পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VeSO রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী সরস্বতীর সঙ্গেও লাভের ব্যবসায় চালাইতে চায়; কেবল হাস্য, কেবল আনন্দ লইয়া সন্তুষ্ট নহে, স্থাতে কী রহিল দেখিতে চুহে। আমুদ্ধের আলোচ্য গ্রহে বর্ণিত একঠোঙা মুল্লুকনিবাসী শ্ৰীমান ঘ্যাঘে সহিত শ্ৰীমতী নাকেশ্বরী প্রেতিনীর শুভবিবাহবার্তা আমাদের এই দুইঠেঙে মুম্বুকের অত্যন্ত ধীর গভীর সন্ত্রান্ত পাঠকসম্প্রদায়ের কিরাপ ঠেকিবে আমাদের সন্দেহ আছে। আমাদের নিবেদন এই যে, সকল কথারই যে অর্থ আছে, তাৎপর্য আছে, তাহা নহে, পৃথিবীতে বিস্তর বাজে কথা, মজার কথা, অদ্ভূত কথা থাকাতেই দুটা-চারটে কাজের কথা, তত্ত্বকথা, আমরা ধারণা। করিতে পারি। আমাদের দেশের এই পঞ্চবিংশতিকোটি সুগভীর কাঠের পুতুলের মধ্যে যদি কোনো দয়াময় দেবতা একটা বৈদ্যুতিক তার সংযোগে খুব খানিকটা কৌতুকরস এবং বাল্যচাপল্য সঞ্চার করিয়া দিয়া এক মুহুর্তে নাচাইয়া তুলিতে পারেন তবে সেই অকারণ আনন্দের উদাম চাঞ্চল্যে আমাদের ভিতরকার অনেক সার পদার্থ জাগ্রত হইয়া উঠিতে পারে। সাহিত্য যে সকল সময়ে আমাদের হাতে স্পষ্ট ও প্রত্যক্ষ গোচর লাভ আনিয়া দেয় তাহা নহে; আমাদের প্রকৃতির মধ্যে একটা আনন্দপূর্ণ আন্দোলন উপস্থিত করিয়া তাহাকে সজাগ ও সজীব করিয়া রাখে। তাহাকে হাসাইয়া কাদাইয়া, তাহকে বিস্থিত করিয়া, তাহাকে আঘাত করিয়া তাহাকে তরঙ্গিত করিয়া তোলে। বিশ্বের বিপুল মানবহৃদয়জলধির বিচিত্র উত্থান-পতনের সহিত সংযুক্ত করিয়া তাহার ক্ষুদ্রত্ব ও জড়ত্ব মোচন করিয়া দেয়। কখনো বাল্যের অকৃত্রিম হাস্য, কখনো যৌবনের উন্মাদ আবেগ, কখনো বার্ধক্যের স্মৃতিভারাতুর চিন্তা, কখনো অকারণ উল্লাস, কখনো সকারণ তর্ক, কখনো অমূলক কল্পনা, কখনো সমূলক তত্ত্বজ্ঞান আনয়ন করিয়া আমাদের হৃদয়ের মধ্যে মানসিক ষড়ঋতুর প্রবাহ রক্ষা করে, তাহাকে মরিয়া যাইতে দেয় না। সাধনা यॉन $२०ठे ভক্তচরিতামৃত। শ্ৰীঅঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রণীত। মূল্য দশ আনা। রঘুনাথ দাস গোস্বামীর জীবনচরিত। শ্ৰীঅঘোরনাথ চট্টোপাধ্যায় প্রণীত। মূল্য দুই আনা। এই দুইখানি গ্রন্থে বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের ভক্তপ্রবর শ্ৰীমৎ রূপ, সনাতন, জীবগোস্বামী এবং রঘুনাথ দাস গোস্বামীর জীবনচরিত প্ৰকাশিত হইয়াছে। সম্প্রতি শ্রদ্ধাস্পদ শ্ৰীযুক্ত উমেশচন্দ্ৰ বটব্যাল মহাশয় নব্যভারতে রাপ ও সনাতনের অকৃত্রিম সাধুতার প্রতি সন্দেহ প্ৰকাশ করিয়া প্ৰবন্ধ রচনা করিয়াছেন। আমাদের সমালোচ্য গ্রন্থে রূপ সনাতনের জীবনের প্রথমাবস্থার বিবরণ সুস্পষ্ট নহে। এমনকি, গৌড়েশ্বর হুসেন সাহা । শাহ ] রূপকে পরস্বলুণ্ঠনকারী পলাতক দাসু জ্ঞান করিতেন ইহাতে তাহার উল্লেখ আছে, এবং সনাতন এ কথাও চরিতলেখক স্বীকার করিয়াছেন। 赣 কিন্তু তথাপি বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের পূজ্য ভক্ত সাধুচরিত্রে কলঙ্ক আরোপ করিতে সংকোচ বোধ হয়। তাহার অনেক কারণ আছে। প্রথমত, মানুষের চরিত্র আদ্যোপােন্ত সুসংগত নহে। অনেকগুলি ছিদ্র সত্ত্বেও মোটের উপরে চরিত্রবিশেষকে মহৎ বলা যাইতে পারে। ; দ্বিতীয়ত, কালবিশেবে ধর্মনীতির আদর্শের কথঞ্চিৎ ইতারবিশেষ ঘটিয়া থাকে। অর্থাৎ, এক সময়ে ধর্মনীতির যে অংশে সাধারণের শৈথিল্যে ছিল এখন হয়তো সে অংশে নাই অপর কোনো অংশে আছে। এক সময় ছিল, যখন সম্রাটের প্রাপ্য নবাব লুণ্ঠন করিত, নবাবের প্রাপ্য ডিহিদার লুণ্ঠন করিত এবং দসু্যতা রাজতন্ত্রের মধ্যে আদ্যোপােন্ত ধারাবাহিকভাবে বিরাজ করিত। সে দসু্যতা এক প্রকার প্রকাশ্য ছিল এবং সাধারণের নিকট তাহা লজার কারণ না হইয়া সম্ভবত স্নাঘার বিষয় ছিল। সকলেই জানেন। অল্পকাল পূর্বেও উপরি পাওনা সম্বন্ধে প্রশ্ন ভদ্রসমাজের