পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী ه دلا অন্তরমাঝে বসি অহরহ মুখ হতে তুমি ভাষা কেড়ে লহ, মোর কথা লয়ে তুমি কথা কহ মিশায়ে আপন স্বরে। কী বলিতে চাই সব ভুলে যাই, তুমি যা বলাও আমি বলি তাই, সংগীতপ্রোতে কূল নাহি পাই— কোথা ভেসে যাই দূরে। বিশ্ববিধির একটা নিয়ম এই দেখিতেছি যে, যেটা আসন্ন, যেটা উপস্থিত, তাহাকে সে খর্ব করিতে দেয় না। তাহাকে এ কথা জানিতে দেয় না যে, সে একটা সোপানপরম্পরার অঙ্গ। তাহাকে বুঝাইয়া দেয় যে, সে আপনাতে আপনি পর্যাপ্ত। ফুল যখন ফুটিয়া উঠে তখন মনে হয়, ফুলই যেন গাছের একমাত্র লক্ষ্য— এমনি তাহার সৌন্দর্য, এমনি তাহার স্বগন্ধ যে, মনে হয় যেন সে বনলক্ষ্মীর সাধনার চরমধন। কিন্তু সে যে ফল ফলাইবার উপলক্ষমাত্র সে কথা গোপনে থাকে— বর্তমানের গৌরবেই সে প্রফুল্ল, ভবিষ্যৎ তাহাকে অভিভূত করিয়া দেয় না। আবার ফলকে দেখিলে মনে হয়, সেই যেন সফলতার চূড়ান্ত ; কিন্তু ভাবী তরুর জন্ত সে যে বীজকে গর্ভের মধ্যে পরিণত করিয়া তুলিতেছে, এ কথা অন্তরালেই থাকিয় ৰায়। এমনি করিয়া প্রকৃতি ফুলের মধ্যে ফুলের চরমতা, ফলের মধ্যে ফলের চরমতা রক্ষা করিয়াও তাহাঙ্গের অতীত একটি পরিণামকে অলক্ষ্যে অগ্রসর করিয়া দিতেছে । কাব্যরচনাসম্বন্ধেও সেই বিশ্ববিধানই দেখিতে পাই – অন্তত আমার নিজের মধ্যে তাহা উপলব্ধি করিয়াছি। যখন যেটা লিখিতেছিলাম তখন সেইটেকেই পরিণাম বলিয়া মনে করিয়াছিলাম। এইজন্ত সেইটুকু সমাধা করার কাজেই অনেক ৰত্ন ও অনেক আনন্দ আকর্ষণ করিয়াছে । আমিই যে তাহ লিখিতেছি এবং একটা-কোনো বিশেষ ভাব অবলম্বন করিয়া লিখিতেছি, এ সম্বন্ধেও সন্দেহ ঘটে নাই। কিন্তু জাজ জানিয়াছি, সে-সকল লেখা উপলক্ষমাত্ৰ— তাহারা যে অনাগতকে গড়িয়া তুলিতেছে সেই অনাগতকে তাহারা চেনেও না । তাহদের রচয়িতার মধ্যে আর-একজন কে রচনাকারী আছেন, যাহার সম্মুখে সেই ভাবী তাৎপর্য প্রত্যক্ষ বর্তমান । ফুৎকার বাশির এক-একটা ছিত্রের মধ্য দিয়া এক-একটা স্বয় জাগাইয়া তুলিতেছে এবং নিজের কর্তৃত্ব উচ্চস্বরে প্রচার করিতেছে, কিন্তু কে সেই বিচ্ছিন্ন স্বরগুলিকে রাগিণীতে বাধিয়া তুলিতেছে ? ফু স্বর জাগাইতেছে বটে, কিন্তু ফু তো বঁশি বাজাইতেছে না।