পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

●8 রবীন্দ্র-রচনাবলী লোক যাত্রা করিয়া বাহির হইয়াছে তাহা হইতে লাফ দিয়া পড়িয়া সাতারের জোরে সমুত্র পার হইবার চেষ্টা সফল হইবার নহে। হে বিশ্ব, হে মহাতরী, চলেছ কোথায় ? আমারে তুলিয়া লও তোমার আশ্রয়ে। একা আমি সাতারিয়া পারিব না যেতে । কোটি কোটি যাত্রী ওই যেতেছে চলিয়া— আমিও চলিতে চাই উহাদেরি সাথে । ষে পথে তপন শশী আলো ধরে অাছে সে পথ করিয়া তুচ্ছ, সে আলো ত্যজিয়া আপনারি ক্ষুদ্র এই খদ্যোত-আলোকে কেন অন্ধকারে মরি পথ খুজে খুজে । পাখি যবে উড়ে যায় আকাশের পানে মনে করে এমু বুঝি পৃথিবী ত্যজিয়া ; যত ওড়ে, যত ওড়ে, যত উর্ধের্ব যায়, কিছুতে পৃথিবী তৰু পারে না ছাড়িতে— অবশেষে শ্ৰান্তদেহে নীড়ে ফিরে আসে । পরিণত বয়সে যখন ‘মালিনী' নাট্য লিখিয়াছিলাম, তখনে এইরূপ দূর হইতে নিকটে, অনির্দিষ্ট হইতে নিদিষ্টে, কল্পনা হইতে প্রত্যক্ষের মধ্যেই ধর্মকে উপলব্ধি করিবার কথা বলিয়াছি— বুঝিলাম ধর্ম দেয় স্নেহ মাতারূপে, পুত্ররূপে স্নেহ লয় পুন ; দাতারূপে করে দান, দীনক্সপে করে তা গ্রহণ 5 শিষ্যরূপে করে ভক্তি, গুরুরূপে করে আশীৰ্বাদ ; প্রিয়া হয়ে পাষাণ অস্তরে প্রেম-উৎস লয় টানি, অমুরক্ত হয়ে করে সর্বত্যাগ। ধর্ম বিশ্বলোকালয়ে ফেলিয়াছে চিত্তজাল, নিখিল ভূবন টানিতেছে প্রেমক্রোড়ে— সে মহাবদ্ধন ভরেছে অন্তর মোর আনন্দবেদনে ।