পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 OV রবীন্দ্র-রচনাবলী হয়, ক্ৰমে ক্ৰমে কাজ করিতে হয়, প্রত্যহ সংবাদপত্রের দৈনিক বাহবাই উদ্যমের একমাত্র জীবনধারণের উপায় নহে। অপর পক্ষে যাহারা agitation করিয়া কাজ করিতে চান তঁহাদের কাজ কত সহজ, কত সামান্য! তাহদের কাজ দেশের কোনো অভাব বা হানি দেখিলেই গবর্মেন্টকে তিরস্কার করা। অত্যন্ত সুখের কাজ! পারকে দায়ী করার চেয়ে আর সুখের কী হইতে পারে। পরকে কাজ করিতে স্মরণ করাইয়া দেওয়াই আমার একমাত্র কাজ, সে কাজ। সাধন করা আমার কাজ নহে। ইহার অপেক্ষা আরাম আর কী আছে! কিছুই করিলাম না, কেবল আরএকজনকে অনুরোধ করিলাম মাত্র, অথচ মনে মনে ভ্ৰম হইল যেন কাজটাই করিয়া ফেলিলাম। তাহার পরে আবার চারি দিকে একটা কোলাহল উঠিল, নামটা ব্যাপ্ত হইল।। যত অল্পে যতটা বেশি হইতে পারে তাহা হইল, তাহার উপরে আবার মনে মনে আত্মপ্ৰসাদ লাভ করিলাম যে, দেশের জন্য আমি কী না করিলাম ? কেবল মুখের কথাতেই এতটা যদি হয় তবে আর কাজ করিবার দরকার কী? একটা ছােটাে রকমের দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক : নাইট সাহেব যখন বোম্বাইয়ের সংবাদপত্রের সম্পাদক ছিলেন তখন তিনি সর্বদা দেশীয়দের পক্ষ সমর্থন করিতেন, অবশেষে যখন তিনি অবসর লাইলেন, তখন বোম্বাইবাসীরা কৃতজ্ঞতা প্ৰকাশ করিতে অগ্রসর হইল। কিন্তু কী করে, তাহারা তো আমাদের মতো এত কথা কহিতে পারে না কাজেই তাহাদিগকে কাজ করিতেই হইল- তাহাদিগকে টাকা দিতে হইল। এদিকে দেখো, রিয়াক সাহেব আমাদের অসময়ে অনেক উপকার করিয়াছেন- স্বজাতি সমাজ উপেক্ষা এতটা করিতে কে পারে? ইলবার্ট বিলের জন্য ও সুরেন্দ্ৰনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের জন্য তিনি কতটা লড়িয়াছিলেন তাহা সকলেরই মনে আছে। হইলেন, তখন কৃতজ্ঞ বাঙালিরা কী করিলেন ? বাচস্পতি মহাশয়েরা সভা ডাকিয়া দু-চারিটা মিষ্ট মুখের কথা বলিয়া ও মিষ্টান্ন খাওয়াইয়া এমনি পরিতৃপ্ত হইলেন যে, আর আর কিছু করিবার আবশ্যক জ্ঞান করিলেন না। সেই জিভের খাটুনিটা আরও বাড়াইবার জন্য ছ লাখ টাকা সংগ্ৰহ হইতেছে। আমি বলি, এই টাকা খরচ করিয়া বাঙালিদের জিজ্ঞের কাজ এক কমে যদি, তবে এতটা অর্থব্যয় সাথক হয়! যাহারা যথার্থ দেশহিতৈষী তাহারা দেশের অল্প উপকারকে নিজের অযোগ্য বলিয়া ঘূণা করেন না। তাহারা ইহা নিশ্চয় জানেন যে যদি হাঙ্গাম করা উদ্দেশ্য না হয়, দেশের উপকার করাই বাস্তবিক উদ্দেশ্য হয়, তবে অল্পে অল্পে একটু একটু করিয়া কাজ করিতে হয়, তাহাতে এক রাত্রের মধ্যে যশস্বী হওয়া যায় না বটে, মোটা মোটা কথা বলিবার সুবিধা হয় না বটে। কিন্তু দেশের উপকার হয়। র্তাহারা ইহা জানেন যে, মস্ত মস্ত উদ্দেশ্য জাহির করিলে দেশের যত না কাজ হয়, ছোটো ছোটো কাজ করিলে তাহার চেয়ে বেশি হয়। ন্যাশনাল ফান্ড সংগ্ৰহ করিয়া একেবারে সমস্ত ভারতবর্ষের উপকার করিব এতটা সংকল্প না করিয়া যদি কেবল বাংলা দেশের জন্য ফন্ড সংগ্ৰহ করা হয় ও বাংলা দেশের অভাবের প্রতিই দৃষ্টিপাত করা হয়, তাহা হইলে তাহা সহজসাধ্য হয় ও সম্ভবপর হয়। শুনিতে তেমন ভালো হয় না বটে, কিন্তু কাজের হয়। যদি ভারতবর্ষের প্রত্যেক বিভাগ নিজের নিজের অভাব মোচন ও উন্নতি সাধনের জন্য ধন সঞ্চয় করিয়া রাখেন ও বিশেষ আবশ্যকের সময় সকলে একত্রে মিলিয়া যদি দেশহিতকর কাজে প্রবৃত্ত হন। তবে তাহাতেই বাস্তবিক উপকার হইবে। নহিলে মস্ত একটা নাম লইয়া বৃহৎ কতকগুলা জুলার বােলা গইয়া নাশনাল ফন্ড নামক একটা নড়াচড়াইন অতি বৃহৎ জড়পদার্থ প্রস্তুত Kr | উপসংহারে বলিতেছি কেবলমাত্র Political agitation লইয়া থাকিলে আমরা আরও অকেজো হইয়া যাইব, আমরা নিজের দায় পরের ঘাড়ে চাপাইতে শিখিব- দুটাে কথা বলিয়াই আপনাকে খালাস মনে করিব। একে সেই দিকেই আমাদের সহজ গতি, তাহার উপর আবার