পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

नमाङ्ग 牌 8 SO তাহদের রোগীর জন্য অনন্ত অগ্নিীদাহ প্রেস্ক্রিপশন করিয়া রাখিয়াছে, তাহদের আর অল্পেীস্বদের কী করিবে? Similia Similibus curanturi, অর্থাৎ শঠে শাঠ্যাৎ সমাচারেৎ, ইহা হােমিওপ্যাথিক বৈদ্যদের মত। কিন্তু আমরা তো খুনী জাত নহি, এবং ততদূর সভ্য হইয়া উঠিতে আমরা চাহিও না; মুষ্ঠিযোগ চিকিৎসাশাস্ত্ৰে আমাদের কিছুমাত্র বুৎপত্তি নাই, এবং সে চিকিৎসা রোগীর পক্ষে আশুফলপ্ৰদ হইলেও চিকিৎসকের পক্ষে পরিণামে শুভকরী নহে। সুতরাং আমাদিগকে অন্য কোনো সহজ উপায় অবলম্বন করিতে হইবে। ইংরাজের অত্যাচার নিবারণের উদ্দেশ্যে আমরা দেশীয় লোকদিগকে প্ৰাণপণে সাহায্য করিব। দেশের লোকের জন্য কেবল জিহবা আন্দোলন নহে, যথার্থ স্বাৰ্থত্যাগ করিতে শিখিব। বিদেশীয়ের হন্তে দেশের লোকের বিপদ নিজের অপমান ও নিজের বিপদ বলিয়া জ্ঞান করিব। নহিলে একে, ইংরাজেরা আমাদের বিধাতৃপুরুষ, মফস্বলে তাহাদের অসীম প্রভাব, তাহারা সুশিক্ষিত সতর্ক, তাহাতে আবার ইংরাজ ম্যাজিষ্ট্রেট ও ইংরাজ জুরি তাহাদের বিচারক; কেবল তাঁহাই নয়, তাহাদের স্বজাতি সমস্ত অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান তাহাদের সহায়- এমন স্থলে একজন ভীত ত্ৰস্ত অশিক্ষিত স্বদেশী-সহায়বর্জিত দরিদ্র কৃষ্ণকায়ের আশাउठनों (कथी ! আমাদের দেশের বাগীশবৰ্গ বলেন, agitate করো, অর্থাৎ বাকযন্ত্রটাকে এক মুহূর্ত বিশ্রাম দিয়ে না। ইলবার্ট বিল ও লোকল সেলফ। গবর্মেন্ট সম্বন্ধে পাড়ায় পাড়ায় বক্তৃতা করিয়া বেড়াও। তাহার একটা ফল এই হইবে যে, লোকেদের মধ্যে পোলিটিকল এডুকেশন বিস্তৃত। হইবে। স্বদেশের হিত কাহাকে বলে লোকে তাহাঁই শিখেবে। ইত্যাদি। কিন্তু ইন্দ্ৰদেবের ন্যায় আকাশের মেঘের মধ্যে থাকিয়া মর্ত্যবাসীদের পরম উপকার করিবার জন্য কনস্টিাটু্যাশনাল হিস্ট্রিপড়া ইংরাজি বক্তৃতায় শিলাবৃষ্টি বর্ষণ করিয়া তাহাদের মাথা ভাঙিয়া দিলেও তাঁহাদের মস্তিষ্কের মধ্যে “পোলিটিকল এডুকেশন” প্ৰবেশ করে কি না সন্দেহ। আমি বোধ করি এ-সকল শিক্ষা ঘরের ভিতর হইতে হয়, অত্যন্ত পরিপাক লাউ-কুমড়ার মতন চালের উপর হইতে গড়াইয়া পড়ে না! যতবার মফস্বলে একজন ইংরাজ একজন দেশীয়ের প্রতি অত্যাচার করে, যতবার সেই দেশীয়ের পরাভব হয়, যতবার সে অদৃষ্টের মুখ চাহিয়া সেই অত্যাচার ও পরাভব নীরবে সহ্য করিয়া যায়, যতবার সে নিজেকে সর্বতোভাবে অসহায় বলিয়া অনুভব করে, ততবারই যে আমাদের দেশ দাসত্বের গহবরে এক-পা এক-পা করিয়া আরও নামিতে থাকে। কেবল কতকগুলা মুখের কথায় তুমি তাহাকে আত্মমর্যাদা শিক্ষা দিবে কী করিয়া! যাহার গৃহের সম্রাম প্রতিদিন নষ্ট হইতেছে, তুমি তাহাকে লোকল সেলফ। গবর্মেন্টের মাচার উপর চড়াইয়া কী আর রাজা করিবে: বলো! ঘরে যাহার হাঁড়ি চড়ে না, তুমি তাহার ছবির হাতে একটা টাকার তোড়া আঁকিয়া তাহার ক্ষুধার যন্ত্রণা কীরূপে নিবারণ করিবে! যাহারা নিজের সন্ত্রম রক্ষার বিষয়ে হতাশ্বাস হইয়া শাসনভার দিতে যাওয়া নিষ্ঠুর বিদ্রুপ বলিয়া বোধ হয়। শিক্ষা দিতে চাও তো এক কাজ করে; একবার একজন ইংরাজের হাত হইতে একজন দেশীয়কে ত্ৰাণ করো, একবার সে বুঝিতে পারুক ইংরাজ ও অদৃষ্ট একই ব্যক্তি নহে, একবার সে হৃদয়ের মধ্যে জয়গর্ব অনুভব করুক, একবার তাহার হৃদয়ের ন্যায্য প্রতিশোধস্পৃহা চরিতার্থ হউক। তখন আমাদের দেশের লোকের আত্মমর্যাদাজ্ঞান বাস্তবিক হৃদয়ের মধ্যে অকুরিত হইতে থাকিবে। সে জ্ঞান যদি হৃদয়ের মধ্যে বদ্ধমূল না হয় তবে জাতির উন্নতি কোথায়!! ইংরাজেরা যে আমাদের পশুর ন্যায় জ্ঞান করে ও তাহ ব্যবহারে ক্ৰমাগত প্ৰকাশ করে, ড্যাম নিগর বলিয়া সম্বোধন করে ও কটাক্ষপাতে কঁপাইয়া তোলে, ইহার যে কুফল তাহার প্রতিবিধান কিসে হইবে। Agitate করিয়া দরখাস্ত করিয়া একটা সুবিধাজনক আইন পাস করাইয়া যেটুকু লাভ, তাহাতে এ লোকসান পূরণ করিতে পারে না। ইংরাজের প্রতিদিনকার ব্যবহারগত যথেচ্ছাচারিতা দমন করিয়া যখন দেশের লোকেরা আপনাদিগকে কতকটা তাহদের সমকক্ষ জ্ঞান করিবে, তখনই আমাদের যথার্থ উন্নতি আরম্ভ