পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WOOe রবীন্দ্র-রচনাবলী রেলওয়ে কোম্পানিকে এই কুঠি বিক্রি করেন। সে সময়ে গোরাই নদীর উপরে ব্রিজ তৈরি হচ্ছে। এই সেকেলে প্রাসাদের প্রভূত ইট পাথর ভেঙে নিয়ে সেই কোম্পানি নদীর বেগ ঠেকাবার কাজে সেগুলো জলাঞ্জলি দিলে। কিন্তু যেমন বাংলার তাতির দুদিনকে কেউ ঠেকাতে পারলে না, যেমন সাংসারিক দুর্যোগে পিতামহের বিপুল ঐশ্বর্ষের ধ্বংস কিছুতে ঠেকানো গেল না— তেমনি কুঠিবাড়ির ভগ্নাবশেষ নিয়ে নদীর ভাঙন রোধ মানলে না ; সমস্তই গেল ভেসে ; স্বসময়ের চিহ্নগুলোকে কালস্রোত যেটুকু রেখেছিল নদীর স্রোতে তাকে দিলে ভাসিয়ে। লরেন্সের কানে গেল রেশমের সেই ইতিবৃত্ত । ওর মনে লাগল, আর একবার সেই চেষ্টার প্রবর্তন করলে ফল পাওয়া যেতে পারে ; দুর্গতি যদি খুব বেশি হয় অন্তত আলুর চাষকে ছাড়িয়ে যাবে না। চিঠি লিখে যথারীতি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে সে খবর আনালে। কীটদের আহার জোগাবার জন্তে প্রয়োজন ভেরেও গাছের। তাড়াতাড়ি জন্মানে গেল কিছু গাছ কিন্তু লরেন্সের সবুর সইল না। রাজশাহি থেকে গুটি আনিয়ে পালনে প্রবৃত্ত হল অচিরাং । প্রথমত বিশেষজ্ঞদের কথাকে বেদবাক্য বলে মানলে না, নিজের মতে নতুন পরীক্ষা করতে করতে চলল। কীটগুলোর স্কুদে স্কুদে মুখ, ক্ষুদে স্থদে গ্রাস, কিন্তু ক্ষুধার অবসান নেই। তাদের বংশবৃদ্ধি হতে লাগল খাদ্যের পরিমিত আয়োজনকে লঙ্ঘন করে। গাড়ি করে দূর দূর থেকে অনবরত পাতার জোগান চলল। লরেন্সের বিছানাপত্র, তার চৌকি টেবিল, খাতা বই, তার টুপি পকেট কোর্তা– সর্বত্রই হল গুটির জনতা । তার ঘর দুর্গম হয়ে উঠল দুৰ্গদ্ধের ঘন আবেষ্টনে। প্রচুর ব্যয় ও অক্লাস্ত অধ্যবসায়ের পর মাল জমল বিস্তর, বিশেষজ্ঞেরা বললেন অতি উৎকৃষ্ট, এ জাতের রেশমের এমন সাদা রঙ হয় না। প্রত্যক্ষ দেখতে পাওয়া গেল সফলতার রূপ— কেবল একটুখানি ক্রটি রয়ে গেল। লরেন্স বাজার যাচাই করে জানলে তখনকার দিনে এ মালের কাটতি আল্প, তার দাম সামান্ত । বন্ধ হুল ভেরেও পাতার অনবরত গাড়িচলাচল, অনেকদিন পড়ে রইল ছালাভরা গুটিগুলো ; তার পরে তাদের কী ঘটল তার কোনো হিসেব আজ কোথাও নেই। সেদিন বাংলাদেশে এই গুটিগুলোর উৎপত্তি হল অসময়ে। কিন্তু যে শিক্ষালয় খুলেছিলেম তার সময় পালন তার করেছিল। আমাদের পণ্ডিত ছিলেন শিবধন বিদ্যার্ণব । বাংলা আর সংস্কৃত শেখানে ছিল তার কাজ, আর তিনি ব্রাহ্মধর্মগ্রন্থ থেকে উপনিষদের শ্লোক ব্যাখ্যা করে আবৃত্তি করাতেন। তার বিশুদ্ধ সংস্কৃত উচ্চারণে পিতৃদেব তার প্রতি বিশেষ প্রসন্ন ছিলেন । বাল্যকাল থেকে প্রাচীন ভারতবর্ধের তপোবনের ষে আদর্শ আমার মনে ছিল তার কাৰ এনি করে শুরু হয়েছিল ৰিভার ভি স্যৰ উপাদানে গড়ে ওঠেনি।