পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংগীতচিন্তা 1) 2 ما গায়ক, অর্থাৎ আর্টিস্ট, সেই দরবারী কানাড়ার ধ্রুপদকে বাহুল্যবর্জিত করে আপনাকে শোনান, তবে সেই গায়নের অপেক্ষাকৃত বৃহৎ আয়তনের জন্যই কি ঐ গানের ইঙ্গিত-আভাস স্থূল হয়ে উঠবে? আমার বক্তব্য-great হলেই তাকে ভেঁাতা হতে হবে এমন কোনো কথা নেই, যেমন ছােটাে হলেই ইঙ্গিতমুখর হতে হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। বৃহতের মধ্যেও সূক্ষ্ম আভাস রয়েছে দেখেছি, যেমন জৌনপুরের মসজিদে। greatness-এর সংজ্ঞা দিতে পারছি না, সেটা শুদ্ধ নয়, খাদ্য-যুক্ত, তার সঙ্গে সংখ্যার ও আখ্যানবস্তুর আয়তনের সম্বন্ধ আছেই আছে— অন্তত পটভূমিতে তো রয়েইছে। আমাদের অলংকারশাস্তুে প্রাচুর্যকে প্রতিভার একটি নিদর্শন বলা ठू636छ । একটা নতুন কথা তুলছি। এই অর্থে নতুন যে, পূর্বে আমি সেটা নিয়ে আপনার সঙ্গে আলোচনা করি নি। ধরুন, আমি যদি বলি আমার দু ঘন্টা ধরে ছায়ানটের কি পুরিয়ার আলাপ শুনতে ভালোই লাগে। নাহয় নাই হল কলা, হলই বা আমার ওস্তাদী বুদ্ধি? আমি জানি আমার কান অশিক্ষিত নয়, আমার কানে শ্রুতির তারতম্য পৰ্যন্ত সুস্পষ্ট। এই কানে যেটা ভালো লাগে সেইটাই হবে আর্ট। দস্তিকতা দেখাচ্ছি না- সকলেই এই ভাবে, আমি কেবল খোলাখুলি লিখলাম। আমি জানি আপনারও ভালো লাগে সুরের বিকাশ। মার্জিত শ্রবণেন্দ্ৰিয়ের ভালো লােগা না-লাগাই হবে বিচারের কষ্টিপাথর-নয় কি ? এই ব্যক্তিগত রুচিকে বাদ দিলে সংগীতের ভবিষ্যৎ-নিরূপণের অন্য কী ব্যক্তিসম্পর্কহীন পথনির্দেশক চিহ্ন থাকতে পারে? এই রূপসৃষ্টিটাই আমাদের সংগীতের একমাত্র ভবিষ্যৎ- আপনি কী হিসেবে বলতে পারেন? ভালো লােগা না-লাগাকে বাদ দিতে পারি না- তাকে আপনি লোভই বলুন আর আমি নিজে তাকে বর্বরতাই বলি-না কেন। সংগীতের ভবিষ্যৎ কি স্থাপত্যে ? একটা কথা আছে : architecture is frozen musie || жfit is etci za fе, 48" figrač gla i প্ৰণতি ধূর্জটি কল্যাণীয়েযু ভালো লােগা এবং না-লাগা নিয়ে বিরোধ অন্য সকল রকম বিরোধের চেয়ে দুঃসহ। অর্থনীতি বা সমাজনীতি সম্বন্ধে তুমি যে রকম করে যা বোঝে আমি যদি সে রকম করে তা না বুঝি তা হলে তোমার সঙ্গে আমার দ্বন্দ্ব নিশ্চয় বাধতে পারে, কিন্তু সেইটে বাইরের দরজায় দাঁড়িয়ে। তখন পরস্পর পরস্পরকে মুখ বলে নির্বোিধ বলে গাল দিতে পারি। সেটা শ্রুতিমধুর নয় বটে, কিন্তু মূখত নিবৃদ্ধিতার একটা বাহা পরিমাপক পাওয়া যায়, যুক্তিশাস্ত্রের বাটখারা-যোগে তাঁর ওজনের প্রমাণ দেওয়া চলে। কিন্তু যখন পরস্পরকে বলা যায় অরসিক, তখন তর্কে কুলোয় না। পৌছয়। লাঠালাঠিতে। যেহেতু রস জিনিসটা অপ্রমেয়। বুদ্ধিগত বোঝাবুঝির তফাত নিয়ে ঘর করা চলে সংসারে তার প্রমাণ আছে, কিন্তু আমার ভালো লাগে অথচ তোমার লাগে না এইটে নিয়েই ঘর ভাঙবার কথা। অতএব সংগীত সম্বন্ধে উক্ত সাংঘাতিক বিপদজনক কথাটার নিষ্পত্তি করে নেওয়া যাক। তোমাতে আমাতে ভেদ পাের হবার একটা সেতু আছে- সে হচ্ছে তোমার সঙ্গে আমার ভালো লাগার অমিল নেই। কিন্তু তৎসত্ত্বেও নালিশ রয়ে গেছে। সংস্কৃত সাহিত্যে কাদম্বরী আমার অত্যন্ত প্রিয় জিনিস- ওর বহুল। নৈহারিকতার মধ্যে মধ্যে রসের জ্যোতিষ্ক নিবিড় হয়ে