পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্রমের রূপ ও বিকাশ 'రిపిరి নিত্যপ্রবাহিত দানদক্ষিণ। অর্থাৎ এগুলি সমাজেরই অঙ্গ, এদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্তে কোনো ব্যক্তিগত স্বতন্ত্র চেষ্টার প্রয়োজন ছিল না। অথচ আমার আশ্রম ছিল একমাত্র আমারি ক্ষীণ শক্তির উপরে নির্ভর করে। গুরুশিষ্কের মধ্যে আর্থিক দেনাপাওনার সম্বন্ধ থাকা উচিত নয় এই মত একদা সত্য হয়েছিল যে সহজ উপায়ে, বর্তমান সমাজে সেটা প্রচলিত না থাকা সত্ত্বেও মতটাকে রক্ষা করবার চেষ্টা করতে গেলে কর্মকর্তার আত্মরক্ষা অসাধ্য হয়ে ওঠে, এই কথাটা অনেকদিন পর্যস্ত বহু দুঃখে আমার দ্বারা পরীক্ষিত হয়েছে । আমার স্বযোগ হয়েছিল এই যে, ব্রহ্মবান্ধব এবং তার খৃস্টান শিন্য রেবাটা ছিলেন সন্ন্যাসী । এই কারণে অধ্যাপনার আর্থিক ও কর্ম -ভার লঘু হয়েছিল তাদের দ্বারা। এই প্রসঙ্গে আর-একজনের কথা সর্বাপেক্ষ আমার মনে জাগছে, তার কথা কোনোদিন ভুলতে পারি নে। গোড়া থেকে বলা যাক । এই সময়ে দুটি তরুণ যুবক, তাদের বালক বললেই হয়, এসে পড়লেন আমার কাছে। অজিতকুমার চক্রবর্তী তার বন্ধু কবি সতীশচন্দ্র রায়কে নিয়ে এলেন আমাদের জোড়াসাকো বাড়িতে, আমার একতলার বসবার ঘরে । সতীশের বয়স তখন উনিশ, বি.এ. পরীক্ষা তার আসন্ন। তার পূর্বে তার একটি কবিতার খাতা অজিত আমাকে পড়বার জন্তে দিয়েছিলেন । পাতায় পাতায় খোলসা করেই জানাতে হয়েছে আমার মত। সব কথা অনুকূল ছিল না। আর-কেউ হলে এমন বিস্তারিত বিশ্লেষণে পবৃত্ত হুতুম না। সতীশের লেখা পড়ে বুঝেছিলুম তার অল্প বয়সের রচনায় অসামান্তত অনুজ্জলভাবে প্রচ্ছন্ন । ধার ক্ষমতা নি:সন্দিগ্ধ, দুটে একটা মিষ্ট কথায় তাকে বিদায় করা তার অসন্মাননা। আমার মতের যে অংশ ছিল অপ্রিয় অজিত তাতে অসহিষ্ণু হয়েছিলেন, কিন্তু সৌম্যমূর্তি সতীশ স্বীকার করে নিয়েছিলেন প্রসন্নভাবে। আমার মনের মধ্যে তখন আশ্রমের সংকল্পটা সব সময়েই ছিল মুখর হয়ে। কথাপ্রসঙ্গে তার একটা ভবিষ্কং ছবি আমি এদের সামনে উৎসাহের সঙ্গে উজ্জল করে ধয়েছিলুম। দীপ্তি দেখা দিল সতীশের মুখে । আমি তাকে আহ্বান করি নি আমার কাজে । আমি জানতুম তার সামনে তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপরের দুই বড়ে ধাপ বাকি। তার শেষভাগে ছিল জীবিকার আশ্বাসবাণী আইনপরীক্ষায় । একদিন সতীশ এসে বললেন, যদি আমাকে গ্রহণ করেন আমি যোগ দিতে চাই আপনার কাজে । আমি বললুম, পরীক্ষা দিয়ে পরে চিত্তা কোরো। সতীশ বললেন, দেব না পরীক্ষা। কারণ পরীক্ষা দিলেই আত্মীয়স্বজনের ধাক্কায় সংসারধাত্রার ঢালু পথে আমাকে গড়িয়ে নিয়ে চলবে। কিছুতে তাকে নিরস্ত করতে পারলে না। জারিত্র্যের ভার অবহেলায় মাথায় করে