পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లిపిన রবীন্দ্র-রচনাবলী ९ শিলাইদহে পদ্মাতীরে সাহিত্যচর্চা নিয়ে নিভৃতে বাস করতুম। একটা স্বষ্টির সংকল্প নিয়ে সেখান থেকে এলেম শান্তিনিকেতনের প্রাস্তরে । তখন আশ্রমের পরিধি ছিল ছোটো। তার দক্ষিণ সীমানায় দীর্ঘ সার-বাধা শালগাছ। মাধবীলতা-বিতানে প্রবেশের দ্বার। পিছনে পুব দিকে আমবাগান, পশ্চিম দিকে কোথাও-বা তাল, কোথাও-বা জাম, কোথাও-বা ঝাউ, ইতস্তত গুটিকয়েক নারকেল। উত্তরপশ্চিম প্রাস্তে প্রাচীন ছুটি ছাতিমের তলায় মার্বেল পাথরে বাধানো একটি নিরলংকৃত বেদী। তার সামনে গাছের আড়াল নেই, দিগন্ত পর্যস্ত অবারিত মাঠ, সে মাঠে তখনো চাষ পড়ে নি। উত্তর দিকে আমলকীবনের মধ্যে অতিথিদের জন্তে দোতলা কোঠা আর তারই সংলগ্ন রান্নাবাড়ি প্রাচীন কদমগাছের ছায়ায় । আর-একটি মাত্র পাক বাড়ি ছিল একতলা, তারই মধ্যে ছিল পুরানো আমলের বাধানে তত্ত্ববোধিনী এবং আরো-কিছু বইয়ের সংগ্রহ। এই বাড়িটিকেই পরে প্রশস্ত করে এবং এর উপরে আর-একতলা চড়িয়ে বর্তমান গ্রন্থাগার স্থাপিত হয়েছে। আশ্রমের বাইরে দক্ষিণের দিকে বাধ তখন ছিল বিস্তৃত এবং জলে ভরা। তার উত্তরের উচু পাড়িতে বহুকালের দীর্ঘ তালশ্রেণী। আশ্রম থেকে দেখা যেত বিনা বাধায়। আশ্রমের পূর্ব সীমানায় বোলপুরের দিকে ছায়াশূন্ত রাঙামাটির রাস্তা গেছে চলে। সে রাস্তায় লোকচলাচল ছিল সামান্য । কেননা শহরে তখনো ভিড় জমে নি, বাড়িম্বর সেখানে অল্পই। ধানের কল তখনে আকাশে মলিনতা ও আহার্যে রোগ বিস্তার করতে আরম্ভ করে নি। চারি দিকে বিরাজ করত বিপুল অবকাশ নীরব নিস্তব্ধ। আশ্রমের রক্ষী ছিল বৃদ্ধ দ্বারী, সর্দার ঋজু দীর্ঘ প্রাণসার তার দেহ । হাতে তার লম্বা পাকার্বাশের লাঠি, প্রথম বয়সের দস্থ্যবৃত্তির শেষ নিদর্শন। মালী ছিল হরিশ, দ্বারীর ছেলে । অতিথিভবনের একতলায় থাকতেন দ্বিপেন্দ্রনাথ তার কয়েকজন অকুচরপরিচর নিয়ে। আমি সস্ত্রীক আশ্রয় নিয়েছিলুম দোতলার ঘরে । এই শাস্ত জনবিরল শালবাগানে অল্প কয়েকটি ছেলে নিয়ে ব্ৰহ্মবান্ধব উপাধ্যায়ের সহায়তায় বিদ্যালয়ের কাজ আরম্ভ করেছিলুম। আমার পড়াবার জায়গা ছিল প্রাচীন জামগাছের তলায় । * ছেলেদের কাছে বেতন নেওয়া হত না, তাদের স্বা-কিছু প্রয়োজন সমস্ত আমিই জুগিয়েছি। একটা কথা ভুলেছিলুম ষে সেকালে রাজস্বের ষষ্ঠ ভাগের বরাদ্ধ ছিল তপোবনে, আর আধুনিক চতুষ্পাঠীর অবলম্বন সামাজিক ক্রিয়াকর্ম উপলক্ষে