পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Ved 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী জাভা । ১৪ সেপ্টেম্বর ১৯২৭ বাজনা বেজে উঠল, সেইসঙ্গে এখানকার গানও শোনা গেল। সে গানে আমাদের মতো আস্থায়ীঅন্তরার বিভাগ নেই। একই ধুয়ো বার বার আবৃত্তি করা হয়, বৈচিত্ৰ্য যা-কিছু তা যন্ত্রবাজনায়।. এদের যন্ত্র বাজনােটা তাল দেবার উদ্দেশে। আমাদের দেশে বঁীয়া তবলা প্রভৃতি তালের যন্ত্র যে সপ্তকে গান ধরা হয় তারই সা সুরে বাধা ; এখানকার তালের যন্ত্রে গানের সব সুরগুলিই আছে। মনে করে ‘তুমি যেয়ো না এখনি- এখনো আছে। রজনী' ভৈরবীর এই এক ছত্ৰ মাত্র কেউ যদি ফিরে ফিরে গাইতে থাকে আর নানাবিধ যন্ত্রে ভৈরবীর সুরেই যদি তালের বোল দেওয়া হয়, আর সেই বোল-যোগেই যদি ভৈরবী রাগিণীর ব্যাখ্যা চলে, তা হলে যেমন হয় এও সেইরকম। পরীক্ষা করে দেখলে দেখা যাবে শুনতে ভালোই লাগে, নানা আওয়াজের ধাতুবাদ্যে সুরের নৃত্যে আসর খুব জমে ওঠে। [জাভা }, ১৭ সেপ্টেম্বর ১৯২৭ মানুষের জীবন বিপদসম্পদ সুখদুঃখের আবেগে নানাপ্রকার রূপে ধ্বনিতে স্পর্শে লীলায়িত হয়ে চলছে ; তার সমস্তটা যদি কেবল ধ্বনিতে প্রকাশ করতে হয় তা হলে সে একটা বিচিত্ৰ সংগীত হয়ে ওঠে ; তেমনি আর-সমস্ত ছেড়ে দিয়ে সেটাকে কেবলমাত্র যদি গতি দিয়ে প্রকাশ করতে হয় তা হলে সেটা হয় নাচ। ছন্দোময় সুরই হােক আর নৃত্যই হােক তার একটা গতিবেগ আছে, সেই বেগ আমাদের চৈতন্যে রসচাঞ্চল্য সঞ্চার করে তাকে প্রবলভাবে জাগিয়ে রাখে। কোনো ব্যাপারকে নিবিড় করে উপলব্ধি করাতে হলে আমাদের চৈতন্যকে এইরকম বেগবান করে তুলতে る項目 ॐाटा । ३० अ729 S १ চোখের দেখার সুখটুকু রক্ষা করে এদের যে সংগীতের আলোচনা সে হচ্ছে সুরের নাচ । ছন্দের লীলা। এদের কাছে গীতের ধারার চেয়ে বেশি। কিন্তু, ছন্দের লীলা আমাদের দেশের ভোজপুরিয়াদের খচমচ বাদ্যের দুঃসহ অত্যাচার নয়। এদের নাচ যেমন সুন্দর সজ্জিত অঙ্গের নােচ, এদের সংগী৩ে যে ছন্দের নাচ সেও খোল করতাল মৃদঙ্গর কোলাহল নয়- সুশ্রাব্য সুর দিয়ে সেই নাচ মণ্ডিত ! এদের সংগীতকে বলা যেতে পারে স্বরানুত্য, এদের অভিনয়কে বলা যায় রূপ,নাট্য। শিরাজ।। ১৭ এপ্রিল ১৯৩২ এখানকার গান-বাজনার কিছু নমুনা পেলুম। একজনের হাতে কানুন, একজনের হাতে সেতােরজাতীয় বাজনা, গায়কের হাতে তাল দেবার যন্ত্র- বাঁয়া-তবলার একত্রে মিশ্রণ। সংগীতের তিনটি ভাগ। প্রথম অংশটা চটুল, মধ্য অংশ ধীর মন্দ সকরুণ, শেষ অংশটা নাচের তালে। আমাদের দিশি সুরের সঙ্গে স্থানে স্থানে অনেক মিল দেখতে পাই! বাংলা দেশের সঙ্গে একটা ঐক্য দেখছি- এখানকার সংগীত কাব্যের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন নয়।