পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চিরকুমার-সভা २२S শ্ৰীশ । আমি এসেছিলুম আমার সেই সন্ন্যাসীসম্প্রদায়ের কথাটা অবলাকাস্তবাবুর সঙ্গে আলোচনা করতে। ওঁর যেরকম চেহারা, কণ্ঠস্বর, মুখের ভাব, উনি ঠিক আমার সন্ন্যাসীর আদর্শ হতে পারেন। উনি যদি ওঁর ওই চন্দ্রকলার মতে কপালটিতে চন্দন দিয়ে, গলায় মাল| প’রে, হাতে একটি বীণা নিয়ে, সকালবেলায় একটি পল্লীর মধ্যে প্রবেশ করেন তা হলে কোন গৃহস্থের হৃদয় না গলাতে পারেন। রসিক। বুঝতে পারছি নে মশায়, হৃদয় গলাবার কি খুব জরুরি দরকার হয়েছে। শ্ৰীশ । চিরকুমার-সভা হৃদয় গলাবার সভা। রসিক । বলেন কী। তবে আমার দ্বারা কী কাজ পাবেন । শ্ৰীশ । আপনার মধ্যে যেরূপ উত্তাপ আছে আপনি উত্তরমেরুতে গেলে সেখানকার বরফ গলিয়ে বন্যা করে দিয়ে আসতে পারেন।— বিপিন, উঠছ নাকি । বিপিন। যাই, আমাকে রাত্রে একটু পড়তে হবে। রসিক । ( জনাস্তিকে ) অবলাকান্ত জিজ্ঞাসা করছেন, পড়া হয়ে গেলে বইখানা কি ফেরত পাওয়া যাবে । বিপিন। ( জনাস্তিকে ) পড়া হয়ে গেলে সে আলোচনা পরে হবে, আজ থাক । শৈলবালা । ( মৃদুস্বরে ) শ্ৰীশবাবু ইতস্তত করছেন কেন, আপনার কিছু হারিয়েছে নাকি । শ্ৰীশ । ( মৃদুস্বরে ) আজ থাক, আর একদিন খুজে দেখব । [ ঐশ ও বিপিনের প্রস্থান নীরবালা । ( দ্রুত প্রবেশ করিয়া ) এ কী রকমের ডাকাতি দিদি । আমার গানের খাতাখানা নিয়ে গেল ! আমার ভয়ানক রাগ হচ্ছে । রসিক । রাগ শব্দে নানা অর্থ অভিধানে কয় । নীরবালা । আচ্ছা পণ্ডিতমশায়, তোমার অভিধান জাহির করতে হবে না— আমার খাতা ফিরিয়ে আনে । রসিক । পুলিসে খবর দে ভাই, চোর ধরা আমার ব্যাবসা নয়। নীরবালা। কেন দিদি, তুমি আমার খাতা নিয়ে যেতে দিলে। শৈলবালা। এমন অমূল্য ধন তুই ফেলে রেখে যাস কেন। নীরবালা । আমি বুঝি ইচ্ছে করে ফেলে রেখে গেছি। রসিক । লোকে সেইরকম সন্দেহ করছে। নীরবালা । না রসিকদাদা, তোমার ও ঠাট্টা আমার ভালো লাগে না । রসিক । তা হলে ভয়ানক খারাপ অবস্থা । [ নীরবালার সক্রোধে প্রস্থান