পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

अ९कोऊस्छि। V8S আমরা যাকে হিন্দুস্থানী সংগীত বলি তার মধ্যে দুটাে জিনিস আছে, একটা হচ্ছে গানের তত্ত্ব, আর-একটা গানের সৃষ্টি। গানের তত্ত্বটি অবলম্বন করে বড়েী বড়ো হিন্দুস্থানী গুণী গান সৃষ্টি করেছেন। যে যুগে তঁরা সৃষ্টি করেছেন সেই বাদশাহী যুগের প্রভাব আছে তার মধ্যে। দেশকলপাত্রের সঙ্গে সংগতিক্রমে তাদের সেই সৃষ্টি সত্য, যেমন সত্য সেকেন্দ্রাবাদ প্রাসাদের স্থাপত্য। তাকে প্রশংসা করব, কিন্তু অনুকরণ করতে গেলে নূতন দেশকলপাত্ৰে হাঁচটি খেয়ে সেটা সত্য হারাবে। বাঙালির মধ্যে বিদগ্ধমুখমণ্ডন’-রূপে যে হিন্দুস্থানী গানের অনুশীলন দেখা যায়, সেটা নিতান্তই ধনীর-আঁচল-ধরা পূর্বানুবৃত্তি। পূর্বকালীন সৃষ্টিকে ভোগ করবার উদ্দেশে এই অনুবৃত্তির প্রয়োজন থাকতে পারে ; কিন্তু সেইখানেই আরম্ভ আর সেইখানেই যদি শেষ হয়, দূরশতাব্দীর বাদশাহী আমলের বাইরে আমরা যে আজও বেঁচে আছি সংগীতে তার যদি কোনো প্রমাণ না পাওয়া যায়, তা হলে এ নিয়ে গৌরব করতে পারব না। কেননা, গান সম্বন্ধে যে দরিদ্র এই শাকভাত এবং কুঁড়েঘরও শ্রেয়। বাংলা দেশে কীর্তন গানের উৎপত্তির আদিতে আছে একটি অত্যন্ত সত্যমূলক গভীর এবং দূরব্যাপী হৃদয়াবেগ। এই সত্যকার উদ্দাম বেদনা হিন্দুস্থানী গানের পিঞ্জরের মধ্যে বন্ধন স্বীকার করতে পারলে নাসে বন্ধন হােক-না সোনার, বাদশাহী হাটে তার দাম যত উচুই হােক। অথচ হিন্দুস্থানী সংগীতের রাগরাগিণীর উপাদান সে বর্জন করে নি। সে-সমস্ত নিয়েই সে আপন নূতন সংগীতলোক সৃষ্টি করেছে। সৃষ্টি করতে হলে চিত্তের বেগ এমনিই প্রবল রূপে সত্য হওয়া চাই। প্রত্যেক যুগের মধ্যেই এই কান্নাটা আছে— ‘সৃষ্টি চাই’। অন্য যুগের সৃষ্টিহীন প্ৰসাদভোগী হয়ে থাকার লজা থেকে যে তাকে রক্ষা করবে, তাকে সে আহবান করছে। আধুনিক বাংলা দেশে গান-সৃষ্টির উদ্যম সংগীতকে কোনো অসামান্য উৎকর্ষের দিকে নিয়ে গেছে কি না এবং সে উৎকর্ষ ধ্রুবপদ্ধতির হিন্দুস্থানী সংগীতের উৎকৃষ্ট আদর্শ পর্যন্ত পৌছতে পেরেছে কি না সে কথাটা তত গুরুতর নয়, কিন্তু প্রকাশের চাঞ্চল্য মাত্রেই তার যে সজীবতার প্রমাণ পাই সেইটেই সব চেয়ে আশাজনক। নব্যবঙ্গের গানের কণ্ঠ গ্র্যামোফোনের চেয়ে অনেক খেলে, তা হলে সে বেঁচে আছে। এই কথাটা সপ্রমাণ হবে। তবে তার বর্তমান যেমনি কচি হােক তার জোয়ান বয়সের ভবিষ্যৎ খুলবে আপন সিংহদ্বার। সে ভবিষ্যৎ নিরবধি। বাঙালির চিত্তবৃত্তি প্রধানত সাহিত্যিক এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ইংরেজের প্রতিভাও সাহিত্যপ্রবণ। তার মন আপনি বড়ো বড়ো বাতি জ্বালিয়েছে সাহিত্যের মন্দিরে। প্রকৃতির গৃহিণীপনায় মিতব্যয়িতা দেখা যায়, শক্তির পরিবেশনে খুব হিসেব করে ভাগ-বাটােয়ারা হয়ে থাকে। মাছকে প্রকৃতি শিখিয়েছেন খুব গভীর জলে ডুব-সাঁতার কাটতে, আর উচ্চ আকাশে উধাও হতে শিখিয়েছেন পাখিকে। কখনো কখনো সামান্য পরিমাণে কিছু মিশেল করেও থাকেন। পানকৌড়ি কিছুক্ষণের মতো জলে দেয় ডুবি, উড়ুকু মাছ আকাশে ওড়ার শখ মেটায়। ইংলন্ডে সাহিত্যে জন্মেছেন শেকসপীিয়র, জর্মানিতে সংগীতে জন্মেছেন বেটােফেন। ; সত্যের খাতিরে এ কথা মানতেই হবে যে, বিশুদ্ধ সংগীতে হিন্দুস্থান বাংলাকে এগিয়ে গেছে। ংগীতে তার প্রধান প্রমাণ পাওয়া যায়। যন্ত্রসংগীত সম্পূর্ণই সাহিত্য-নিরপেক্ষ। তা ছাড়া ঐ অঞ্চলে অর্থহীন তোমা-তা-না-না শব্দে তোলেনার বুলি ভাষাকে ব্যঙ্গ করতে দ্বিধা বোধ করে না। ܠ l8ܟܠ ܠ