পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

: ՀՀե রবীন্দ্র-রচনাবলী প্রাদেশিক সভার উদবােধন ঢাকায় বিগত বঙ্গীয় প্রাদেশিক জনসভার যে অধিবেশন বসিয়াছিল তাহার সভাপতি ছিলেন মান্যবর শ্ৰীযুক্ত কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়। তাহার উদবোধনের সারমর্ম নিম্নে বাংলায় প্রকাশ করিলাম। ইহাতে মূল বক্তৃতার অসামান্য গভীৰ্য নৈপুণ্য ও তেজ, ভাষার প্রাঞ্জলতা ও সৌন্দর্য রক্ষা করিবার দুরাশা পরিত্যাগ করিয়াছি কেবল তাহার প্রধান বক্তব্য বিষয়গুলি সন্নিবেশিত করা হইয়াছে- আশা করি, পাঠকগণ ইহা হইতে সংক্ষেপে আমাদের বর্তমান রাজনীতির অবস্থা ও আমাদের রাজনৈতিক কর্তব্য সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করিবেন। এ স্থলে বলিয়া রাখা কর্তব্য, অনুবাদটি কালীচরণবাবুকে দেখাইবার অবকাশ পাই নাই, এজন্য যদি কোনো অনৈক্য অসংগতি ঘটিয়া থাকে। তবে আমরা তাহার ও পাঠকবর্গের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি। - | আমাকে অদ্য আপনারা সভাপতিত্বে বরণ করিয়াছেন, সেজন্য যেমন আমি আপনাদের নিকট কৃতজ্ঞ, তেমনি আপনি অযোগ্যতা অনুভব করিয়া সংকুচিত। আমি আপনাদের আদেশ শিরোধার্য করিয়া গ্ৰহণ করিলাম। কিন্তু আমাকে এই ভার প্রদানের জন্য আপনারই দায়ী তাহা স্মরণ রাখিবেন। এক্ষণে ঈশ্বরের এই আশীর্বাদ কামনা করি যে, এ সভা যেন প্রজাদের সহায় হয় এবং প্ৰজাপালকদেরও সাহায্য করে। ভারতেশ্বরী মহারানীর মহৎজীবনের আরও একবৎসর কাল আমরা সৌভাগ্যস্বরূপে লাভ করিয়াছি।-- যে উদার ঘোষণাপত্র তাহার রাজত্বের স্থায়ীকীর্তি, প্রার্থনা করি, তিনি বহুদীর্ঘকাল সজীব থাকিয়া তাহার সেই প্রতিশ্রুতিগুলিকে অটল ভিত্তির উপর স্থাপনপূর্বক প্রজাদিগকে আনন্দিত এবং আপন রাজবাক্যকে চরিতার্থ করিতে পারেন। বর্ষে বর্ষে আমরা ইংলন্ডের প্রবীণ মহাপুরুষকে (Grand old man) তাহার জন্মোৎসবের আনন্দ-অভিবাদন প্রেরণ করিয়াছি। রাজনৈতিক আকাশের সেই উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক অদ্য অস্তমিত হইয়া উচ্চতর গগনে অধিরোহণ করিয়াছেন। আমরা তঁহার শোকাকুল পরিবারের অশ্রুর সহিত অশ্রু সম্মিলিত করি, এবং তাহার পবিত্র স্মৃতির সহিত তাহার সেই মহাবা গ্রথিত করিয়া রাখি যে-বাণী অদ্য বিংশতি বৎসর হইল, তৎকালীন ভারতশাসনকর্তা-কর্তৃক প্রচলিত রাজদ্রোহীরাচনা বিলের বিরুদ্ধে তিনি উচ্চারণ করিয়াছিলেন, যে অখণ্ডনীয় বাণী আমরা বিরোধীপক্ষকে পরাভব করিবার জন্য মহারাপে গ্ৰহণ করিতে পারি। তিনি বলিয়াছিলেনমহাশয়গণ, যদিও মধ্যে মধ্যে আমরা ভারতরক্ষাকার্যের সহিত ব্রিটিশ স্বার্থকে বিজড়িত করিয়া আমাদের সেই প্রথম ও পরম কর্তব্য হইতে- অর্থাৎ সেখানকার প্রজাবর্গের উন্নতিসাধনে আমাদের একান্ত সহায়তা এবং সুবুদ্ধি পরিচালনা হইতে- বিক্ষিপ্ত হইয়া পড়ি, তথাপি, একটিমাত্র উপায় আছে যা দ্বারা আমরা ভারতশাসনের দুরূহ কাৰ্যকে আশাপ্রদ ও সম্ভবপর করিয়া তুলিতে পারি- সে কেবল ভারতবাসীদের হিতের জন্য ভারতশাসনের চেষ্টা। আমরা যে এই ভিত্তির উপরে ভারতশাসনকাৰ্যকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি; ইহা অত্যুক্তি নহে এবং ইহাও সত্য যে, ভারতবাসীগণ তাহ জানে ও বিশ্বাস করে। তাহদের নালিশ করিবার অনেক বিষয় আছে, অন্তত এইরূপ তাহদের ধারণা। দুঃখের সহিত বলিতেছি। বর্তমান প্রেস অ্যাক্ট তাহার মধ্যে একটি প্রধান। কিন্তু আমি দেখিয়াছি- বিশেষত এই অ্যাক্টের পোষকস্বরাপে যেসকল লেখা উদ্যুত করিয়া পাঠানো হইয়াছে তাঁহাই পাঠ করিয়া দেখিয়াছি- ভারতবর্ষের এই সকল নালিশবিশেষ বিশেষ হেতুগত। আমরা এ দেশে যেমন করি তাহারাও সেইরূপ গবর্মেন্টের ত্রুটি অবলম্বন করিয়া অভিযোগ করে। যখন এমন কোনো আইন পাস হয় যাহাকে আমরা মন্দ জ্ঞান করি তখন তাহার বিরুদ্ধে আপত্তি জানাই, কিন্তু তাই বলিয়া রাজার সহিত প্ৰজাসম্বন্ধ