পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8tr রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী বেড়াইতেন। তাঁহাদের বেতন ছিল, ওই কাজেই তাঁহারা নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু ইহার একটু কুফল এই হয় যে, স্বাৰ্থ-সাধন উদ্দেশে বা ভুল বুঝিয়া ইনস্পেক্টরগণ যথার্থ ভদ্রলোকদের প্রতিও উৎপীড়ন করিতে পারেন। শুনা যায় তাহারা সেইরাপ অত্যাচার আরম্ভ করিয়াছিলেন, এই নিমিত্ত বৌদ্ধদলেরা খেপিয়া এমন পুলিস ঠেঙাইতে আরম্ভ করিয়াছিল যে, কনস্টেবলগণ ত্রাহি ত্ৰাহি ডাক ছাড়িয়াছিল। কিন্তু বিদ্রোহী-দল বেশি দিন টিকিতে পারে নাই। অবশেষে তাহারা নির্বাসিত হইয়াছিল। আজকাল এরূপ পুলিসের পদ্ধতি নাই। সুতরাং সাধারণের উপকারার্থে সকলকেই নিজের নিজের দরোয়ানকে মাঝে মাঝে পুলিসের কাজে নিযুক্ত করা উচিত। দেশে এত শত প্রকার সিঁদেল চোর আছে, রাত্ৰিযোগে এমন পা টিপিয়া তাহারা গৃহে প্ৰবেশ করে যে, এরাপ না করিলে তাহদের শাসন হইবার সম্ভাবনা নাই। আমার দরোয়ানটা রোগা হউক, যাহা হউক, তাহাকে এইরূপ অনরারি পুলিস কনস্টেবলের কাজে নিযুক্ত করিয়াছি। অনেক সময়ে লড়াই করিয়া সে বেচারি পারিয়া উঠে না, বলবান দাসুদের কােছ হইতে লাঠি খাইয়া অনেকবার অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছে, কিন্তু তথাপি তাহার উদ্যম ভঙ্গ হয় নাই। ভারতী 9 S Srtr জীবন ও বর্ণমালা আমাদের পণ্ডিত মহাশয়ের এমনি খরদৃষ্টি (বলা বাহুল্য, ‘খরদৃষ্টি” ষষ্ঠী তৎপুরুষ নাহে) যে র্তাহার দৃষ্টির সম্মুখে একটি তৃণ পর্যন্তও এড়ায় না। তিনি সকলেরই মধ্যে গৃঢ় অর্থ দেখিতে পান। যে যেমন ভাবেই কথা কহুক-না-কেন, তিনি তাহার মধ্য হইতে এমন একটি ভাব বাহির করিতে পারেন, যাহা বক্তার ও শ্রোতার মনে কস্মিন কালেও উদয় হয় নাই। ইহাকেই বলে প্ৰতিভা! প্ৰতি সামান্য কথার অসামান্য অর্থসকল বাহির করিয়া সংসারে তিনি এত অনার্থের উৎপত্তি করিয়াছেন যে, এ বিষয়ে কেহ তাহার সমকক্ষ হইতে পারে না। সাধারণ যশের কথা! এই অতি উদার মহৎ গুণ প্রতিপদে চালনা করিতে করিতে দৈবাৎ মাঝে মাঝে এক-একটা অতি নিরীহ কাৰ্যও তিনি সাধন করিয়া থাকেন। সম্প্রতি তিনি বর্ণমালার গৃঢ় অর্থ বাহির করিয়াছেন অথচ তাহতে কাহারো সর্বনাশ করা হয় নাই এই নিমিত্ত তাহ সংক্ষেপে পাঠকদের উপহার দিব। এই পণ্ডিত-প্রবর আজ পাঁচশ বৎসর, বর্ণজ্ঞানশূন্য শিশুদের কর্ণধার হইয়া তাহাদিগকে জ্ঞান-তরঙ্গিণী পার করিয়া আসিতেছেন। যদি কোনো শিশু বিস্মৃতির ভাটায় এক পা পিছাইয়া পড়ে, তবে তাহার কর্ণ ধরিয়া এমন সুন্দর বিকা মারিতে পারেন যে, সে আর এগেইবার পথ পায় না। উঃ ইঃ” আঃ” প্রভৃতি স্বরবর্ণগুলি অতি সহজে, সতেজে ও সমস্ত মনের সহিত উচ্চারণ করাইবার জন্য তিনি অতি সহজ কতকগুলি কৌশল উদ্ভাবন করিয়াছেন। অতএব বর্ণমালা সম্বন্ধে ইহার কথাগুলি বিনা উত্তরে শিরোধাৰ্য করা উচিত। লিখিত ভাষা-বিশেষ পড়িবার জন্য যে বর্ণমালা বিশেষ উপযোগী তাহা নহে। তাহাতে জাতীয় জীবন প্ৰতিবিস্থিত থাকে। একটা উদাহরণ দিলেই সমস্ত স্পষ্ট হইবে। ইংরেজদের ও আমাদের বিবাহ পদ্ধতির কী প্রভেদ, তাহা দেখিতে মনুও খুলিতে হইবে না, ইতিহাসও পড়তে হইবে না; বর্ণমালা অনুসন্ধান করিয়া দেখো, বাহির হইয়া পড়িবে। ইংরাজি বর্ণমালায় "L অক্ষরের পর ‘M” অর্থাৎ Love-এর পর Marriage। আমাদের বর্ণমালায় ‘ব’-এর পর ভি অর্থাৎ বিবাহের পর ভালোবাসা। ইহার উপরে আর কথা আছে? আসল কথা এই সমাজ থে নিয়মে গঠিত হয়, বর্ণমালাও সেই নিয়মে গঠিত হয়। যাহা হউক, কয়েক বৎসর ধরিয়া পণ্ডিত মহাশয় তাহার বিশাল নাসাগহবরে এক-এক টিপ