পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৮৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

brS S রবীন্দ্র রচনাবলী “শিক্ষা” নামে একটি পুস্তিকা ভাণ্ডার পত্রের বিশেষ সংখ্যায় প্রকাশিত হয়, বর্তমান প্ৰবন্ধটি তাহারই ভূমিকা । “শিক্ষার আন্দোলন হইতে বিদ্যালয় বর্জন ও জাতীয়বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থািকল্পে আহুত । বিভিন্ন সভায় রবীন্দ্রনাথের কয়েকটি বক্তৃতাও নিম্নে সংকলিত হইল- “বক্তা যে-ভাষায় বক্তৃতা করিয়াছিলেন সে-ভাষায় বক্তৃতা প্রকাশ করা সম্ভব নহে। বক্তৃতার মর্মমাত্র সংকলিত হইয়াছে।” ১০ই কর্তিক [:১৩১২৷] শুক্রবার অপরাহুে, পটলডাঙা মল্লিকবাড়িতে ছাত্ৰগণের এক বিরাট । সভা হয় । শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সভাপতির আসন গ্ৰহণ করেন - সভাপতির বক্তৃতা এখন বোধ হয় উত্তেজনা দ্বারা আপনাদের উত্তপ্ত রক্তকে আর উত্তপ্ততর করিবার কোনো প্ৰয়োজন নাই। আজ। আপনারা যে-মন্তব্য** গ্ৰহণ করিলেন, কর্তৃপক্ষ তাহা হয়তো অসংগত মনে করিবেন । তাহারা চোখে খোচাও মারেন, আবার জল বাহির হইলে দোষও ধরেন । শুধু কর্তৃপক্ষ নয়, আমাদের দেশেও অনেক বিবেচক লোক আছেন, তাহারা মনে করেন যে, । বিদ্যাভ্যাস ব্যতীত ছাত্ৰগণের অন্য কোনো কার্যে নিযুক্ত হওয়া অন্যায় । অধ্যয়নই যে ছাত্রজীবনের প্রধান কর্তব্য এবং অধ্যয়নে যতই অবহিত হইতে পারা যায়, ততই যে সফলতা লাভের বেশি সম্ভাবনা, এ কথা অস্বীকার করিবার উপায় নাই । কিন্তু এ কথাও ঠিক যে, সকল দেশেই বিশেষ বিশেষ সংকটের সময় এ নিয়মের ব্যতিক্রম হইয়া থাকে । তখন বয়স্কেরা ব্যাবসা ছাড়িয়া, যুবকেরা আমোদপ্রমোদ ছাড়িয়া, ছাত্রেরা অধ্যয়ন ছাড়িয়া আন্দোলনে যোগদান করিয়া থাকেন। সর্বত্রই এইরূপ ঘটে এবং এরূপ ঘটাই স্বাভাবিক। বর্তমান সময়ে আমরা আমাদের মধ্যে নবজীবনের একটা উত্তেজনা অনুভব করিতেছি। বৃদ্ধেরাও বিষয়কর্ম পরিত্যাগ করিয়া এমন উৎসাহের সহিত বর্তমান আন্দোলনে মাতিয়া গিয়াছেন যে, তাহাদের আবার যদি কোনো বৃদ্ধতর অভিভাবক থাকিতেন, তবে তাহারা নিঃসন্দেহই বলিতেন যে, ইহাদের এই কাজ । বৃদ্ধোচিত হইতেছে না । *- ছাত্ৰগণ যে এ আন্দোলনে যোগ দিয়াছেন, তাহা নিতান্ত স্বাভাবিক, বিশেষত আমাদের দেশে । যে-সমাজের সমস্ত শক্তি সম্মিলিত হইয়া আপনার অভাব মোচনে নিযুক্ত থাকে, সে-সমাজে বরং ছাত্রেরা স্বতন্ত্র থাকিতে পারেন । আমাদের সমাজের তো সেরাপ স্বাস্থ্যের অবস্থা নহে । আমাদের রাজা বিদেশী, প্রজার বেদনা বোঝেন না, বুঝিলেও অনেক সময়ে উভয়ের স্বার্থের সংঘর্ষ উপস্থিত হয় । আবার ইহারাই আমাদের শিক্ষক । ইংরেজের সমাজ স্বাধীন, সেখানে রাজা ও প্ৰজার মধ্যে জেতা-বিজিতের সম্পর্ক নাই। কাজেই এমন বিরোধও উপস্থিত হয় না । সেখানকার ছাত্রেরা এই বলিয়া নিশ্চিন্ত থাকিতে পারে যে, স্টেট সর্বপ্রযত্নে তাহদের মঙ্গল চিন্তাই করিতেছে । কিন্তু বিশেষ কোনো সংকট উপস্থিত হইলে তাহারাও যে বিচলিত হইয়া থাকে, তাহার প্রমাণের অভাব নাই । ১৩ “গবর্মেন্ট সম্প্রতি স্কুল ও কলেজের ছাত্ৰগণের বিরুদ্ধে যে-সার্কুলার জারি করিয়াছেন তাহাতে আমাদিগকে স্পষ্টভাবে স্বদেশের সেবা হইতে বিরত থাকিতে বলা হইয়াছে। ইহাতে আমরা কখনো সম্মত হইতে পারি না বা ভবিষ্যতে পারিব না । অতএব আমরা কলিকাতার ছাত্রবৃন্দ সম্মিলিত হইয়া প্রকাশ্যভাবে ঘোষণা করিতেছি যে, যদি গবর্মেন্টের বিশ্ববিদ্যালয় আমাদিগকে পরিত্যাগ করিতে হয় তাহাও স্বীকার, তথাপি স্বদেশসেবারাপ যে মহাব্ৰত আমরা গ্ৰহণ করিয়াছি তাহা কখনো পরিত্যাগ করিব না ।”- প্রস্তােবক শচীন্দ্ৰপ্ৰসাদ বসু, অনুমোদক ফণিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সমর্থক চুনীলাল বন্দ্যোপাধ্যায়, সতীশচন্দ্ৰ সিংহ ও মহম্মদ সিদিক ।