পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NG? O রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী আদিত্য। না, জানি নে। ] নীরজা। আমি জানি। বলব, পেটুনিয়া। তুমি মনে করো আমি কিছু জানি নে, মুখু আমি। আদিত্য। (হেসে) সহধর্মিণী তুমি, যদি মুর্থ হও অন্তত আমার সমান মুর্থ। আমাদের জীবনে মুখতার কারবার আধাআধি ভাগে চলছে। নীরজা। সে কারবার আমার ভাগ্যে এইবারে শেষ হয়ে এল। ঐ যে দারোয়ানটা ঐখানে বসে তামাক কুটছে ও থাকবে দেউড়িতে, কিছুদিন পরে আমি থাকব না। ঐ যে গোরুর গাড়িটা পাথুরে কয়লা আজাড় করে দিয়ে খালি ফিরে যাচ্ছে ওর যাতায়াত চলবে রোজ, কিন্তু চলবে না। আমার এই হৃদযন্ত্রটা। ዖም~ আদিতোর হােত হঠাৎ জোর করে চপে ধরে একেবারেই থাকিব না, কিছুই থাকব না? বলে আমাকে, তুমি তো অনেক বই পড়েছি, বলো-না। আমাকে সত্যি করে। আদিত্য। যাদের বই পড়েছি তাদের বিদ্যে যতদূর আমারও ততদূর। যমের দরজার কাছটাতে এসে থেমেছি। আর এগোয় নি। নীরজা। বলো-না তুমি কী মনে করো। একটুও থাকব না? এতটুকুও না ? আদিত্য। এখন আছি। এটাই যদি সম্ভব হয়, তখন থাকব। সেও সম্ভব। নীরজা। নিশ্চয় সম্ভব, ঐ বাগানটা সম্ভব, আর আমিই হব। অসম্ভব, এ হতেই পারে না, কিছুতেই না। সন্ধেবেলায় আমনি করেই অস্পষ্ট আলোয় কাকেরা ফিরবে বাসায়, এমনি করেই দুলবে সুপুরিগাছের ডাল ঠিক আমারই চােখের সামনে। সেদিন তুমি মনে রেখো, আমি আছি, আমি আছি, সমস্ত বাগানময় "আমি আছি”। মনে কোরো বাতাস যখন তোমার চুল ওড়াচ্ছে আমার আঙুলের ছোঁওয়া আছে তাতে। বলে মনে করবে। আদিত্য। হাঁ, মনে করব। বলল বটে, কিন্তু এমন সুরে বলতে পারলে না যাতে তার বিশ্বাসের প্রমাণ হয়। নীরজা। (অস্থির হয়ে) তোমাদের বই যারা লেখে ভাবী তো পণ্ডিত তারা। কিছু জানে না । আমি নিশ্চয় জানি, আমার কথা বিশ্বাস করো। আমি থাকিব, আমি এইখানেই থাকিব, আমি তোমারই কাছে থাকিব, একেবারে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। এই তোমাকে বলে যাচ্ছি, কথা দিয়ে: যাচ্ছি, তোমার বাগানের গাছপালা সমস্তই আমি দেখব। যেমন আগে দেখতুম তার চেয়ে অনেক ভালো করে দেখব। কাউকে দরকার হবে না। কাউকে না। শুয়ো হিল, উঠে বালিশে ঠেসান দিয়ে বসে আমাকে দয়া কোরো, দয়া কোরো। তোমাকে এত ভালোবাসি সেই কথা মনে করে আমাকে দয়া কোরো। এতদিন তুমি আমাকে যেমন আদরে স্থান দিয়েছ তোমার ঘরে, সেদিনও তেমনি করেই স্থান দিয়ে। ঋতুতে ঋতুতে তোমার যে-সব ফুল ফুটবে তেমনি করেই মনে মনে তুলে দিয়ে আমার হাতে। যদি নিষ্ঠুর হও তুমি, তা হলে তো এখানে আমি থাকতে পারব না। আমার বাগান যদি কেড়ে নাও তা হলে হাওয়ায় হাওয়ায় কোন শূন্যে আমি ভেসে বেড়াব? بهع নীরজার দুই চক্ষু দিয়ে জল ঝরে পড়তে লাগল। আদিত্য মোড়া ছেড়ে বিছানার উপর উঠে বসল।