পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬০৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

दिदिक्ष ¢ዔ8 এমনি আমাদের ভোলা মন যে, রোজ দিনের বেলায় যা অবিশ্বাস করি রোজ রাত্রে তাই বিশ্বাস করি। রাত্রিকে রোজ সকালে অবিশ্বাস করি, সকালকে রোজ রাত্রে অবিশ্বাস করি। আসল কথা এই, আমাদের বিশ্বাস স্বাধীন, সংসারের মধ্যে পড়ে সে বাঁধা পড়েছে- আমরা দায়ে পড়েই অবিশ্বাস করি।- একটু আড়াল পেলে, একটু ছুটি পেলে, একটু সুবিধা পেলেই আমরা যা-তা বিশ্বাস করে বসি, আবার তাড়া খেলেই গণ্ডির মধ্যে প্রবেশ করি। নিতান্ত আপনার কাছে থাকলে তাড়া দেবার লোক কেউ থাকে না। বর্ষাধারার ক্রমিক ঝর্কর শব্দ সংসারের সহস্ৰ শব্দ হতে আমাদের ঢেকে রাখে- আমরা অবিশ্রাম ঝর্কর শব্দের আচ্ছাদনের মধ্যে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে বিশ্রাম করবার স্বাধীনতা উপভোগ করি। এইজন্যই বর্ষাকাল উপকথার কাল। এইজন্য আষাঢ় মাসের সঙ্গেই আষাঢ়ে গল্পের যোগ। এইজন্যই বলছিলাম, বর্ষাকাল বালকের কাল- বর্ষাকালে তরুলতার শ্যামল কোমলতার মতো আমাদের স্বাভাবিক শৈশব স্মৃৰ্তি পেয়ে ওঠে- বর্ষার দিনে আমাদের ছেলেবেলার কথাই মনে পড়ে। তাই মনে পড়ে, বর্ষার দিন আমাদের দীর্ঘ বারান্দায় আমরা ছুটে বেড়াতেম- বাতাসে দুমদাম করে দরজা পড়ত, প্ৰকাণ্ড তেঁতুলগাছ তার সমস্ত অন্ধকার নিয়ে নড়ত, উঠোনে একহাঁটু জল দাঁড়াত, ছাতের উপরকার চারটি টিনের নল থেকে স্কুল জলধারা উঠোনের জলের উপর প্রচণ্ড শব্দে পড়ত ও ফেনিয়ে উঠত, চারটে জলধারাকে দিকহন্তীর শািড় বলে বনে হত। তখন আমাদের পুকুরের ধারের কেয়াগাছে ফুল ফুটত (এখন সে গাছ আর নেই)। বৃষ্টিতে ক্ৰমে পুকুরের ঘাটের এক-এক সিঁড়ি যখন অদৃশ্য হয়ে যেত ও অবশেবে পুকুর ভেসে গিয়ে বাগানে জল দাঁড়াত- বাগানের মাঝে মাঝে বেলফুলের গাছের বঁাকড়া মাথাগুলো জলের উপর জেগে থাকত এবং পুকুরের বড়ো বড়ো মাছ পালিয়ে এসে বাগানের জলমগ্ন গাছের মধ্যে খেলিয়ে বেড়াত, তখন হাঁটুর কাপড় তুলে কল্পনায় বাগানময় জলে দাপাদাপি করে বেড়াতেম। বর্ষার দিনে ইস্কুলের কথা মনে হলে প্ৰাণ কী অন্ধকারই হয়ে যেত, এবং বর্ষাকালের সন্ধেবেলায় যখন বারান্দা থেকে সহসা গলির মোড়ে মাস্টার মহাশয়ের ছাতা দেখা দিত। তখন যা মনে হত তা যদি মাস্টারমশায় টের পেতেন তা হলে- । শুনেছি। এখনকার অনেক ছেলে মাস্টারমশায়কে প্রিয়তম বন্ধুর মতো জ্ঞান করে, এবং ইস্কুলে যাবার নাম শুনে নেচে ওঠে। এটা শুভলক্ষণ বোধ হয়। কিন্তু তাই বলে যে ছেলে খেলা ভালোবাসে না, বর্ষ ভালোবাসে না, গৃহ ভালোবাসে না এবং ছুটি একেবারেই ভালোবাসে না- অর্থাৎ ব্যাকরণ ও ভূগোলবিবরণ ছাড়া এই বিশাল বিশ্বসংসারে আর কিছুই ভালোবাসে না, তেমন ছেলের সংখ্যা বৃদ্ধি হওয়াও কিছু নয়। তেমন ছেলে আজকাল অনেক দেখা যাচ্ছে। তবে হয়তো প্রখর সভ্যতা, বুদ্ধি ও বিদ্যার তাত লেগে ছেলেমানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে কমে এসেছে, পরিপক্কতার প্রাদুর্ভাব বেড়ে উঠেছে। আমাদেরই কেউ কেউ ইচড়ে-পাকা বলত, এখন যে-রকম দেখছি তাতে ইচড়ের চিহ্নও দেখা যায় না, গোড়াগুড়িই কঁঠাল। বালক &R SSS বরফ পড়া (দৃশ্য) ছবির রেখা মন হইতে কেমন অল্পে অল্পে অস্পষ্ট হইয়া আসে; প্রতিদিন যে-সকল জিনিস দেখি, তাহদেরই ছায়া অগ্রবতী হইয়া মনের মধ্যে ভিড় করিয়া দাঁড়ায়, কিছুদিন আগে যাহা করিবার জো থাকে না।