পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8O झीझ-झष्मादळेी আমরা গতবারে যখন রাবণের চরিত্র সমালোচনা করিয়াছিলাম, তখন মনে করিলাম যে, রাবণের ক্ৰন্দন করা যে অস্বাভাবিক, ইহা বুঝাইতে বড়ো একটা অধিক প্রয়াস পাইতে হইবে না; কিন্তু এখন দেখিলাম বড়ো গোল বাধিয়াছে; কেহ কেহ বলিতেছেন রাবণ পুত্ৰশোকে কঁদিয়াছে, তবেই তো তাহার বড়ো অপরাধ' পুত্ৰশোকে বীরের কীরূপ অবস্থা হয়, তাহারা আপনাআপনাকেই তাহার আদর্শস্বরাপ করিয়াছেন। ইহাদের একটু ভালো করিয়া বুঝাইয়া দেওয়া আবশ্যক বোধ করিতেছি। পাঠকদের কেহ বা ইচ্ছা করিয়া বুঝিবেন না, তাহাদের সঙ্গে যোঝাযুঝি করা আমাদের কর্ম নহে, তবে যাহারা সত্য অপ্রিয় হইলেও গ্রহণের জন্য উন্মুখ আছেন তাহারা আর-একটু চিন্তা করিয়া দেখুন। সেনাপতি সিউয়ার্ডের পুত্র যুদ্ধে হত হইলে রস আসিয়া তাঁহাকে নিধন সংবাদ দিলেন। সিউয়ার্ড জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘সম্মুখভাগেই তো তিনি আহত হইয়াছিলেন?” রস- হাঁ, সম্মুখেই আহত হইয়াছিলেন। সিউয়ার্ড - তবে আর কি! আমার যতগুলি কেশ আছে ততগুলি যদি পুত্ৰ থাকিত, তবে তাহাদের জন্য ইহা অপেক্ষা উত্তম মৃত্যু প্রার্থনা করিতাম না। ম্যালকম- তাহার জন্য আরও অধিক শোক করা উচিত। সিউয়ার্ড।- না, তাহার জন্য আর অধিক শোক উপযুক্ত নহে! শুনিতেছি তিনি বীরের মতো মরিয়াছেন, ভালোই, তিনি তাহার ঋণ পরিশোধ করিয়াছেন, ঈশ্বর তাহার ভালো করুন। --ম্যাকবেথ আমরা দেখিতেছি, মাইকেলের হস্তে যদি লেখনী থাকিত তবে এই স্থলে তিনি বলিতেন যে, হা পুত্র, হা সিউয়ার্ড, বীরচুড়ামণি কী পাপে হারানু আমি তোমা হেন ধনে! অ্যাডিসন তাহার নাটকে পুত্ৰশোকে কোেটাকে তো ক্ষুদ্র মনুষ্যের ন্যায় রোদন করান নাই! স্পার্টার বীর-মাতারা পুত্রকে যুদ্ধে বিদায় দিবার সময় বলিতেন না, যে, এ কাল সমরে, নাহি চাহে প্ৰাণ মম পাঠাইতে তোমা বারংবার! তাহারা বলিতেন, ‘হয় জয় নয় মৃত্যু তোমাকে আলিঙ্গন করুক!’ রাণা লক্ষ্মণসিংহ স্বপ্ন দেখিয়াছিলেন যে, দ্বাদশ রাজপুত্র যুদ্ধে মরিলে জয়লাভ হইবে; তিনি র্তাহার দ্বাদশ পুত্ৰকেই যুদ্ধে মরিতে আদেশ করিয়াছিলেন। তিনি তো তখন রুদ্যমান পারিষদগণের দ্বারা বেষ্টিত হইয়া সভার মধ্যে কঁদিতে বসেন নাই। রাজস্থানের বীরদিগের সহিত, স্পার্টার বীর-মাতাদের সহিত তুলনা করিলে কল্পনা-চিত্রিত রাবণকে তো স্ত্রীলোকের অধম বলিয়া মনে হয়! কেহ কেহ বলেন, ‘অন্য কবি যাহা লিখিয়াছেন তাহাই যে মাইকেলকে লিখিতে হইবে এমন কি কিছু লেখাপড়া আছে?’ আমরা তাহার উত্তর দিতে চাহি না, কেবল এই কথা বলিতে চাহি যে সকল বিষয়েই তো একটি উচ্চ আদর্শ আছে, কবির চিত্র সেই আদর্শের কত নিকটে পৌঁছিয়াছে এই দেখিয়াই তো আমাদের কাব্য আলোচনা করিতে হইবে। স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক এই দুইটি কথা লইয়া কতকগুলি পাঠক অতিশয় গণ্ডগোল করিতেছেন। তঁহারা বলেন যাহা স্বাভাবিক তাহাই সুন্দর, তাহাঁই কবিতা; পুত্ৰশোকে রাবণকে না কঁাদাইলে অস্বাভাবিক হইত, সুতরাং কবিতার হানি হইত। দুঃখের বিষয়, তাহারা জানেন না যে, একজনের পক্ষে যাহা