পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মহাত্মা গান্ধী \Oe & বেন জাজ গলা ছেড়ে বলতে পারি, "তুমি ধেয়ে না, আমরা গ্রহণ করলাম তোমার ব্ৰত।" তা যদি না পারি, এত বড়ো জীবনকে যদি ব্যর্থ হতে দিই, তবে তার চেয়ে বড়ো সর্বনাশ, আয় কী হতে পারে। জামরা এই কথাই বলে থাকি যে, বিদেশীরা আমাদের শক্রতা করছে ; কিন্তু তার চেয়ে বড়ো শক আছে আমাদের মজার মধ্যে, সে আমাদের ভীরুতা। সেই ভীরুতাকে জয় করার জন্যে বিধাত। আমাদের শক্তি পাঠিয়ে দিয়েছেন তার জীবনের মধ্য দিয়ে ; তিনি আপন অভয় দিয়ে আমাদের ভয় হরণ করতে এসেছেন। সেই তার দান-স্বদ্ধ তাকে আজ কি আমরা ফিরিয়ে দেব। এই কৌপীনধারী আমাদের দ্বারে দ্বারে আঘাত করে ফিরেছেন, তিনি আমাদের সাবধান করেছেন কোনখানে আমাদের বিপদ । মানুষ যেখানে মানুষের অপমান করে, মানুষের ভগবান সেইখানেই বিমুখ। শত শত বছর ধরে মামুষের প্রতি অপমানের বিষ আমরা বইয়ে দিয়েছি ভারতবর্ষের নাড়ীতে নাড়ীতে। হীনতার অসহ বোঝা চাপিয়ে দিয়েছি শত শত নত মস্তকের উপরে ; তারই ভারে সমস্ত দেশ আজ ক্লান্ত, দুর্বল। সেই পাপে সোজা হয়ে দাড়াতে পারছি নে। আমাদের চলবার রাস্তায় পদে পদে পঙ্ককুও তৈরি করে রেখেছি ; আমাদের সৌভাগ্যের অনেকখানি তলিয়ে যাচ্ছে তারই মধ্যে। এক ভাই আর-এক ভাইয়ের কপালে স্বহস্তে কলঙ্ক লেপে দিয়েছে, মহাত্মা সইতে পারেন নি এই পাপ । সমস্ত অন্ত:করণ দিয়ে শোনো তার বাণী । অনুভব করে, কী প্রচণ্ড তার সংকল্পের জোর। আজ তপস্বী উপবাস আরম্ভ করেছেন, দিনের পর দিন তিনি অন্ন নেবেন না। তোমরা দেবে না তাকে অন্ন ? তার বাণীকে গ্রহণ করাই তার অন্ন, তাই দিয়ে তাকে বঁাচাতে হবে। অপরাধ অনেক করেছি, পাপ পুঞ্জীভূত হয়ে উঠেছে। ভাইয়ের সঙ্গে ব্যবহার করেছি দাসের মতো, পশুর মতো। সেই অপমানে সমস্ত পৃথিবীর কাছে ছোটো করে রেখেছে আমাদের। যদি তাদের প্রাপ্য সন্মান দিতাম তা হলে জাজ এত দুৰ্গতি হত না আমাদের। পৃথিবীর অন্ত সব সমাজকে লোকে সম্মান করে, ভয় করে, কেননা তারা পরস্পর ঐক্যবদ্ধনে বন্ধ। আমাদের এই হিন্দুসমাজকে আঘাত করতে, অপমান করতে, কারো মনে ভয় নেই, বার বার তার প্রমাণ পাই। কিসের জোরে তাদের এই স্পর্ব সে কথাটা যেন এক মুহূর্ত না ভুলি। যে সন্মান মহাত্মাজি সবাইকে দিতে চেয়েছেন, সে সম্মান আমরা সকলর্কে দেব। যে পারবে না দিতে, ধিক্ তাকে। ভাইকে ভাই বলে গ্রহণ করতে বাধা দেয় যে সমাজ, ধিক্ সেই জীর্ণ সমাজকে । সব চেয়ে বড়ো ভীরুতা তখনই প্রকাশ পায় যখন সত্যকে চিনতে পেরেও মানতে পারি নে। সে ভীরুতার ক্ষমা নেই।