পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७२७ রবীন্দ্র-রচনাবলী আপনার এখানকার কাজে যোগদান করতে পারতুম তবে নিজেকে কৃতাৰ্থ বোধ করতুম। কিন্তু সম্প্রতি তা সম্ভব না হওয়াতে কিঞ্চিং শ্রদ্ধার অঞ্জলি দান করে গেলুম। এই বলে আমার হাতে একটি কাগজের মোড়ক দিয়ে গেলেন। পরে খুলে দেখলেম হাজার টাকার একখানি নোট। পরীক্ষকরূপে ষা পেয়েছিলেন সমস্তই তিনি তার শ্রদ্ধার নিদর্শনরূপে দান করে গেলেন । কিন্তু কেবল সেই একদিনের দান নয়, তার পর থেকে প্রতিদিন তিনি নিবেদন করেছেন তার শ্রদ্ধার অর্ঘ্য একান্ত অনুপযুক্ত বেতন রূপে । এদের অনেক পরে আশ্রমের সাধনাক্ষেত্রে দেখা দিলেন নন্দলাল। ছোটো বড়ো সমস্ত ছাত্রের সঙ্গে এই প্রতিভাসম্পন্ন আর্টিস্টের একাত্মকতা অতি আশ্চর্ষ। তার আত্মদান কেবলমাত্র শিক্ষকতায় নয়, সর্বপ্রকার বদান্ততায় । ছাত্রদের রোগে, শোকে, অভাবে তিনি তাদের অকৃত্রিম বন্ধু। তাকে যারা শিল্পশিক্ষা উপলক্ষে কাছে পেয়েছে তারা ধন্ত হয়েছে । তার পর থেকে নানা কর্মী, নানা বন্ধু আশ্রমের সাধনাক্ষেত্রে সমবেত হয়েছেন এবং আপন আপন শক্তি ও স্বভাবের বিশিষ্টতা অনুসারে আশ্রমের গঠনকার্যে ক্রমশ বিচিত্র উপকরণ জুগিয়ে এসেছেন। স্বষ্টিকার্যে এই বৈচিত্র্যের প্রয়োজন আছে। নতুন নতুন কালের প্রেরণায় নতুন নতুন রূপ আপনাকে ব্যক্ত করতে থাকে এবং এই উপায়েই কালের সঙ্গে সামঞ্চস্ত রক্ষা করে তবে সে আপনার শক্তিকে অক্ষুন্ন রাখতে সমর্থ হয়। সেই পরিবর্তমান আদর্শের অনুবৃত্তির দ্বারা পুরাতন কালের ভিত্তির উপরেই নতুন কালের স্বষ্টি সম্পূর্ণতা লাভ করে। এই নিয়ে কোনো আক্ষেপ করা বৃথা । বস্তুত প্রাচীনকালের ছন্দে নতুনকাল তাল ভন্ন করলে স্বাক্টর সংগতি রক্ষা হয় না। আযাঢ় ১৩৪৮ 19 ‘জীবনস্মৃতিতে লিখেছি, আমার বয়স যখন অল্প ছিল তখনকার স্কুলের রীতিপ্রকৃতি এবং শিক্ষক ও ছাত্রদের আচরণ আমার পক্ষে নিতান্ত দুঃসহ হয়ে উঠেছিল। তখনকার শিক্ষাবিধির মধ্যে কোনো রস ছিল না, কিন্তু সেইটেই আমার অসহিষ্ণুতার একমাত্র কারণ নয়। কলকাতা শহরে আমি প্রায় বন্দী অবস্থায় ছিলেম । কিন্তু বাড়িতে তবুও বন্ধনের ফঁাকে ফাকে বাইরের প্রকৃতির সঙ্গে আমার একটা আনন্দের সম্বন্ধ জয়ে গিয়েছিল। বাড়ির দক্ষিণ দিকের পুকুরের জলে সকাল-সন্ধ্যার ছায়া এপার