পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী পতিব্ৰতা সতী মৃত স্বামীকে ফিরিয়া লইবেন- না সাবিত্রীও এ দেশীয় শত সহস্ৰ স্ত্রীর মতো যমের নিকটে সহমরণের ব্যর প্রার্থনা করিয়া পতির সঙ্গেই সহমরণে অন্তধান হইলেন। যদি কোনো পুরাণে এরাপ কথা থাকিত তা হইলেও বুঝিতাম। যে গ্রন্থকার কী করিবেন- কিন্তু তাহা নয়, বঙ্কিমবাবু স্বেচ্ছামতো পুরাণের উৎকর্ষ সাধন করিতে গিয়া দেশীয় একটি অতি সুন্দর কাহিনীর সুন্দরতম অংশটুকু একেবারে মৃত্তিকাসাৎ করিয়াছেন। আমরা স্বীকার করি যে স্বামীর সহিত ইচ্ছাপূর্বক সহমরণে যাওয়া বিশেষ অনুরাগের লক্ষণ। কিন্তু তাহা মহান সতীত্বের পরাকাষ্ঠা নহে,- অসতীর অগ্রগণ্যা ক্লিয়োপেট্রাও আন্টনির মৃত্যুর পর ইচ্ছাপূর্বক জীবন বিসর্জন করিয়াছিলেন- তিনিও মৃত্যুর অব্যবহিত পূর্বে ইরাস নামক সহচরীকে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছিলেন “ত্বরায়- ত্বরায়- রে শান্ত ইরাস- আর বিলম্ব করিস না- আমি যেন শুনিতে পাইতেছি। আমাকে আন্টনি ডাকিতেছেন, আমি যেন দেখিতে পাইতেছি তিনি আমার এই আত্মবিসর্জনরাপ মহৎ কাৰ্য দেখিবার জন্য জাগিয়া উঠিতেছেন।” স্বীকার করি যে এ কথাগুলি শেকসপিয়রের, কিন্তু শেকসপিয়র ইতিহাসের মূলোচ্ছেদ করিয়া কপোলকল্পিত কতকগুলি প্ৰলাপ বাক্য কহেন নাই- তিনি ইতিহাসকে অক্ষুঃ রাখিয়াও কল্পনা-প্ৰাচুৰ্য খুবই দেখাইয়াছেনবঙ্কিমবাবু বিপরীত প্রথা অবলম্বন করিয়া বিপরীত ফল উৎপাদনা করিয়াছেন। কেহ কেহ বলিতে পারেন যে আন্টনি ক্লিয়োপেটার স্বামী ছিল না- কিন্তু তাহাতে কী এলো গেলতাহাতে আরও সপ্রমাণ হইতেছে যে সতী স্ত্রী না হইলেও অনুরাগের ঝোকে এক জন অসতীও সহমরণে যাইতে পারে; মনে করো- ক্লিয়োপেট্রার শেষ দশায় যখন আন্টনির সহিত প্ৰণয় হইল- তখন আন্টনির যদি বিবাহই হইত, তাহা হইলেই কি ক্লিয়োপেট্রার পূর্বের বেশ্যাবৃত্তি ভুলিয়া তাহার ইচ্ছামৃত্যু দেখিয়াই তাহাকে সতী ও পতিব্ৰতা কহিতাম?-- সহমরণে যাওয়াই কি সাবিত্রীর অলৌকিক পাতিব্ৰত্যের পরাকাষ্ঠী মনে করিতে হইবে?- পুরাণে তাহা বলে না। পুরাণে এই কথাই বলে যে সাবিত্রী আপনার সতীত্ব-প্রভাবে উত্তেজিত হইয়া এই সংকল্প করিলেন যে সতীত্বের অলৌকিক মাহাক্স্যে যমের হস্ত হইতে পর্যন্ত আমার মৃত স্বামীকে ফিরাইয়া আনিব। সেই সংকল্প অনুসারে তিনি একাকিনী চতুর্দশীর ভীষণ নিশীথ-যোগে বিকট অরণ্যে মৃত প্রীত হইলেন- প্রীত হইয়া অবশেষে সত্যবানকে সতী স্ত্রীর আলিঙ্গনে প্ৰত্যপণ করিলেন।-- পুরাণের এ কথা কেহ বিশ্বাস করিবেন না বটে, কিন্তু ইহার ভিতর একটি ভাব আছে- এবং সেই ভাবের প্রভাবে সাবিত্রীর গল্পটি ভারতবাসিনীদের হৃদয়ের শিরা এবং উপশিরায় ঘোর ঘনিষ্ঠ ভাবে বিজড়িত আছে। দুই-তিন সহস্ৰ সতী স্ত্রী মৃত পতির সহিত সহমরণে গিয়াছে— কিন্তু কেহই তাহদের সহমরণকে সতীত্বের যারপরনাই মাহাত্ম্য লক্ষণ মনে করে না। পুরাণের সহিত বাল্যক্ৰীড়া করা আমাদের মতে যুক্তি-সংগত নহে। পঞ্চম- “আদর’- এ কবিতাটি মন্দ নহে— ইহার প্রথম কথাগুলিই অতি সুন্দর হইয়াছে ‘মরুভূমিমাঝে যেন, একই কুসুম, পূর্ণিত সুবাসে। বরষার রাত্ৰে যেন, একই নক্ষত্র, অর্মধার আকাশে। নিদাঘ সন্তাপে যেন একই সরসী, । t Ratia ayg রতন শোভিত যেন, একই তরণী, टनg नॉद्धि ! তেমনি আমার তুমি, প্রিয়ে, সংসার-ভিতরে।