পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\Ն ՀԵr রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী নীলাকাশ প্ৰতিধ্বনিত করিয়া, গাহিয়া যায়।” অতএব ভরসা করি আমরা এই গ্রন্থলিখিত গান কাটি ভালো না বলিলেও গ্রন্থকারের নীলাকাশ প্রতিধ্বনিত করিবার কোনো ব্যাঘাত হইবে না। বৈশাখ ১৩০২ নির্ধারিণী। শ্ৰীমতী মৃণালিনী প্রণীত। মূল্য এক টাকা। মহিলা-প্ৰণীত গ্ৰন্থ সর্বতোভাবে নিরপেক্ষচিত্তে সমালোচনা করা কঠিন। বিশেষত বর্তমান সমালোচ্য গ্রন্থের লেখিকা নিতান্ত অল্পবয়স্ক এবং নববৈধব্যবেদনায় ব্যথিত। গ্রন্থকত্রীও ভূমিকায় পাঠকদিগকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেন যে, তাহার গ্রন্থে ‘কতখানি কবিত্ব আছে, কতখানি উচ্চতা আছে, কতখানি মাধুরী ও সৌন্দৰ্য আছে তাহার বিচার না করিয়া, বালিকার হৃদয়ের প্রতি দৃষ্টিপাত করিলেই পুস্তক প্রকাশিত করা সার্থক হইবে।” এ কথার তাৎপর্য এই যে, নবীনা লেখিকা তাহার কবিতাগুলিকে কেবল কবিত্বের হিসাবে সাধারণের সম্মুখে উপস্থিত করিতেছেন না, তাহার তরুণ হৃদয়ের সুখ দুঃখশোকের জন্য সমবেদনা প্রত্যাশা করিতেছেন। ইহাতে গ্রন্থকত্রীর অল্পবয়স এবং সংসারতত্ত্বে অনভিজ্ঞতা সূচিত হইতেছে। ব্যক্তিগত দুঃখসুখের প্রকাশ যতক্ষণ না সর্বজনীন ও সর্বকালীন সৌন্দৰ্য লাভ করে ততক্ষণ সাহিত্যে তাহা কাহারও নিকট সমবেদনা প্ৰাপ্ত হয় না। এইজন্য অভিজ্ঞ ব্যক্তিমাত্রেই সাহিত্যে প্রধানত আত্মহৃদয়ের পরিচয় দিতে সংকোচ বোধ করেন। টেনিসনের ইন মেমোরিয়ম” আপনাকে ব্যক্ত করিয়াছে বলিয়াই তাহ সর্বসমক্ষে প্ৰকাশযোগ্য হইয়াছে- নচেৎ ব্যক্তিগত শোকের প্রকাশ্য বিলাপ টেনিসনের পক্ষে লজ্জার কারণ হইত। অতএব, এই গ্রন্থের যে যে অংশে মুখ্যরূপে বালিকার আত্মশোকের কথা আছে তাহা আমরা সসংকোচে পরিহার করিতে ইচ্ছা করি। যথার্থ পতিশোকের উচ্ছাসে যখন বালিকা বিধবা বিলাপ কাহারও প্রবৃত্তি হইতে পারে না। কেবল সাধারণভাবে এই কথা বলিতে পারি, যে, প্রথম জোয়ারের জলের ন্যায় প্রথম শোকের উচ্ছাসে কাব্যকলার পরমাবশ্যক সংযম অনেকটা ভাসিয়া যায়, সর্বত্রই যেন বাহুল্য দৃষ্ট হইতে থাকে। শোক যখন জীবনের মধ্যে পরিপাক প্রাপ্ত হইয়া একটি উদার গভীর বৈরাগ্যের আকার ধারণ করে তখনি তাহা কাব্যে সুন্দরভাবে প্রতিফলিত হইবার অবসর লাভ করে। এই গ্রন্থের মধ্যে গ্রন্থকত্রী যেখানেই ব্যক্তিগত শোকের অন্ধ কারাগার হইতে বাহিরের সৌন্দৰ্য-রাজ্যে পদাৰ্পণ করিয়াছেন, সেইখানেই তাহার কবিত্বের যথার্থ নিদর্শন পাওয়া যায়। “অনন্ত কালের পরিচয়” এবং ‘বিশ্বপ্ৰেম” নামক কবিতায় ভাষা ও ভাবের যে নৈপুণ্য ও গভীরতা এবং অকৃত্রিম সত্যতা, দেখিতে পাওয়া যায় তাহা কোনো বালিকার রচনায় কদাৰ্চ প্ৰত্যাশা করা যাইতে পারে না; এবং তাহা বিশেষরূপে প্ৰশংসনীয়। छर्छ S००२ বঙ্গসাহিত্যে বঙ্কিম। শ্ৰীহারাণচন্দ্র রক্ষিত প্রণীত। মূল্য চারি আনা। 崎 লেখক এই গ্রহে স্বহস্তে একটি উচ্চ মঞ্চ নির্মাণ করিয়া তাহার উপরে চড়িয়া বসিয়াছেন, এবং বঙ্কিমকেও সেইসঙ্গে বঙ্গসাহিত্যের আর কতকগুলি পরীক্ষাত্তীর্ণ ভালো ছেলেকে হাস্যমুখে