পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\9y • রবীন্দ্র-রচনাবলী হয়ে পড়েছে ইটের প্রাচীরের উপর। এখানে ওখানে দু-চারজন শুভ্ৰ-খন্ধর-পরিহিত পুরুষ নারী শান্ত ভাবে আলোচনা করছেন। লক্ষ্য করবার বিষয়, কারাগারের মধ্যে এই জনতা। কারো ব্যবহারে প্রশ্ৰয়জনিত শৈথিল্য নেই। চরিত্রশক্তি বিশ্বাস আনে, জেলের কর্তৃপক্ষ তাই শ্রদ্ধা করেই এদেরকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে মেলামেশা করতে দিতে পেরেছেন। এরা মহাত্মাজির প্রতিশ্রুতির প্রতিকূলে কোনো সুযোগ গ্রহণ করেন নি। আত্মমর্যাদার দৃঢ়তা এবং অচাঞ্চল্য এদের মধ্যে পরিস্ফুট। দেখলেই বোঝা যায়, ভারতের স্বরাজ্য-সাধনার যোগ্য সাধক এর । অবশেষে জেলের কর্তৃপক্ষ গবর্মেন্টের ছাপ-মারা মোড়ক হাতে উপস্থিত হলেন । র্তার মুখেও আনন্দের আভাস পেলুম। মহাত্মাজি গম্ভীর ভাবে ধীরে ধীরে পড়তে লাগলেন। সরোজিনীকে বললেম, এখন ওঁর চার পাশ থেকে সকলের সরে যাওয়া উচিত। মহাত্মাজি পড়া শেষ করে বন্ধুদের ডাকলেন। শুনলেম, তিনি তাদের আলোচনা করে দেখতে বললেন । এবং নিজের তরফ থেকে জানালেন, কাগজট ডাক্তার আম্বেদকরকে দেখানো দরকার ; তার সমর্থন পেলে তবেই তিনি নিশ্চিন্ত হবেন । বন্ধুরা এক পাশে দাড়িয়ে চিঠিখানি পড়লেন। আমাকেও দেখালেন। রাষ্ট্রবুদ্ধির রচনা সাবধানে লিখিত, সাবধানেই পড়তে হয়। বুঝলেম মহাত্মাজির অভিপ্রায়ের বিরুদ্ধ নয়। পণ্ডিত হৃদয়নাথ কুঞ্জ রুর পরে ভার দেওয়া হল চিঠিখানার বক্তব্য বিশ্লেষণ করে মহাত্মাজিকে শোনাবেন । র্তার প্রাঞ্চল ব্যাখ্যায় মহাত্মাঞ্জির মনে আর কোনো সংশয় রইল না। প্রায়োপবেশনের ব্ৰত উদ্যাপন হল। প্রাচীরের কাছে ছায়ায় মহাত্মাজির শষ্যা সরিয়ে আনা হল। চতুর্দিকে জেলের কম্বল বিছিয়ে সকলে বসলেন। লেবুর রস প্রস্তুত করলেন শ্ৰীমতী কমলা নেহেরু। Inspector-General of Prisons– fifi xxs: Są orą first szMrs R– অম্বুরোধ করলেন, রস যেন মহাত্মাক্তিকে দেন শ্ৰীমতী কস্তুরীবাঈ নিজের হাতে । মহাদেব বললেন ‘জীবন যখন শুকায়ে যায় করুণাধারায় এসো’ গীতাঞ্জলির এই গানটি মহাত্মাজির প্রিয়। স্বর ভূলে গিয়েছিলেম। তথনকার মতো স্বর দিয়ে গাইতে হল। পণ্ডিত গুণমশাস্ত্রী বেঙ্গ পাঠ করলেন। তার পর মহাত্মাজি শ্ৰীমতী কস্তুরীবাঈয়ের হাত হতে ধীরে ধীরে লেবুর রস পান করলেন। পরিশেষে সবরমতী-আশ্ৰমবাসীগণ এবং সমবেত সকলে 'বৈষ্ণব জন কো’ গানটি গাইলেন। ফল ও মিষ্টায় বিতরণ হল, সকলে গ্রহণ করলেম । জেলের অবরোধের ভিতর মেহোৎসব। এমন ব্যাপার আর কখনো ঘটে নি ।