পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্য S &ኃ(r প্রশস্ত রাজপথ নির্মিত হইল, দৃঢ় প্রাচীরে নগরসমূহ বেষ্টিত হইল— বাণিজ্য ও কৃষির যথেষ্ট উন্নতি হইল— নর্দাম্বলন্ডের লীেহ, সমার্সেটের শীষক, কর্নওয়ালের টিন-খনি আবিষ্কৃত হইল। হইয়া আসিতে লাগিল। রোমকেরা তাহদের সকল বিষয়ের স্বাধীনতা অপহরণ করিলতাহাদিগকে বিদ্যা শিখাইল- উন্নততর ধর্মে দীক্ষিত করিল- সভ্যতা ও অসভ্যতার প্রভেদ দেখাইয়া দিল— কিন্তু কী করিয়া স্বদেশ শাসন করিতে হয় তাহা শিখাইল না। সুশাসনে থাকাতে জেতুজাতির উপর তাহারা সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করিল- কখনো যে বিপদে পড়িতে হইবে সে কথা ভুলিয়া গেল, সুতরাং আত্মরক্ষণের ভাব অন্তহিত ও পরপ্রত্যাশার ভাব তাঁহাদের চরিত্রে বদ্ধমূল হইল। এইরূপ অস্বাস্থ্যকর সভ্যতা সে জাতির সর্বনাশ করিল। রোম্যকদের কর-ভারে নিপীড়িত হইয়াও তাহাদের একটি কথা বলিবার জো ছিল না। এক দল জমিদারের দল উখিত হইল- ও সেইসঙ্গে কৃষক দলের অধঃপতন হইল- কৃষকেরা জমিদারদের দাস হইয়া কাল যাপন করিতে লাগিল। এইরূপে রোমকদিগের অধিকৃত ব্রিটনেরা ভিতরে ভিতরে অসার হইয়া আসিল। রোমক-পুথি পড়িতে ও রোমক-ভাষায় কথা কহিতে শিখিয়াই তাহারা মনে করিল ভারি সভ্য হইয়া উঠিয়াছি ও স্বাধীন শেলট ও পিক্টদিগকে অসভ্য বলিয়া মনে মনে মহা ঘূণা করিতে লাগিল। প্রায় চারি শতাব্দী ইহাদের এইরূপ মোহময় সুখ-নিদ্রায় নিদ্রিত রাখিয়া সহসা একদিন । রোমকেরা তাহাদিগকে পরিত্যাগ করিল। গথেরা ইটালি আক্রমণ করিয়াছে, সুতরাং রোমকেরা নিজদেশ রক্ষা করিতে ব্রিটন ছাড়িয়া স্বদেশে চলিয়া গেল, আর ফিরিল না। অসভ্যতর শেলট, পিক্ট, স্কট প্রভৃতি সামুদ্রিক দাসুগণ চারি দিক হইতে কঁাকিয়া পড়িল— তখন সেই অসহায় সভ্য জাতিগণ কঁাপিতে কঁাপিতে জর্মনি হইতে অর্থ দিয়া সৈন্য ভাড়া করিয়া আনিল। হেঞ্জেস্ট ও হর্স তাহাদের সাহায্য করিতে সৈন্য লইয়া এবসফ্রিটে জাহাজ হইতে অবতীর্ণ হইল। ইহারাই অ্যাঙ্গলস (Angles)। ব্রিটনেরা এবং রোমকেরা ইহাদিগকে স্যাকসন বলিত। ŘTRICMST VERT3 rRN Seo Englisce Spræc TNorfís. English Speech || KGT TE RRCVS QVSri ATKÉ পর্যন্ত ওই যে সমুদ্র-সীমা দেখিতেছি, মেঘময়, কুজাঝটিকাচ্ছন্ন আদ্রুভূমি বিস্তৃত রহিয়াছে— বহু শতাব্দী পূর্বে উহা নিবিড় অরণ্যে আবৃত ছিল, সেই আরণ্য ভূভাগ অ্যাঙ্গলসদের বাসস্থান ছিল। এমন কদৰ্য স্থান আর নাই। বৃষ্টি ঝটিকা মেঘে সেই দেশের মস্তকের উপর কী যেন অভিশাপের অন্ধকার বিস্তার করিয়া রাখিয়াছে। দিবারাত্রি উন্মত্ত জলধি তীরভূমি আক্রমণ করিতেছে- এই ক্ষুভিত সমুদ্রের মুখে কোনো জাহাজের সহজে নিস্তার নাই। এই সমুদ্রতীরে, তুষার কুজীবটিকাচ্ছন্ন-ঝঞ্ঝাঝিটিকা-ক্ষুব্ধ অন্ধকার অরণ্যে ও জলায় শোণিত-পিপাসু সামুদ্রিক দাসুন্দল বাস করিত। এই মনুষ্যশিকারীরা জীবনকে তৃণ জ্ঞান করিত। সেই সময়কার রোমক কবি কহিয়াছেন, “তাহারা আমাদের শত্রু; সমুদয় শত্রু অপেক্ষা হিংস্র, এবং যেমন হিংস্র তেমনি ধূর্ত। সমুদ্র তাঁহাদের যুদ্ধ-শিক্ষালয়, ঝটিকা তাহাদের বন্ধু; এই সমুদ্র-ব্যাঘেরা পৃথিবী লুণ্ঠন করিবার জন্যই আছে।” তাহারা আপনারাই গাহিত, ‘ঝটিকা-বেগ আমাদের দাঁড়ের সহায়তা করেআকাশের নিশ্বাসস্বরূপ বজের গর্জন আমাদের হানি করিতে পারে না- ঝঙ্কা আমাদের ভৃত্যআমরা যেখানে যাইতে ইচ্ছা করি সে আমাদের সেইখানেই বহন করিয়া লইয়া যায়।” স্ত্রীলোক এবং দাসদের উপর ভূমি কর্ষণ ও পশুপালনের ভার দিয়া ইহারা সমুদ্র ভ্রমণ, যুদ্ধ ও দেশব্লুণ্ঠন করিতে যাইত। রক্তপাত করাই তাহারা মুক্ত স্বাধীন জাতির কার্য বলিয়া জানিত- স্বাধীনতা ও মুক্ত ভাবের ইহাই তাঁহাদের আদর্শ ছিল। নরহত্যা ও রক্তপাত তাহাদের ব্যবসায়, ব্যবসায় কেন, তাই তাঁহাদের আমোদ ছিল। Ragnar Lodbrog নামক গাথক গাহিতেছে-“আসি দিয়া আমরা তাহাদিগকে কাটিয়া ফেলিলাম,- আমার সুন্দরী পত্নীকে যখন প্রথম আমার পার্থে শয্যায় বসাইলাম তখন আমার যেরূপ আমোদ হইয়াছিল, সেই সময়েও কি আমার তেমনি আমোদ হয় নাই?” যখন এজিল (Egil) ডেনমার্কবাসী জার্লের কন্যার পার্শ্বে উপবেশন করিল, তখন সেই