পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আশ্রমের রূপ ও বিকাশ ৩২৯ আসন্ন হলেও শ্রদ্ধাবান রোগীরা যেমন করে চিকিৎসকের সমস্ত উপদেশ অক্ষুঞ্জ রেখে পালন করে, পঞ্চাশ বিষে জমিতে আলু চাষের পরীক্ষায় সরকারি কৃষিতত্ত্বপ্রবীণদের নির্দেশ সেইরকম একান্ত নিষ্ঠার সঙ্গেই পালন করেছি। তারাও আমার ভরসা জাগিয়ে রাখবার জন্তে পরিদর্শনকার্যে সর্বদাই যাতায়াত করেছেন। তারই বহুব্যয়সাধ্য ব্যর্থতার প্রহসন নিয়ে বন্ধুবর জগদীশচন্দ্র আজও প্রায় মাঝে মাঝে হেসে থাকেন। কিন্তু তারও চেয়ে প্রবল অট্টহাস্ত নীরবে ধ্বনিত হয়েছিল চামরু-নাম-ধারী এক-হাত-কাটা সেই রাজবংশী চাষির ঘরে, যে ব্যক্তি পাচ কাঠা জমির উপযুক্ত বীজ নিয়ে কৃষিতত্ত্ববিদের সকল উপদেশই অগ্রাহ করে আমার চেয়ে প্রচুরতর ফল লাভ করেছিল। চাষবাসসম্বন্ধীয় যে-সব পরীক্ষা-ব্যাপারের মধ্যে বালক বেড়ে উঠেছিল তারই একটা নমুনা দেবার জন্তে এই গল্পট বলা গেল ; পাঠকেরা হাসতে চান হাস্কন, কিন্তু এ কথা যেন মানেন যে শিক্ষার অঙ্গরূপে এই ব্যর্থতাও ব্যর্থ নয়। এত বড়ো অদ্ভুত অপব্যয়ে আমি ষে প্রবৃত্ত হয়েছিলুম তার কুইক্সটিত্বের মূল্য চামরুকে বোঝাবার স্থযোগ হয় নি, সে এখন পরলোকে । এরই সঙ্গে সঙ্গে পুথিগত বিদ্যার আয়োজন ছিল সে কথা বলা বাহুল্য। এক পাগলা মেজাজের চালচুলোহীন ইংরেজ শিক্ষক হঠাৎ গেল জুটে । তার পড়বার কায়দা খুবই ভালো, আরো ভালে৷ এই যে কাজে ফাকি দেওয়া তার ধাতে ছিল না। মাঝে মাঝে মদ খাবার স্থনিবার উত্তেজনায় সে পালিয়ে গেছে কলকাতায়, তার পর মাথা হেঁট করে ফিরে এসেছে লজ্জিত অমৃতপ্ত চিত্তে । কিন্তু কোনোদিন শিলাইদহে মত্ততায় আত্মবিশ্বত হয়ে ছাত্রদের কাছে শ্রদ্ধা হারাবার কোনো কারণ ঘটায় নি। ভৃত্যদের ভাষা বুঝতে পারত না, সেটাকে অনেক সময়ে সে মনে করেছে ভৃত্যদেরই অসৌজন্ত। তা ছাড়া সে আমার প্রাচীন মুসলমান চাকরকে তার পিতৃদত্ত ফটিক মামে কোনোমতেই ডাকত না । তাকে অকারণে সম্বোধন করত স্থলেমান। এর মনস্তত্ত্বরহস্ত কী জানি নে । এতে বার বার অসুবিধা ঘটত। কারণ চাঘিম্বরের সেই চাকরটি বরাবরই ভূলত তার অপরিচিত নামের মর্যাদা । আরো কিছু বলবার কথা আছে। লরেন্সকে পেয়ে বসল রেশমের চাষের নেশায়। শিলাইদহের নিকটবর্তী কুমারখালি ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির আমলে রেশম-ব্যবসায়ের একটা প্রধান আডড ছিল। সেখানকার রেশমের বিশিষ্টত খ্যাতিলাভ করেছিল বিদেশী হাটে। সেখানে ছিল রেশমের মস্ত বড়ো কুঠি । একদা রেশমের তাত বন্ধ হল সমস্ত বাংলাদেশে, পূর্বস্বতির স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে কুঠি রইল শূন্ত পড়ে। যখন পিতৃৰণের প্রকাও বোঝা আমার পিতার সংলার চেপে ধরল বোধ করি তারই কোনো এক সময়ে তিনি