পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○○○ রবীন্দ্ররচনাবলী রুক্মিণীকান্ত নাগ নামক একটি বাঙালি ছাত্র কিছুদিন ইটালিতে শিল্প অধ্যয়নে নিযুক্ত থাকিয়া যথেষ্ট খ্যাতি ও উন্নতিলাভ করিতেছিলেন। কিন্তু অর্থাভাবে অনাহারে দুরারোগ্য রোগে মৃত্যুগ্রাসে পতিত হইয়া তাহার সমস্ত আশা অকালে অবসান হয়। আমাদের এই শিল্পদরিদ্র দেশের পক্ষে এ মৃত্যু যেমন লজ্জাজনক তেমনি শোকাবহ। অনেকে হয়তো জানেন না, শশিভূষণ হেশ নামক কলিকাতা আর্ট-স্কুলের একটি বিশেষ ক্ষমতাশালী ছাত্র য়ুরোপে শিল্প অধ্যয়নে নিযুক্ত আছেন। মুক্তাগাছার মহারাজা সূৰ্যকান্ত আচার্য চৌধুরী তাহার সমস্ত খরচ জোগাইতেছেন। সেজন্য বঙ্গদেশ তাহার নিকট কৃতজ্ঞ! ক্ষাত্রেও য়ুরোপে শিল্পশিক্ষালাভের অধিকারী- অসামান্য ক্ষমতা প্রকাশের দ্বারা তাহার প্রমাণ দিয়াছেন। এক্ষণে দেশের লোক যদি আপন কর্তব্য পালন করে তবে বালকের উন্মুখী প্রতিভা পূর্ণপরিণতি লাভ করিয়া দেশের লোককে ধন্য, ভারতবন্ধু বার্ডবুডের উৎসাহবাক্যকে সার্থক এবং চিজহলম প্রমুখ অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানগণের বিদ্বেষবিষাক্ত অবজ্ঞাকে অনন্তকালের নিকট शिक्षकूट कब्रिशा ब्रांशिव। छाब्रउँठौ । আষাঢ় ১৩০৫ মন্দিরাভিমুখে ক্ষাত্রে নামক বোম্বাই শিল্পবিদ্যালয়ের একটি দরিদ্র ছাত্র প্যারিস-প্লাস্টারের এক নারীমূর্তি রচনা করিয়াছেন; তাহার নাম দিয়াছেন মন্দিরাভিমুখে (To the Temple)। এই ব্যাপারটুকু লইয়া ইংরাজিপত্রে একটি ছোটোখাটাে রকমের দ্বন্দ্বযুদ্ধ হইয়া গেছে। স্যর জর্জ বার্ডবুড় সাহেবের নিকট এই মূর্তির দুখানি ফোটােগ্রাফ পাঠানো হয়। ফোটােগ্রাফ দেখিয়া তিনি তঁহার ‘জার্নাল অফ ইন্ডিয়ান আর্টস অ্যান্ড ইন্ডস্ট্রিজ’ নামক শিল্পবিষয়ক পত্রে মুক্তকণ্ঠে প্ৰশংসা করিয়া এক সমালোচনা লিখিয়াছিলেন। তাহাতে তিনি মূর্তিটিকে প্রসিদ্ধ প্রাচীন গ্ৰীসীয় মূর্তি-সকলের সহিত তুলনীয় বলিয়া স্বীকার করিয়াছিলেন। হয়তো সহৃদয় বার্ডবুড় সাহেব তাহার ভারতবৎসলতা ও ভারতীয় শিল্পকলার ভাবী উন্নতি কল্পনার আবেগদ্বারা নীত হইয়া এই মূর্তি সম্বন্ধে কিছু অধিক বলিয়াছিলেন, সে কথা বিচার করা আমাদের সাধ্য নহে। কিন্তু দুৰ্ভাগ্যক্রমে তিনি একটি ভুল করিয়াছিলেন। ফোটােগ্রাফ হইতে বুঝিতে পারেন নাই যে মূর্তিটি খড়ি দিয়া গঠিত। তিনি অনুমান করিয়াছিলেন ইহা পাথরের মূর্তি। অবশ্য উপকরণের পার্থক্যে শিল্পদ্রব্যের গৌরবের তারতম্য ঘটে এবং সেইজন্য খড়ির মূর্তির সহিত প্রাচীন পাথরের মূর্তির তুলনা করা হয়তো সংগত হয় নাই। এই ছিদ্রটি অবলম্বন করিয়া কোনো অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান লেখক ‘পায়োনিয়র’ কাগজে । বার্তৃবুডের সমালোচনার বিরুদ্ধে এক সুতীব্র বিদুপ-বিষাক্ত পত্র প্রকাশ করিয়াছিলেন এবং এইরূপে একটি মহারাষ্ট্ৰী ছাত্র -রচিত খড়ির মূর্তি লইয়া ইংরাজি সাময়িকপত্রের রঙ্গভূমিতে দুই ইংরাজ বোদ্ধার মধ্যে একটি ছোটোখাটো রকম রক্তপাত হইয়া গেছে। আমরা যে এ স্থলে মধ্যস্থ হইয়া বিচারে অবতীর্ণ হুইব এমন ভরসা রাখি না। আমরা একে আনাড়ি, তাহাতে পক্ষপাতী- আমরা যদি আমাদের স্বদেশীয় নবীন শিল্পীর রচনাকে কিছু বেশি ক্ষুব্ধ হইবেন না। " - অপরপক্ষে শিল্প সম্বন্ধে আমাদের মতো দীনহীন সম্প্রদায় আপাতত অল্পেই সন্তুষ্ট হইবে।