পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষোড়শ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্রন্থপরিচয় હરે (t তেহেরান । ২৯ এপ্রিল ১৯৩২ আজ সন্ধ্যার সময় একজন ভদ্রলোক এলেন, তঁর কাছ থেকে বেহালায় পারসিক সংগীত এমন দরদ দিয়ে বাজালেন- তানগুলি পদে পদে এমন বিচিত্র অথচ সংঘত ও সুমিত যে, আমার মনের মধ্যে মাধুর্য নিবিড় হয়ে উঠল। বোঝা গেল ইনি ওস্তাদ, কিন্তু ব্যাবসাদার নন। বাবসাদারিতে নৈপুণা বাড়ে কিন্তু বেদনাবোধ কমে যায়, ময়রা যে কারণে সন্দেশের রুচি হারায়। আমাদের দেশের গাইয়ে-বাজিয়েরা কিছুতেই মনে রাখে না যে, আর্টের প্রধান তত্ত্ব তার পরিমিতি। কেননা, রূপকে সুব্যক্তি করাই তার কাজ। বিহিত সীমার দ্বারা রূপ সত্য হয়, সেই সীমা ছড়িয়ে অতিকৃতিই বিকৃতি।. আমাদের সংগীতের আসরে এই অতিকায় আতিশয্য মত্ত করীর মতো নামে পদ্মবনে। তার তানগুলো অনেক স্থলে সামান্য একটু-আধটু হেরফের করা পুনঃ পুনঃ পুনরাবৃত্তি মাত্ৰ ! তাতে স্তুপ বাড়ে রূপ নষ্ট নয়। তন্থী রূপসীকে হাজার পকে জড়িয়ে ঘাগরা এবং ওড়না পরানোর মতো। সেই ওড়না বহুমূল্য হতে পারে, তবু রূপকে অতিক্রম করবার স্পর্ধা তাকে মানায় না। এরকম অদ্ভুত রুচিবিকারের কারণ এই যে, ওস্তাদের স্থির করে রেখেছেন সংগীতের প্রধান উদ্দেশ্য সমগ্র গানটিকে তার আপনি সুষমায় প্রকাশ করা নয়, রাগরাগিণীকেই বীরবিক্ৰমে আলোড়িত ফেনিল করে তোলা- সংগীতের ইমারতটিকে আপনি ভিত্তিতে সুসংযমে দাঁড় করানো নয়, ইট কাঠ চুন সুরকিকে কণ্ঠ-কামানের মুখে সগর্জনে বর্ষণ করা । ভুলে যায় সুবিহিত সমাপ্তির মধ্যেই আর্টের পর্যাপ্তি। গান যে বানায় আর গান যে করে উভয়ের মধ্যে যদি বা দরদের যোগ থাকে, তবু সৃষ্টিশক্তির সাম্য থাকা সচরাচর সম্ভবপর নয়। বিধাতা তীর জীবসৃষ্টিতে নিজে কেবল যদি কঙ্কালের কাঠামোটুকু খাড়া করেই ছুটি নিতেন, যার তার উপর ভার থাকত সেই কঙ্কালে যত খুশি মোদমাংস চড়াবার, নিশ্চয়ই তাতে অনাসৃষ্টি ঘটত। অথচ আমাদের দেশে গায়ক কথায় কথায় রচয়িতার অধিকার নিয়ে থাকে, তখন সে সৃষ্টিকর্তার কঁাধের উপর চ'ড়ে ব্যায়াম-কর্তার বাহাদুরি প্রচার করে। উত্তরে কেউ বলতে পারেন, “ভালো তো লাগে' ৷ কিন্তু পেটুকের ভালো লাগা আর রসিকের ভালো লাগা এক নয়। কী ভালো লাগে। তাই নিয়ে তর্ক ।

        • '*'*' జొ# リペ ? エ > ふここ

এশিয়ার প্রায় সকল দেশেই আজ পাশ্চাত্য ভাবের সঙ্গে প্রাচ্য ভাবের মিশ্রণ চলছে। এই মিশ্রণে নূতন সৃষ্টির সম্ভাবনা। এই মিলনের প্রথম অবস্থায় দুই ধারার রঙের তফাতটা থেকে যায়, অনুকরণের জোরটা মরে না। কিন্তু আন্তরিক মিলন ক্রমে ঘটে, যদি সে মিলনে প্রাণশক্তি থাকেকলমের গাছের মতো নূতনে পুরাতনে ভেদ লুপ্ত হয়ে ফলের মধ্যে রসের বিশিষ্টতা জন্মে। আমাদের আধুনিক সাহিত্যে এটা ঘটেছে, সংগীতেও কেন ঘটবে না বুঝি নে! যে চিত্তের মধ্যে দিয়ে এই মিলন সম্ভবপর হয় আমরা সেই চিত্তের অপেক্ষা করছি। যুরোপীয় সাহিত্যচর্চা প্রাচ্য শিক্ষিত সমাজে যে পরিমাণে অনেক দিন ধরে অনেকের মধ্যে ব্যাপ্ত হয়েছে, য়ুরোপীয় সংগীতচর্চাও যদি তেমনি হত তা হলে নিঃসন্দেহই প্রাচ্য সংগীতে রাসপ্রকাশের একটি নূতন শক্তি সঞ্চার হওঁ। য়ুরোপের আধুনিক চিত্রকলায় প্রাচ্য চিত্রকলার প্রভাব সঞ্চারিত হয়েছে। এ তো দেখা গৈছে। এতে তার আত্মতা পরাভূত হয় না, বিচিত্ৰতর প্রবলতর হয়।