পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

vav রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী পার্লামেন্টের কিঞ্চিৎ অধীন এই প্রশ্ন কটন বা কাপড় সূতার আইন যখন বিল ছিল তখনই বৃক্ষটার অনেকগুলা শাখা-প্ৰশাখা ও কাঁটা-খোচা বাহির হইয়াছে। কটন-অ্যাক্ট সম্বন্ধে সেক্রেটারি অব স্টেটের আদেশ বা “ম্যান্ডেট" অথবা ব্যবস্থাপক সভাপতি 'এলগিন কর্তৃক তাহার উল্লেখ এই আকস্মিক উৎকণ্ঠ উৎপাদন ও বিপদাপাতের অব্যবহিত কারণ। ম্যান্ডেট" উক্তিটিই যেন বোধ হয়, অনৰ্থ ঘটাইয়াছে। ব্যবস্থাপকগণ, বিশেষত ‘আনঅফিশিয়াল” অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান মেম্বরেরা বিন্দু ব্যতিক্রম হইয়াছে। সকলেই জানেন যে ব্যবস্থাপক সভার অসীম স্বাধীনতা সংরক্ষণের চেষ্টায় শ্ৰীমান স্যর গ্রিফিথ ইভান্স এবং মাননীয় মি. প্লেফেয়ার এই দুই রখী অস্ত্ৰধারণ করিয়াছিলেন। ইহাদের উভয়েরই বিবেচনায় এখানকার এই আইন-সভার স্বাধীনতা অসীম হওয়া উচিত; অসীমই ছিল; কিছুকাল হইতে স্টেট সেক্রেটারি সংকল্প করিয়া সসীম করিতে বসিয়াছেন। ইহা, বে-আইনি, বেনজিরি এবং বিষম বিপত্তিজনক। ইহাতে করিয়া ব্যবস্থাপক সভার বে-ইজত, সে সভার সভাপতি স্বয়ং রাজপ্রতিনিধির সম্রামের হানি এবং ব্যবস্থাপকদিগের বিধিব্যবস্থা বিভ্রাপকরা হইবে; পরন্তু, তদ্দারা ভারতরাজ্য শাসন সম্বন্ধেও ভয়ানক বিভীষিকা উপস্থিত হইবে। কেবল তাহাঁই নহে, ব্রিটিশ ডেমক্রেসি আন্দীে সাম্রাজ্য শাসনে সমর্থ কি না, সে বিষয়েই (শুনিতেছি) ঘোর সন্দেহ, উপস্থিত হইবে। কেবল সন্দেহ নহে; সে অসমৰ্থতা সম্পূর্ণরূপে সাব্যস্তই হইবে। The question whether a democracy can govern an Empire will have to be answered in the negative। পরন্তু, এরাপ অত্যাচার হইলে, ব্যবস্থাপক সভায় সুযোগ্য সভাই জুটিবে না। সিবিল সার্ভিসেও সম্ভবত সমর্থ লোক মিলা ভার হইবে। কেহই আর সাম্রাজ্যের শাসনযন্ত্ৰ ছুইতে চাহিবে না; সংহিতাকার ও শাসয়িতাভাবে শাসন-রশ্মি শিথিল হইয়া সাম্রাজ্য ধবংস হইবে না; তাহাঁই বা কে বলিবে! গবর্নমেন্টের প্রতি প্ৰজাসাধারণের বিশ্বাস থাকিবে না, সন্ত্রম ও শঙ্কা টলিবে; কাজেই শক্তির হ্রাস হইবে; সুতরাং তাহার অবশ্যম্ভাবী ফল— ধ্বংসই বটে। একদিকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট; অপরদিকে ভারত গবর্নমেন্ট; মধ্যস্থলে স্টেট সেক্রেটারি। এই সেক্রেটারিই হইয়াছেন, এ ক্ষেত্রে, যত সর্বনাশের মূল। কিন্তু, এই সেক্রেটারি যথার্থই কি আমাদের সংহিতাকারদিগের স্বাধীনতাপহরণে প্ৰবৃত্ত ? যতদূর দেখা যাইতেছে, তাহাতে কোনো প্রকারেই তো তাহার সেরূপ অসন্দভিসন্ধির লক্ষণ পরিদৃষ্ট হয় না। ভারতে রাজ-শক্তি শতসহস্র স্রোতে, শাখা এবং প্রশাখায় প্রবাহিত। সে শক্তির মূল প্রস্রবণ আদি কেন্দ্ৰস্থলে ব্যক্তিবিশেষ নহেন, বিরাট ব্রিটিশ পার্লামেণ্ট, অন্তত ইহাই আমরা অবগত আছি। বিধিব্যবস্থা ব্যবহারও ইহার বিরোধী নয়। অতএব রাজ-শক্তির আদিকেন্দ্ৰস্থল ব্রিটিশ পার্লামেন্টকর্তৃক, সে শক্তির সঞ্চালন, সংযম বা সম্প্রসারণ অন্যায় ও অসংগত বলিতে পারি না। স্টেট সেক্রেটারি ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আদেশ, ইচ্ছা ও অবলম্বিত নীতি.অনুধাবন করিয়া ভারতশাসন সম্বন্ধে, প্রধান প্রধান বিষয়ে রাজপ্রতিনিধির সমীপে পরামর্শ প্রেরণ করেন। অতীত লর্ড এলগিন নিজেই এ কথা বলিয়াছেন; এবং তঁহার কথা সমূলক নহে, এমন অনুমান করার কিছুমাত্র কারণও নাই। অতএব স্টেট সেক্রেটারির উপর দোষারোপ করা অনর্থক। তিনি পার্লামেন্টেরই শক্তি সঞ্চালন করেন; নিজে কোনো অভিনব নীতি সংগঠন করিয়া পাঠান না; পুরাতন নীতিরও পরিবর্তন করেন না। অতএব অপক্ষপাত বিচার করিলে, এ বিষয়ে তাহাকে “বেকসুর খালাসই দিতে হয়। তিনি তফাত হইলে অবশিষ্ট থাকে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও আমাদের ব্যাবস্থাপক সভা। সভা কি সত্যসত্যই পার্লামেন্টকেও প্রত্যাখ্যান করিতে প্ৰস্তুত ? স্যার গ্রিফিথ ও মি. প্লেফেয়ারের প্রস্তাবে তাঁহাই বলিয়া বােধ হয়। কিন্তু পার্লামেন্টকে উল্লঙ্ঘন করার এ অভিলাষ বা আবদার এদেশীয় লোকেরা কখনোই অনুমোদন করিতে পারে না। শাসনশক্তির শত