পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8१० রবীন্দ্র-রচনাবলী লোকদের ডাকিয়া ক্রমাগত এই কথা বলা আবশ্যক যে, ইংরেজ গবর্নমেন্ট প্রসাদে সুশাসন প্রভৃতি যে-সকল ভালো জিনিস পাইয়াছি, কোনো জাতি সেগুলি পড়িয়া পায় নাই, তাহার জন্য বিস্তর যোঝাযুঝি, সংযম, আত্মশিক্ষা, ত্যাগ স্বীকার করিতে হইয়াছে। আমরা যে-সকল অধিকার অনায়াসে অযাচিতভাবে পাইয়াছি, তাহার জন্য গবর্নমেন্টকে ধন্যবাদ দিয়া প্ৰাণপণে যেন তাহার যোগ্য হইবার চেষ্টা করি- কারণ পড়িয়া পাওয়াকে পাওয়া বলে না, কেননা তাহার স্থায়িত্ব নাই, তাহাতে কেবল নিশ্চিন্ত বা নিশ্চেষ্টভাবে সুখে থাকা যায় মাত্র কিন্তু তাহাতে জাতীয় চরিত্রের বিশেষ উন্নতি হয় না। আমরা যে সুখ পাইতেছি আমরা তাহার যোগ্য নহি, আমরা যে দুঃখ পাইতেছি সে কেবল আমাদের নিজের দোষে। এ কথা শুনিলে লোকে অত্যন্ত উল্লসিত হইয়া উঠিবে না- এ কথা কেবলমাত্র জয়ধ্বজায় লিখিয়া উড়াইয়া বেড়াইবার কথা নহে, এ কথার অর্থ নিজে কাজ করো, ধৈর্যসহকারে শিক্ষা লাভ করো, বিনয়ের সহিত গভীর লজ্জার সহিত আপনার দোষ ও অযোগ্যতা স্বীকার করিয়া তাহা আপন যত্নে দূর করিবার চেষ্টা করো, যাঁহাদের কাছে সহস্ৰ বিষয়ে ঋণী আছ তাহদের ঋণ স্বীকার করো, সে ঋণ ধীরে ধীরে শোধ করো। আমাদের লোকের একটি যে দোষ আছে ভিক্ষাকে আমরা হক মনে করি, পরের উপার্জনের উপর অতি অসংকোচে আপনার ভাগ বসাই, আবার তাহাতে সামান্য ত্রুটি হইলে চােখ রাঙইয়া উঠি এই প্রকৃতিগত অভ্যাস যেন ত্যাগ করি। কেবল অলসভাবে পড়িয়া পড়িয়া পরের কর্তব্য সমালোচনা করিয়া নিজের কর্তব্য ভুলিয়া না যাই। গবর্নমেন্টের আহ্বাদে ছেলেটি'র মতো কেবল সকুল বিষয়েই আবদার করিব এবং নিজের দোষ স্মরণ করাইয়া দিলেই অমনি ফুলিয়া দাপাইয়া কঁদিয়া-কাটিয়া মাথা খুড়িয়া কুরুক্ষেত্ৰ করিয়া দিব এই ভাবটি ত্যাগ করি। আজকাল যে কাণ্ড চলিতেছে তাহাতে ইহার উল্টা ভাবটাই আমাদের মনে বদ্ধমূল হইয়া যাইতেছে যে, গবর্নমেন্ট সহস্ৰ বিষয়ে অপরাধী এবং আমাদের কোনো অপরাধ নাই- অলস এবং অহংকারী লোকদের মন হইতে এ ভাবটা দূর করাই একান্ত চেষ্টাসাধ্য, এ ভাব মুদ্রিত করিবার জন্য বিশেষ আয়োজনের অপেক্ষা করে না। ভারতী ও বালক छाया ९३ ग्राधिन $२३७