পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Web SR রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী উপরে বর্ণিত রচনাগুলি ছাড়া, সংগীত বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে লেখা কয়েকটি পত্রাংশ সংগীতচিন্তায় সংকলিত হইয়াছে। সে-সব পত্রের সঙ্গেই উৎস সূত্রের উল্লেখ আছে। । ‘সংগীতচিন্তা” গ্রন্থটিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করিয়া তুলিবার অভিপ্ৰায়ে রচনাবলীর বিভিন্ন খণ্ডে প্রকাশিত কয়েকটি প্রবন্ধকে ইহার অন্তর্ভুক্ত করা হইয়াছিল। স্বভাবতই এই খণ্ডে সেগুলি বর্জিত হইল। সেই প্ৰবন্ধগুলির নাম ও উৎস নিম্নরূপ : y সংগীত ও কবিতা সমালোচনা। অচলিত ২ গান সম্বন্ধে প্ৰবন্ধ জীবনস্মৃতি। রচনাবলী ১৭ অন্তরবাহির পথের সঞ্চয় । । রচনাবলী ২৬ সংগীত পথের সঞ্চয়। রচনাবলী ২৬ সোনার কাঠি পরিচয় । রচনাবলী ১৮ রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন রচনার মধ্যে সংগীত-বিষয়ক নানা মন্তব্য প্রকীর্ণ আছে, কোথাও কোথাও তাহা সংক্ষিপ্ত, কোথাও—বা অনতিসংক্ষিপ্ত। সংগীতচিন্তা গ্রন্থে সেগুলিও সংকলিত ছিল। আত্মকথা কবে যে গান গাহিতে পারিতাম না। তাহা মনে পড়ে না। মনে আছে বাল্যকালে গাদ্দাফুল দিয়া ঘর সাজাইয়া মাঘোৎসবের অনুকরণে আমরা খেলা করিতাম। সে খেলায় অনুকরণের আর আর সমস্ত অঙ্গ একেবারেই অর্থহীন ছিল, কিন্তু গানটা ফাকি ছিল না। এই খেলায় ফুল দিয়া সাজানো একটা টেবিলের উপরে বসিয়া আমি উচ্চকণ্ঠে “দেখিলে তোমার সেই অতুল প্ৰেম-আননে" গান গাহিতেছি বেশ মনে পড়ে। চিরকালই গানের সুর আমার মনে একটা অনির্বচনীয় আবেগ উপস্থিত করে। এখনো কাজকর্মের মাঝখানে হঠাৎ একটা গান শুনিলে আমার কাছে এক মুহুর্তেই সমস্ত সংসারের ভাবান্তর হইয়া যায়। এই-সমস্ত চোখে দেখার রাজ্য গানে-শোনার মধ্য দিয়ে হঠাৎ একটা কী নূতন অর্থ লাভ করে। হঠাৎ মনে হয় আমরা যে জগতে আছি বিশেষ করিয়া কেবল তাহার একটা তলার সঙ্গেই সম্পর্ক রাখিয়াছি, এই আলোকের তলা, বস্তুর তলা- কিন্তু এইটেই সমস্তটা নয়। যখন এই বিপুল রহস্যময় প্রাসাদে সুর আর-একটা মহলের একটা জালনা ক্ষণিকের জন্য খুলিয়া দেয়। তখন আমরা কী দেখিতে পাই! সেখানকার কোনো অভিজ্ঞতা আমাদের নাই, সেইজন্য ভাষায় বলিতে পারি না। কী পাইলাম- কিন্তু বুঝিতে পারি সে দিকেও অপরিসীম সত্যপদার্থ আছে। বিশ্বের সমস্ত স্পন্দিত জাগ্ৰত শক্তি আজ প্রধানত বস্তু ও আলোক। -রূপেই প্রতিভাত হইতেছে বলিয়া আজ আমরা এই সূর্যের আলোকে বস্তুর অক্ষর দিয়াই বিশ্বকে অহরহ পাঠ করিতেছি, আর কোনো অবস্থা কল্পনা করিতে পারি না-কিন্তু এই অসীম স্পন্দন যদি আমাদের কাছে আর-কিছু না হইয়া কেবল গগনাব্যাপী অতি বিচিত্র সংগীত রূপেই প্রকাশ পাইত, তবে অক্ষররাপে নহে, বাণীরূপেই আমরা সমস্ত পাইতাম। গানের সুরে যখন অন্তঃকরণের সমস্ত তন্ত্রী কঁপিয়া উঠে তখন অনেক সময় আমার কাছে এই দৃশ্যমান জগৎ যেন আকার-আয়তন-হীন বাণীর ভাবে আপনাকে ব্যক্ত করিতে চেষ্টা করে— তখন যেন বুঝিতে পারি জগৎটাকে যে ভাবে জানিতেছি তাহা ছাড়া কত রকম ভাবেই যে ভঁাহাকে জানা যাইতে পারিত তাহা আমরা কিছুই