পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংগীতচিন্ত । “もの* অভিভূত করে রাখে, অগ্রগামী কালের নব নব সৃষ্টিবৈচিত্রের পিছনে আমাদের বিহবলভাবে কাত করে রেখে দেয়, খাঁচার পাখির মতো যে বুলি শিখেছি তাই কেবলই আউড়িয়ে যাই এবং অবিকল আউড়িয়ে যাবার জন্যে বাহবা দাবি করি, তা হলে এই নকলনবিশি-বিধানকে সেলাম করে থাকব। তার থেকে দূরে-- নূতন সাধনার পথে খুঁড়িয়ে চলব। সেও ভালো, কিন্তু হাজার বছর আগেকার রাস্তায় শিকল-বাঁধা শাগরেদি করতে পারব না। ভুল ভ্ৰান্তি অসম্পূর্ণতা সমস্তর ভিতর দিয়ে নবযুগবিধাতার ডাক শুনে চলতে থাকব নবসৃষ্টির কামনা নিয়ে! বাঁধা মতের প্রবীণদের কাছে গাল খাব- জীবনে তা অনেকবার খেয়েছি- কিন্তু আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে আমি কিছুতেই মানব না যে, আমি ভূতকালের ভূতে-পাওয়া মানুষ। আজ য়ুরোপীয় গুণীমণ্ডলীর মধ্যে এমন কেউ নেই যে, বলে না যে, অজন্তার ছবি শ্ৰেষ্ঠ আদর্শের ছবি, কিন্তু তাদের মধ্যে এমন বেওকুফ কেউ নেই যে ঐ অজস্তার ছবির উপর কেবল দাগা বুলিয়ে যাওয়াকেই শিল্পীসাধনার চরম বলে মানে ? তানসেনকে সেলাম করে বলব, ওস্তাদজি, তোমার যে পথ আমারও সেই পথ। অর্থাৎ নবসৃষ্টির পথ। বাংলা দেশ একদিন সংগীতে গণ্ডিভাঙা নবজীবনের পথে চলেছিল। তার পদাবলী তার গীতকলাকে জাগিয়ে তুলেছিল দাসী করে নয়, সঙ্গিনী করে, তার গৌরব রক্ষা করে। সেই বাংলা দেশে আজ নতুন যুগের ধখন ডাক পড়ল তখন সে হিন্দুস্থানী আন্তঃপুরে প্রাচীরের আড়ালে কুলিরক্ষা করতে পারবে না- তখন সে জটিলার শাসন উপক্ষো করে যুগলমিলনের পথে চরম সার্থকতা লাভ করবে। এ নিয়ে নিন্দে জাগবে, কিন্তু লজ্জা করলে চলবে না , মত বদলিয়েছি ; কতবার বদলিয়েছি তার ঠিক নেই ; সৃষ্টিকর্তা যদি বার বার মত না বদলাতেন ৩া হলে আজকের দিনের সংগীতসভা ডাইনসরের ধ্রুপদী গর্জনে মুখরিত হত এবং সেখানে চতুর্দস্ত ম্যামিথের চতুষ্পদী নৃত্য এমন ভীষণ হত যে যারা আজ নৃত্যকলায় পালোয়ানির পক্ষপাতী ৩ারাও দিও, দৌড় ; শেষ দিন পর্যন্ত যদি আমার মত বদলাবার শক্তি আকুষ্ঠিত থাকে তা হলে বুঝৰ এখনো বাঁচবার আশা আছে। নইলে গঙ্গাযাত্রার আয়োজন কর্তব্য । আমাদের দেশে সেই শানবঁধানো ঘাটেই লোকসংখ্যা সব চেয়ে বেশি। ধূর্জটিপ্ৰসাদ মুখোপাধ্যায়কে লিখিত সংগীতের সঙ্গে কাব্যের একটা জায়গায় মিল নেই! সংগীতের সমস্তািটই অনিৰ্বাচনীয়া! কা বচনীয়তা আছে সে কথা বলা বাহুল্য ; অনির্বচনীয়তা সেইটোকেই বেষ্টন করে হিল্লেলিত হ থাকে, পুথিবীর চার দিকে বায়ুমণ্ডলের মতো। এপর্যন্ত বচনের সঙ্গে অনির্বাচনের, বিষয়ের সঙ্গে রসের গাঠ বেঁধে দিয়েছে ছন্দ। পরস্পরকে বলিয়ে নিয়েছে- ‘যদেতদ হৃদয়ং মম তদন্তু হৃদয়ং তব”। বাক এবং অবাক বাঁধা পড়েছে ছন্দের মাল্য-বন্ধনে। শান্তিনিকেতন। ৮ অক্টোবর ১৯৩৭ গানে কথা ও সুরের স্থান নিয়ে কিছুদিন থেকে তর্ক চলেছে। আমি ওস্তাদ নই, আমার সহজ বুদ্ধিতে এই মনে হয় এ বিষয়টা সম্পূর্ণ তর্কের বিষয় নয় ; এ সৃষ্টির অধিকারগত, অর্থাৎ লীলার। জপতপ করে মন্ত্রতন্ত্র আউড়িয়ে হয়তো কৃচ্ছসাধক যথানিয়মে ভাবসমূদ্র পার হতে পারে, কিন্তু