পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্ৰন্থপরিচয় ԳՏԳ জীবনকে যৌবনকে বারে বারে হারাতে হবে, নইলে ফিরে পাবার উৎসব হতে পারবে না। শীত না থাকলে ফাল্লুনের মহােৎসবের মহাসমারোহ তো মারা যেত । “আমার ধর্ম প্ৰবন্ধে প্ৰসঙ্গত রবীন্দ্ৰনাথ লিখিয়াছেন : জীবনকে সত্য বলে জানতে গেলে মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে তার পরিচয় চাই। যে মানুষ ভয় পেয়ে মৃত্যুকে এড়িয়ে জীবনকে আঁকড়ে রয়েছে, জীবনের পরে তার যথার্থ শ্ৰদ্ধা নেই বলে জীবনকে সে পায় নি। তাই সে জীবনের মধ্যে বাস করেও মৃত্যুর বিভীষিকায় প্রতিদিন মরে । যে লোক নিজে এগিয়ে গিয়ে মৃত্যুকে বন্দী করতে ছুটেছে, সে দেখতে পায়, যাকে সে ধরেছে সে মৃত্যুই নয়- সে জীবন । যখন সাহস করে তার সামনে দাড়াতে পারি নে, তখন পিছন দিকে তার ছায়াটা দেখি । সেইটে দেখে ডরিয়ে ডরিয়ে মারি । নিৰ্ভয়ে যখন তার সামনে গিয়ে দাড়াই, তখন দেখি যে সর্দার জীবনের পথে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যায়, সেই সর্দারই মৃত্যুর তোরণদ্বারের মধ্যে আমাদের বহন করে নিয়ে যাচ্ছে। ফাঙ্গুনীর গোড়াকার কথাটা হচ্ছে এই যে, যুবকেরা বসন্ত-উৎসব করতে বেরিয়েছে। কিন্তু এই উৎসব তো শুধু আমোদ করা নয়, এ তো অনায়াসে হবার জো নেই। জরার অবসাদ, মৃত্যুর ভয় লঙঘন করে তবে সেই নবজীবনের আনন্দে পৌছনো যায় । তাই যুবকেরা বললে- আনিব সেই জরাবুড়োকে বেঁধে, সেই মৃত্যুকে বন্দী করে । মানুষের ইতিহাসে তো এই লীলা, এই বসন্ত-উৎসব বারে বারে দেখতে পাই । জরা সমাজকে ঘনিয়ে ধরে, প্রথা অচল হয়ে বসে, পুরাতনের অত্যাচার নূতন প্রাণকে দালন করে নিজীবি করতে চায়- তখন মানুষ মৃত্যুর মধ্যে বঁপ দিয়ে পড়ে, বিপ্লবের ভিতর দিয়ে নববসন্তের উৎসবের আয়োজন করে । সেই আয়োজনই তো যুরোপে চলছে। সেখানে নূতন যুগের বসন্তের হােলি খেলা আরম্ভ হয়েছে। মানুষের ইতিহাস আপন চিরনবীন অমর মূর্তি প্রকাশ করবে বলে মৃত্যুকে তলব করেছে। মৃত্যুই তার প্রসাধনে নিযুক্ত হয়েছে। তাই ফাল্গুনীতে বাউল বলছে- “যুগে যুগে মানুষ লড়াই করেছে, আজ বসন্তের হাওয়ায় অরই ঢেউ । যারা ম'রে অমর, বসম্ভের কচি পাতায় তারা পত্র পাঠিয়েছে। দিগদিগন্তে তারা রটাচ্ছে- আমরা পথের বিচার করি নি, আমরা পথেয়ের হিসাব রাখি নি, আমরা ছুটে এসেছি, আমরা ফুটে বেরিয়েছি। আমরা যদি ভাবতে বসতুম তা হলে বসন্তের দশা কী হত ।”- বসন্তের কচি পাতায় এই যে পত্র, এ কাদের পত্র । যে-সব পাতা ঝরে গিয়েছে- তারাই মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে আপনি বাণী পাঠিয়েছে। তারা যদি শাখা আঁকড়ে থাকতে পারত, তা হলে জরাই অমর হততা হলে পুরাতন পুঁথির তুলট কাগজে সমস্ত অরণ্য হলদে হয়ে যেত, সেই শুকনো পাতার সর সর শব্দে আকাশ শিউরে উঠত। কিন্তু পুরাতনই মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে আপন চিরনবীনতা প্ৰকাশ করে- এ-ই তো বসন্তের উৎসব । তাই বসন্ত বলে- যারা মৃত্যুকে ভয় করে, তারা জীবনকে চেনে না ; তারা জরাকে বরণ করে জীবস্মৃত হয়ে থাকে- প্ৰাণবান বিশ্বের সঙ্গে তাদের বিচ্ছেদ घ} |- চন্দ্ৰহাস । এ কী । এ যে তুমি ! সেই আমাদের সর্দার ? বুড়ো কোথায় । সর্দার । কোথাও তো নেই । চন্দ্ৰহাস । কোথাও না ? তবে সে কী । সর্দার । সে স্বপ্ন । চন্দ্ৰহাস । তবে তুমিই চিরকালের ? সর্দার । ইহা । চন্দ্ৰহাস । আর আমরাই চিরকালের ? সর্দার । ইহা । চন্দ্ৰহাস । পিছন থেকে যারা তোমাকে দেখলে, তারা যে তোমাকে কতরকম মনে করলে