পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२१२ রবীন্দ্র-রচনাবলী তারা ভাই আর বোনের মতো, তাই যখন দেখি গদ্যে পন্ডের রস ও পতে গদ্যের গাষ্ঠীর্ষের সহজ আদানপ্রদান হচ্ছে তখন আমি আপত্তি করি নে। রুচিভেদ নিয়ে তর্ক করে কিছু লাভ হয় না। এইমাত্রই বলতে পারি, জামি অনেক গদ্যকাব্য লিখেছি যার বিষয়বস্তু অপর কোনো রূপে প্রকাশ করতে পারতুম না। তাদের মধ্যে একটা সহজ প্রাত্যহিক ভাব আছে ; হয়তো সজা নেই কিন্তু রূপ আছে এবং এইজন্তেই তাদেরকে সত্যকার কাব্যগোত্রীয় ব’লে মনে করি। কথা উঠতে পারে, গদ্যকাব্য কী। আমি বলব, কী ও কেমন জানি না, জানি ষে এর কাব্যরস এমন একটা জিনিস যা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করবার নয়। যা আমাকে বচনাতীতের আস্বাদ দেয় তা গদ্য বা পদ্য রূপেই আমুক, তাকে কাব্য ব’লে গ্রহণ করতে পরায়ুখ হব না। শান্তিনিকেতন । ২৯ আগস্ট ১৯৩৯ t মাঘ ১৩৪৬ সাহিত্যবিচার সূক্ষ্মদৃষ্টি জিনিসটা যে রস আহরণ করে সেটা সকল সময় সার্বজ্ঞনিক হয় না। সাহিত্যের এটাই হল অপরিহার্য দৈন্য । তাকে পুরস্কারের জন্য নির্ভর করতে হয় ব্যক্তিগত বিচারবুদ্ধির উপরে । তার নিম্ন-আদালতে বিচার সেও যেমন বৈজ্ঞানিক বিধি-নির্দিষ্ট নয়, তার আপিল-আদালতের রায় ও তথৈবচ। এ স্থলে আমাদের প্রধান নির্ভরের বিষয় বহুসংখ্যক শিক্ষিত রুচির অমুমোদনে । কিন্তু কে না জানে যে, শিক্ষিত লোকের রুচির পরিধি তৎকালীন বেষ্টনীর দ্বারা সীমাবদ্ধ, সময়াস্তরে তার শাস্তর ঘটে। সাহিত্যবিচারের মাপকাঠি একটা সজীব পদার্থ। কালক্রমে সেটা বাড়ে এবং কমে, কৃশ হয় এবং স্কুল হয়েও থাকে । তার সেই নিত্যপরিবর্তমান পরিমাণবৈচিত্র্য দিয়েই সে সাহিত্যকে বিচার করতে বাধ্য, আর-কোনো উপায় নেই। কিন্তু বিচারকেরা সেই হ্রাসবৃদ্ধিকে অনিত্য বলে স্বীকার করেন না ; তারা বৈজ্ঞানিক ভজি নিয়ে নিধিকার অবিচলতার ভান করে থাকেন ; কিন্তু এ বিজ্ঞান মেকি বিজ্ঞান, খাটি ময়— স্বয়গড় বিজ্ঞান, শাশ্বত নয়। উপস্থিতমত যখন একজন বা এক সম্প্রদায়ের লোক সাহিত্যিকের উপরে কোনো মত জাহির করেন তখন সেই ক্ষণিক চলমান জাদর্শের অনুসারে সাহিত্যিকের ও পুরস্কারের ভাগ-বাটোয়ার হয়ে থাকে। তার বড়ো আদালত নেই ; তার ফঁাসির দণ্ড হলেও সে একান্ত মনে আশা করে যে, বেঁচে থাকতে থাকতে