পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শাস্তিনিকেতন 8SS তখন স্থরকে আর সে বাধা দেয় না । সেইরকম আমরা প্রতিদিন তাকে সুতই ডাকতে থাকি ততই আমাদের শরীর মনের সমস্ত অণু,পরমাণু তার সত্য নামে এমন সত্য হয়ে উঠতে থাকে যে বাজতে আর দেরি হয় না, কোথাও কিছুমাত্র আর বাধা দেয় न । এই সত্যনাম মানুষের সমস্ত শরীরে মনে, মাচুষের সমস্ত সংসারে, সমস্ত কর্মে, একতান আশ্চর্য স্বরসন্মিলনে বিচিত্র হয়ে বেজে উঠবে বলে বিশ্বমহাসভার সমস্ত শ্ৰোতৃমণ্ডলী একাগ্রভাবে অপেক্ষা করে রয়েছে। সমস্ত গ্রহনক্ষত্র, সমস্ত উদ্ভিদ পশু পক্ষী মানুষের লোকালয়ের দিকে কান পেতে রয়েছে । আমরা মানুষ হয়ে জন্মে মানুষের চিত্ত দিয়ে তার অমৃতরস আস্বাদন করে মানুষের কণ্ঠে তাকে সমস্ত আকাশে ঘোষণা করে দেব এরই জন্যে বিশ্বপ্রকৃতি যুগ যুগান্তর ধরে তার সভা রচনা করছে। বিশ্বের সমস্ত অণু পরমাণু এই স্বরের স্পন্দনে পুলকিত হবার জন্যে অপেক্ষা করছে। এখনই তোমরা জেগে ওঠে, এখনই তোমরা তাকে ডাকো— এই বনের গাছপালার মধ্যে তার মাধুর্য শিউরে উঠতে থাকবে, এই তোমাদের সামনেকার পৃথিবীর মাটির মধ্যে আনন্দ সঞ্চারিত হতে থাকবে । মানুষের আত্মা মুক্তিলোকে আনন্দলোকে জন্মগ্রহণ করবে বলে বিশ্বের স্মৃতিকগৃহে অনেক দিন ধরে চন্দ্র স্বর্য তারার মঙ্গলপ্রদীপ জালানো রয়েছে। যেমনি নবজাত মুক্ত আত্মার প্রাণচেষ্টার ক্ৰন্দনধ্বনি সমস্ত ক্ৰন্দসীকে পরিপূর্ণ করে উচ্ছসিত হবে অমনি লোকে লোকাস্তরে আনন্দশস্থ বেজে উঠবে। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সেই প্রত্যাশাকে পূরণ করবার জন্যই মানুষ। নিজের উদরপূরণ এবং স্বার্থসাধনের জন্য নয়। এই কথা প্রত্যহ মনে রেখে নিখিল জগতের সাধনাকে আমরা আপনার সাধনা করে নেব । আমরা সত্যকে প্রত্যক্ষ দেখব, জানব, সত্যে সঞ্চরণ করব এবং অসংকোচে ঘোষণা করব? তুমিই সত্য । ১৩১৯ \ পৌষ ১৩১৯ সত্যকে দেখা এই জগতে কেবল আমরা যা চোখে দেখছি কানে শুনছি তাতেই আমাদের চরম তৃপ্তি হচ্ছে না। আমরা কাকে দেখতে চাচ্ছি একেবারে সমস্ত মন সমস্ত হৃদয় মেলে দিয়ে ? আমাদের মনে হচ্ছে যেন আমাদের সমগ্র প্রকৃতি দিয়ে, আমাদের যা-কিছু আছে তার সমস্তকে দিয়ে, যেন আমরা কাকে দেখতে পাব। আমাদের সেই সমস্তটিকে এখনও