পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Հ ԳԵ রবীন্দ্র-রচনাবলী । হইতে বঞ্চিত হইয়া দূরে বসিয়া আপন উপবাসী শীর্ণ প্ৰতিভাকে নীরস কর্তব্যের কঠিন খাদ্যখণ্ডে কোনোমতে পালন করিয়া তুলিতে থাকেন। সামান্য বাধা সে লঙ্ঘন করিতে পারে না, সামান্য আঘাতে সে মুমূর্ষ হইয়া পড়ে, দেশব্যাপী নিত্যপ্রবাহিত গতি শ্ৰীতি আনন্দ হইতে রসাকর্ষণ করিয়া সে আপনাকে সতত সতেজ রাখিতে পারে না। অল্পকালের মধ্যেই আপনার ভিতরকার সমস্ত খাদ্য নিঃশেষ করিয়া রিক্তবাল রিক্তপ্রাণ হইয়া পড়ে। বাহিরের প্রাণ র্তাহাকে যথেষ্ট প্রাণ ( नीं । কিন্তু যথার্থ সাহিত্য যেমন যথার্থ জাতীয় ঐক্যের ফল তেমনি জাতীয় ঐক্য সাধনের প্রধানতম উপায় সাহিত্য। পরস্পর পরস্পরকে পরিপুষ্ট করিয়া তুলে। যাহা অনুভব করিতেছি। তাহা প্ৰকাশ করিতে পারিব, যাহা শিক্ষা করিতেছি, তাহা রক্ষা করিতে পারিব, যাহা লাভ করিতেছি তাহা বিতরণ করিতে পারিব এমন একটা ক্ষমতার অভু্যদয় হইলে তাহা সমস্ত জাতির উল্লাসের কারণ হয়। আমাদের বঙ্গদেশে সেই বিরাট ক্ষমতা শিশু আকারে জন্মগ্রহণ করিয়াছে কিন্তু এখনো সেই জাতি নাই যে উল্লাস প্ৰকাশ করিবে। তাহারই অপেক্ষা করিয়া আমরা পথ চাহিয়া আছি। যাহারা বাংলার সদ্যোজাত সাহিত্যের শিয়রে জাগরণপূর্বক নিস্তব্ধ। রজনীর প্রহর গণিতেছেন। তঁহারা কোনো উৎসাহ কোনো পুরস্কার না পাইতে পারেন। কিন্তু তঁহাদের অস্তরে এক সুমহৎ আশা জাগ্ৰত দেবতার ন্যায় সর্বদা বরাভয় দান করিতেছে, তাহারা একান্ত বিশ্বাস করিতেছেন যে, এই শিশু অমর হইবে এবং জন্মভূমিকে যদি কেহ আমরতা দান করিতে পারে তো সে এই সাহিত্য পরিবে। अनान् KO S Soo ) মেয়েলি ব্ৰত সাধনা পত্রিকা সম্পাদনকালে আমি ছেলে ভুলাইবার ছড়া এবং মেয়েলি ব্ৰত, সংগ্রহ ও প্রকাশ করিতে প্ৰবৃত্ত ছিলাম। ব্ৰতকথা সংগ্রহে অঘোরবাবু আমার প্রধান সহায় ছিলেন, সেজন্য আমি তাহার নিকট কৃতজ্ঞ আছি। অনেকের নিকট এই সকল ব্ৰতকথা ও ছড়া নিতান্ত তুচ্ছ ও হাস্যকর মনে হয়। র্তাহারা গভীর প্রকৃতির লোক এবং এরাপ দুঃসহ গান্তীর্ষ বর্তমান কালে বঙ্গসমাজে অতিশয় সুলভ হইয়াছে। বালকদিগের এমন একটি বয়স আসে যখন তাহারা বাল্যসম্পৰ্কীয় সকল প্রকার বিষয়কেই অবজ্ঞার চক্ষে দেখে, অথচ পরিণত বয়সোচিত কাৰ্যসকলেও তাঁহাদের পক্ষে স্বাভাবিক হয় না। তখন তাহারা সর্বদা ভয়ে ভয়ে থাকে, পাছে কোনো সূত্রে কেহ তাহাদিগকে বালক মনে করে। বঙ্গসমাজের গভীর-সম্প্রদায়েরও সেই দুৰ্গতি উপস্থিত হইয়াছে। তাহারা বঙ্গভাষা, বঙ্গসাহিত্য, ” বঙ্গদেশ-প্রচলিত সর্বপ্রকার ব্যাপারের প্রতি অবজ্ঞামিশ্ৰিত কৃপাকটাক্ষপাত করিয়া আপন প্রকৃতির অতলস্পর্শ গভীর্য এবং পরিণতির প্রমাণ দিতে প্ৰয়াস পাইয়া থাকেন। অথচ তাহারা আপন অভ্ৰভেদী মহিমার উপযোগী আর যে কিছু মহৎ কীর্তি রাখিয়া যাইবেন, এমন কোনো লক্ষণও যুরোপীয় পণ্ডিতগণ দর্শন বিজ্ঞান ইতিহাসে যথেষ্ট মনোযোগ করিয়া থাকেন এবং ছড়া রূপকথা প্রভৃতি সংগ্রহেও সংকোচ বোধ করেন না। তঁহাদের এ আশঙ্কা নাই, পাছে লোকসাধারণের নিকট তাঁহাদের মর্যাদা নষ্ট হয়। প্রথমত, তাহারা জানেন যে, যে-সকল কথা ও গাথা সমাজের অন্তঃপুরের মধ্যে চিরকাল স্থান পাইয়া আসিয়াছে, তাহারা দর্শন, বিজ্ঞান ও