পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Vo রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী অনিবাৰ্থ কারণজনিত অৰ্থক্লেশ হইতে রক্ষিত হইতে পারে। সেই চিন্তা ও চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইলেন। তাহার সেই আমরণ চেষ্টার ফলে এই পারিবারিক সমাজ। ইহা একটি কারখানা। এখানে প্রধানত লোহার উনান, অগ্নিকুণ্ড, ইমারাৎ প্রস্তুতের সরঞ্জাম প্রভৃতি তৈয়ারি হয়। " এখানকার কর্মপ্রণালী অন্যান্য কারখানা হইতে অনেক স্বতন্ত্র। সংক্ষেপে এখানকার নিয়ম এই কারবারের সুদ খরচা বাদে মোট ষে লাভ হয়, তাহা হইতে শতকরা পাঁচশ অংশ বুদ্ধি অনুসারে এবং পচাত্তর অংশ পরিশ্রম অনুসারে কর্মচারীদের মধ্যে বন্টন করিয়া দেওয়া হয়। ইহা ব্যতীত তাহাদের যথানিয়মিত বেতন আছে। ত্ৰিশ বৎসর কাজের পর পেনশন নির্দিষ্ট হয়, কিন্তু বিশেষ কারণে অক্ষম হইয়া পড়িলে পনেরো বৎসরের পরেই একটা মাসহারার অধিকারী হওয়া যায়। দুঃখদুদিনের জন্য একটা বিশেষ বন্দোবস্ত আছে, এবং এই সভাভুক্ত যে-কেহ ইচ্ছা করিলে সন্তানদিগকে চোদ্দ বৎসর বয়স পর্যন্ত সরকারি ব্যয়ে বিদ্যাশিক্ষা দিতে পারে। ১৮৮৮ খৃস্টাব্দে গোর্ড্যা সাহেবের মৃত্যুকালে তিনি তাহার উপাজিত ধনের অর্ধেক, অর্থাৎ এক লক্ষ চল্লিশ হাজার পৌন্ড এই কারখানায় দান করিয়া যান। শর্ত এই থাকে যে, নির্দিষ্ট ংখ্যক পরিবার যেখানে সুখে স্বচ্ছন্দে জীবনযাত্রার সামান্য অভাবসকল অনুভব না করিয়া কালব্যাপন করিতে পারে, এমন বাসস্থানের বন্দোবস্ত করা হইবে। পীড়িত, অক্ষম, বৃদ্ধ, বিধবা, পিতৃমাতৃহীন বালকবালিকা, এমন-কি, সর্বপ্রকার অশক্ত লোকদিগের জন্য ইলিউরোন্সের ব্যবস্থা করিতে হইবে। আশ্রমবাসীদের আহাৰ্য জোগাইতে হইবে। তাহদের শারীরিক মানসিক ও নৈতিক উন্নতির জন্য যে-সকল আমোদ-আহ্বাদের আবশ্যক, তাহার উপায় করিতে হইবে। বালকবালিকারা যে পর্যন্ত না কাজে নিযুক্ত হয় সে পর্যন্ত তাহাদিগকে পালন করিতে ও শিক্ষা দিতে হইবে। কর্মশালার নিকটেই মজুরদের বাসা ঠিক করিয়া দিতে হইবে। এক কথায়, এমন বন্দোবস্ত করিতে হইবে, যাহাতে কারখানায় শ্রমজীবীরা সুখে একত্র বাস করিতে পারে, যাহাতে কারখানা ও ব্যবসায়ের লাভ কর্মকারদের মধ্যে ন্যায়নিয়মে ভাগ হইতে পারে এবং যাহাতে ক্ৰমে ক্ৰমে সমাজের সমুদয় সম্পত্তি অল্পে অল্পে তাহাদেরই হস্তগত হয়। } ছয় কারণে সভ্যগণ সমাজ হইতে দূরীভূত হইতে পারেন : ১. পানিদোষ; ২. বাসস্থানের বায়ু । দুষিত করা; ৩, গৰ্হিত আচরণ; ৪. শ্ৰমবিমুখতা, ৫. নিয়মের অবাধ্যতা অথবা উপদ্রব করা; ৬. সন্তানদিগকে উপযুক্ত শিক্ষাদানে শৈথিল্যাচরণ। কেহ না মনে করেন, এই সমাজে পদে পদে নিয়মের কড়াকড়ি। প্রত্যেককে যথাসম্ভব স্বাধীনতা দেওয়া হইয়াছে। ফার্টনাইটলি রিভিয়ু পত্রে যে লেখক এই প্ৰবন্ধ লিখিতেছেন, তিনি স্বয়ং সেখানে গিয়া দেখিয়া আসিয়াছেন। তিনি বলেন, সকলেই বেশ প্ৰফুল্লমুখে সন্তুষ্টভাবে কাজকর্মে প্ৰবৃত্ত আছে। স্ত্রীলোকেরা স্বস্ব পরিবারের জন্য কাপড় কাচিতেছে, এবং কাজ করিতে করিতে গুনগুনস্বরে গান ও গল্প করিতেছে, কেহ বা বাগানে মধ্যাহ-রৌদ্রে বসিয়া বসিয়া সেলাই করিতেছে। ছেলেদের থাকিবার ঘর ভিন্ন ভিন্ন বয়সের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ভাগে বিভক্ত এবং তােহর সমস্ত বন্দোবস্ত অতি চমৎকার। সাধারণের জন্য রুটি তৈয়ারির ঘর, কসাইখানা, সন্তরণ-শিক্ষার উপযোগী মানগৃহ, খেলা ও আমোদের জায়গা, নাট্যশালা, ভাণ্ডার প্রভৃতি নির্দিষ্ট আছে। ঘরদ্বার সমস্তই বহু যত্নে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা হয়। এ সমাজের একটি বিশেষ নিয়ম এই যে, ধৰ্মসম্বন্ধে প্রত্যেকের স্বাধীনতা সম্পূর্ণ অক্ষুধা থাকিবে। একান্নাবতী পরিবার-প্রথার সহিত এই পরিবারাশ্রমের ঐক্য নিঃসন্দেহে পাঠকদের মনে উদয় হইয়াছে। কিন্তু আমাদের পরিবারতন্ত্রের যে-সকল কু-প্রথা হইতে সমাজে বিস্তর অমঙ্গলের উদ্ভব হয় সেগুলি উক্ত বাণিজ্য-সমাজে নাই। প্রথমত সকলকেই কাজ করিতে হয় এবং প্রত্যেকে