পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

平平研 8や。 শুনিয়াই আপনাদিগকে অধিকারী জ্ঞান করিতেছি। শিক্ষা করিবার পরিশ্রমটুকুও স্বীকার করিতে প্ৰস্তুত নাহি। যদি গবর্নমেন্ট এমন একটা নিয়মজারী করিতেন যে, আমাদের দেশের শাসনতন্ত্র এবং Representative Government-এর সম্বন্ধে একটা বিশেষ পরীক্ষায় আপনার সম্পূর্ণ জ্ঞান প্ৰকাশ না করিলে সে বিষয়ে কাহাকেও কথা কহিতে দিবেন না, তাহা হইলে বোধ করি কথাবার্তা এক প্রকার বন্ধ হয়। আমাদের চরিত্রে আমাদের জীবনে আমরা যোগ্যতা লাভ করিব না, পরিশ্রম করিয়া কতকগুলি fact শিক্ষা তাহাও করিব না। দেশের যে-সকল অভাব মোচন অধিক পরিমাণে আমাদের নিজের সাধ্যায়ত্ত তাহাতেও হস্তক্ষেপ করিব না, অথচ কোন মুখে বলিব, আমরা আন্তরিক নিষ্ঠার সহিত Political agitation-a (rooto? এ-সকল agitation-এর উপর যে সাধারণ লোকের বিশেষ বিশ্বাস আছে তাহাও দেখিতে পাই না। এ-সকল বিষয়ে কেহ ঝাঁট করিয়া টাকা দিতে চাহে না, বলে- ও কতদিন টিকিবো! আর তাহা ছাড়া আমাদের দেশে এক প্রবাদ প্রচলিত আছে— কোম্পানিকা মাল দরিয়ামে ডাল! সাধারণ কর্যে টাকা দিয়া লোকের বিশ্বাস হয় না যে, সে টাকার যথোপযুক্ত সদব্যয় হইবে। মনে করে পাঁচজনের টাকা গোলেমালে দশজনের ট্যাকে অদৃশ্য হইয়া যাইবে অথবা এমন এলোমেলোভাবে খরচ হইবে যে, সমস্তটাই ন দেবায় ন ধর্মায় হইবে। আমরা বলি ভাগের মা গঙ্গা পায় না” অর্থাৎ মাকে গঙ্গাযাত্রা করানো এক বিষম লেঠা, নিতান্ত কেহ না থাকিলে কাজেই কায়ক্লেশে নিজেকে ভার লাইতে হয়। কিন্তু যখন আরও পাঁচটা ভাই আছে, তখন আর কে ওঠে! আমরা আমাদের জাতভাইকে এমন চিনি যে কাহারো বিশ্বাস হয় না যে, সাধারণের কাজ সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হইতে পারে। এমন-কি, বাণিজ্যে যাহাতে সকলেরই স্বার্থ আছে তাহাতেও আমরা পাঁচজনে মিলিয়া লাগিতে পারি না। একে তো পরস্পরকে অবিশ্বাস করিব অথচ নিজেও কাজ করিব না। কাহারো সততা এবং সত্যনিষ্ঠার উপর বিশ্বাস নাই। গোড়াতেই মনে হয় সমস্তটা ফাকি একটা হুজুক মাত্র। ইহার কারণ আমাদের জাতীয় চরিত্রের মধ্যে নিহিত। আমরা সত্যপরায়ণ নহি সুতরাং কোনো কাজেই পরস্পরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করিতে পারি না। বিশ্বাস ব্যতীত কোনো কাজই হয় না, আবার বিশ্বাসযোগ্য না হইলে বিশ্বাস করা যায় না। অতএব গোড়ায় দরকার চরিত্র গঠন। জাতির মধ্যে উদ্যম, সত্যপরতা, আত্মনির্ভর, সৎসাহস না থাকিলে অঞ্জলিবদ্ধ করিয়া রেপ্রেজেস্টেটিব গবর্নমেন্ট ভিক্ষা চাহিতে বসা বিড়ম্বনা। আমার মনে হয়, আমাদের দেশের ১. লেখক আমাদের এখনকার পলিটিক্যাল আন্দোলন যেরূপ আসার মনে করেন একটু ভাবিয়া দেখিলেই দেখিবেন তাহা নহে। এই আন্দোলনের মধ্যেই- কাজ করিবার একটি ইচ্ছা জাতীয় মহত্ত্ব লাভের দিকে অগ্রসর হইবার একটি উদ্যম প্রকাশ পাইতেছে, তবে লেখক একদিনেই যদি আমাদের শত শত বৎসরের অবনতির বিনাশ দেখিতে চান তাহা কী করিয়া পাইবেন ? লেখক বলিয়াছেন, “আমাদের মধ্যে অতি অল্প লোকই আছেন शंशष्ट्रा WTO's Steyrir akr Representative Government-ga agar নিয়ম এবং আমাদের দেশে বর্তমানকালে তাহার উপযোগিতা ও সম্ভাবনা সম্বন্ধে বিশেষ কিছু অবগত আছেন অথবা প্রকৃত পরিশ্রম স্বীকার করিয়া তদবিষয়ে কিছু জানিতে অভিলাষী আছেন। অবশ্য দেশের অধিকাংশ লোক যদি যোগ্য হইত। তাহা হইলে তো সমস্ত গােল চুকিয়া যাইত, এরূপ পলিটিকাল আন্দোলনেরই বা তাহা হইলে আবশ্যক কোথা ? কিন্তু আমাদের দেশ কোন ছার কথা যুরোপের কোনাে দেশেই কি অধিকাংশ লোকে রাজ্যশাসনতন্ত্রের মর্মগত নিয়ম বিচার করিয়া কাজ করে? এরূপ স্থলে সর্বত্রই নেতাগণ প্রধান, তাহাদের প্রাণগত চেষ্টা, মহত্ত্বই জাতীয় উন্নতির কারণ। আমাদিগের পলিটিক্যাল নেতাগণের সকলে না হউন, যখন অনেকেই তাহদের উদ্দেশ্যসাধনে প্ৰাণগত চেষ্টা করিতেছেন, তখন কি এই আন্দোলনকে আমরা সারশূন্য বলিতে পারি? চরিত্র মাহাত্ম্য নহিলে কোনো উন্নতি হয় না। সত্য, কিন্তু ইহার দিকে আমাদের যে লক্ষ পড়িয়ছে- তাহার উক্তরােপ অনেক প্রমাণ দেখা যাইতেছে, তাহা ছাড়া লেখকের বর্তমান প্ৰবন্ধই তাহার একটি প্রমাণ।--ভারতী-সম্পাদক।