পরে পরে, পায় পায়, পথে পথে, ঘরে ঘরে, হাড়ে হাড়ে, কথায় কথায়, ঘণ্টায় ঘণ্টায়- এগুলি পুনরাবৃত্তিবাচক । বুকে বুকে, মুখে মুখে, চোখে চোখে, কাঠে কাঠে, পাথরে পাথরে, মানুষে মানুষে- এগুলি পরস্পর-সংযোগবাচক । 端 সঙ্গে সঙ্গে, আগে আগে, পাশে পাশে, পিছনে পিছনে, মনে মনে, তলে তলে, পেটে পেটে, ভিতরে ভিতরে, বাইরে বাইরে, উপরে উপরে- এগুলি নিয়তবর্তিতাবাচক, অর্থাৎ এগুলিতে সর্বদা লাগিয়া চলিতে চলিতে, হাসিতে হাসিতে, চলিয়া চলিয়া, হাসিয়া হাসিয়া- এগুলি দীর্ঘকালীনতাবাচক | অন্য অন্য, অনেক অনেক, নূতন নূতন, ঘন ঘন, টুকরা টুকরা- এগুলি বিভক্ত বহুলতাবাচক |