পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\S)XV রবীন্দ্র-রচনাবলী কি আমাদের ঘরে নেই? সেই ধ্যানমন্ত্রের সহযোগেই কি নবযুগের প্রথম প্রভাত রশ্মি মানুষের মনে সনাতন সত্যের উদবোধন এনে দেবে না? : এইজন্যেই আমাদের দেশের বিদ্যানিকেতনকে পূর্বপশ্চিমের মিলননিকেতন করে তুলতে হবে, এই আমার অন্তরের কামনা। বিষয়লাভের ক্ষেত্রে মানুষের বিরোধ মেটে নি, সহজে মিটতেও চায় না। সত্যলাভের ক্ষেত্রে মিলনের বাধা নেই। যে গৃহস্থ কেবলমাত্র আপন পরিবারকে নিয়েই থাকে, আতিথ্য করতে যার কৃপণতা, সে দীনাত্মা। শুধু গৃহস্থের কেন, প্রত্যেক দেশেরই কেবল নিজের ভোজনশালা নিয়ে চলবে না, তার অতিথিশালা চাই যেখানে বিশ্বকে অভ্যর্থনা ক’রে সে ধন্য হবে। শিক্ষাক্ষেত্রেই তার প্রধান অতিথিশালা। দুর্ভাগা ভারতবর্ষে বর্তমান কালে শিক্ষার যতী-কিছু সরকারি ব্যবস্থা আছে তার পনেরো-আনা অংশই পরের কাছে বিদ্যাভিক্ষার ব্যবস্থা। ভিক্ষা যার বৃত্তি আতিথ্য করে না বলে লঙ্ক্তা করাও তার ঘুচে যায়। সেইজন্যেই বিশ্বের আতিথ্য করে না বলে ভারতীয় আধুনিক শিক্ষালয়ের লজ্জা নেই। সে বলে, “আমি ভিখারি, আমার কাছে আতিথ্যের প্রত্যাশা। কারো নেই।” কে বলে নেই? আমি তো শুনেছি পশ্চিমদেশ বারংবার জিজ্ঞাসা করছে, “ভারতের বাণী কই?” তার পর সে যখন আধুনিক ভারতের দ্বারে এসে কান পাতে তখন বলে, “এ তো সব আমারই বাণীর ক্ষীণ প্ৰতিধ্বনি, যেন ব্যাঙ্গের মতো শোনাচ্ছে।” তাই তো দেখি, আধুনিক ভারত যখন মাকসমুলারের পাঠশালা থেকে বাহির হয়েই আৰ্যসভ্যতার দম্ভ করতে থাকে তখন তার মধ্যে পশ্চিম গড়ের বাদের কড়িমধ্যম লাগে, আর পশ্চিমকে যখন সে প্রবল ধিক্কারের সঙ্গে প্রত্যাখান করে তখনো তার মধ্যে সেই পশ্চিম রাগেরই তার সপ্তকের আমার প্রার্থনা এই যে, ভারত আক্ত সমস্ত পূর্বভূভাগের হয়ে সতীসাধনার অতিথিশালা সে বিশ্বকে নিমন্ত্রণ করবে এবং তার পরিবর্তে সে বিশ্বের সর্বত্র নিমন্ত্রণের অধিকার পাবে। দেউড়িতে নয়, বিশ্বের ভিতর-মহলে তার আসন পড়বে। কিন্তু আমি বলি, এই মানসম্মানের কথা এও বাহিরের, একেও উপেক্ষা করা চলে। এই কথাই বলবার কথা যে, সত্যকে চাই অন্তরে জন্যে নয়, মানুষের আত্মাকে তার প্রচ্ছন্নতা থেকে মুক্তি দেবার জন্যে। মানুষের সেই প্রকাশতত্ত্বটি আমাদের শিক্ষার মধ্যে প্রচার করতে হবে, কর্মের মধ্যে প্রচলিত করতে হবে, তা হলেই সকল মানুষের সম্মান করে আমরা সম্মানিত হব ; নবযুগের উদবোধন করে আমরা জরামুক্ত হব। আমাদের শিক্ষালয়ের সেই শিক্ষামন্ত্রটি এই-- যস্তু সর্বাণি ভূতানি আত্মনোবানুপশ্যতি | সর্বভূতেষু চাত্মানং ততো ন বিজুণ্ডপসতে। আশ্বিন ১৩২৮ বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ অপরিচিত আসনে অনভ্যস্ত কর্তাবো। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে আহ্বান করেছেন। তার