পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ԳՀԵ রবীন্দ্র-রচনাবলী । আমাদের অ । কিন্তু এ সম্বন্ধে আমার কিঞ্চিৎ বক্তব্য আছে। শুনিবামাত্র অনুভব করা যায় যে,stir ; শব্দেরুi এবং star শব্দের a একই স্বর ; কেবল উহাদের মধ্যে হ্রস্ব দীর্ঘ প্ৰভেদ মাত্র। সংস্কৃতবর্ণমালায় অ এবং আ-এ হ্রস্বদীৰ্ঘের প্রভেদ, কিন্তু বাংলাবর্ণমালায় তাহা নহে। বাংলা অ আকারের হ্রস্ব নহে, তাহা একটি স্বতন্ত্র স্বর, অতএব সংস্কৃত আ যেখানে খাটে বাংলা অ, সেখানে খাটে না । হিন্দুস্থানিরা কলম শব্দ কিরূপে উচ্চারণ করে এবং আমরা কিরাপ করি তাহা মনোযোগ দিয়া শুনিলেই উভয় অকারের প্রভেদ বুঝা যায়। হিন্দুস্থানিরা যাহা বলে তাহা বাংলা অক্ষরে “কালাম বলিলেই ঠিক হয়। কারণ, আ স্বর আমরা প্ৰায় হ্রস্বই ব্যবহার করিয়া থাকি । বাংলায় কল লিখিলে ইংরেজি call কথাই মনে আসে, কখনো cull মনে হয় না ; শেষোক্ত কথা বাংলায় কাল লিখিলেই প্রকৃত উচ্চারণের কাছাকাছি যায় । এইরূপ noun শব্দবন্তী ইংরেজি ou আমাদের ঔ নহে, তাহা আউ ; অথবা time শব্দদ্বতী ৷ আমাদের ঐ নহে তাহা আই । v শব্দের উচ্চারণ অনেকে বলিয়া থাকেন অস্ত্যস্থ ব । আমার তাহা ঠিক মনে হয় না। ইংরেজি w প্রকৃত অন্ত্যস্থ ব, ইংরেজি fঅস্ত্যস্থ ফ, ইংরেজি v অন্ত্যস্থ ভ। কিন্তু অন্ত্যস্থ ফ অথবা অন্ত্যস্থ ভ। আমাদের নাই ! এইজন্য বাধ্য হইয়া f ও v-র জায়গায় আমাদিগকে ফী ও ভ ব্যবহার করিতে হয় ; wise এবং voice শব্দ উচ্চারণ করিলে w এবং v-এর প্ৰভেদ বুঝা যায়। w-এর স্থানে ব দিলে বরঞ্চ সংস্কৃত বর্ণমালার হিসাবে ঠিক হয়, কিন্তু v-র স্থানে বা দিলে কোন হিসাবে ঠিক হয় বুঝিতে পারি না। আমার মতে আমাদের বর্ণমালার ভ-ই v-এর সর্বাপেক্ষা কাছাকাছি আসে । যাহা হউক এই প্রশ্নের মীমাংসা প্রার্থনা করি । S ૨છે ૨ সংজ্ঞাবিচার পৌষ মাসের বালকে উৎকৃষ্ট সংজ্ঞা বাহির করিবার জন্য। “হুজুগ”, “ন্যাকামি, এবং “আহিলাদে এই তিনটি শব্দ নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছিলাম, পাঠকদের নিকট হইতে অনেকগুলি সংজ্ঞা আমাদের হাতে আসিয়াছে s Y কথাগুলি সম্পূর্ণ প্রচলিত। আমরা পরস্পর কথোপকথনে ঐ কথাগুলি যখন ব্যবহার করি তখন কাহারও বুঝিবার ভুল হয় না, অথচ স্পষ্ট করিয়া অর্থ জিজ্ঞাসা করিলে ভিন্ন লোকে ভিন্ন অর্থ বলিয়া থাকেন। ইহা হইতে এমন বুঝাইতেছে না যে, বাস্তবিকই ঐ কথাগুলি ভিন্ন লোকে ভিন্ন অর্থ বুঝিয়া থাকেন- কারণ, তাহা হইলে তো ও কথা লইয়া কোনো কাজই চলিত না । প্রকৃত কথা এই, আমরা করে । যেমন আমরা অনেকে সহজেই সীতার দিতে পারি, কিন্তু কী উপায়ে সাতার দিতেছি। তাহা বুঝাইয়া বলিতে পারি না। অথবা, একজন মানুষ রাগিলে তাহার মুখভঙ্গি দেখিলে আমরা সহজেই বলিতে পারি মানুষটা রাগিয়াছে ; কিন্তু আমি যদি পাচজনকে ডাকিয়া জিজ্ঞাসা করি, আচ্ছা বলে । দেখি রাগিলে মানুষের মুখের কিরূপ পরিবর্তন হয়, মুখের কোন কোন মাংসপেশীর কিরূপ বিকার হয়, মুখের কোন অংশের কিরূপ অবস্থান্তর হয়, তাহা হইলে পাঁচজনের বর্ণনায় প্রভেদ লক্ষিত হইবে । অথচ ক্রুদ্ধ মনুষ্যকে দেখিলেই পাঁচজনে বিনা মতভেদে সমস্বরে বলিয়া উঠিবে লোকটা ভারি চটিয়া উঠিয়াছে। পাঠকদের নিকট হইতে যে-সকল সংজ্ঞা পাইয়াছি তাহার কতকগুলি এই স্থানে পরে পরে আলোচনা করিয়া দেখিলেই পরস্পরের মধ্যে অনেক প্ৰভেদ দেখা যাইবে । একজন বলিতেছেন, “হুজুক- জনসাধারণের হৃদয়োম্মাদক আন্দোলন।” তা যদি হয় তো, বুদ্ধ চৈতন্য যিশু ক্ৰমোয়েল ওয়াশিংটন প্রভৃতি সকলেই হুজুক করিয়াছিলেন । কিন্তু লেখক কখনোই ১ পাঠকদের প্রতি : বালকের যে-কোনো গ্রাহক ‘হুজুগ, ন্যাকমি’ ও ‘আহলাদে’ শব্দের সর্বোৎকৃষ্ট সংক্ষেপ সংজ্ঞা (Definition) লিখিয়া পৌষ মাসের ২০শে তারিখের মধ্যে আমাদিগের নিকট পঠাইবেন তাহাকে একটি ভালো গ্ৰন্থ পুরস্কার দেওয়া হইবে । একেকটি সংজ্ঞা পাঁচটি পদের অধিক না হয় । বালক, পৌষ ১২৯২