পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৮৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

विश्वछांब्रडौ סטאש আমাকে সংসার থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছিল, আমি একান্তৰাসী ছিলাম। মানবসমাজের সঙ্গে আমার বাল্যকাল থেকে ঘনিষ্ঠ যোগ ছিল না, আমি তার প্রান্তে মহিষ হয়েছি। ‘জীবনস্থতিতে এর বিবরণ পড়ে থাকবেন। আমি সমাজের থেকে দূরে বাস করতুম বলে তার দিকে বাতায়নের পথ দিয়ে দৃষ্টিপাত করেছি। তাই আমার কাছে দূরের দুর্লভ জিনিসের প্রতি আকর্ষণ খুব গভীর ছিল। কলকাতা শহরে জামার বাস ছিল, কাজেই ইটকাঠপাথরের মধ্যে আমার গতিবিধি সংকীর্ণ সীমায় আবদ্ধ ছিল। আমাদের চারি দিকেই বাড়িগুলি মাথা তুলে থাকত, আর তাদের মাঝখানে অল্প পরিধির মধ্যে সামান্ত কয়েকটি গাছপালা আর একটি পুষ্করিণী ছিল। কিন্তু দূরে আমাদের পাড়ার বাইরে বেশি বড়ো বাড়ি ছিল না, একটু পাড়াগ গোছের ভাব ছিল। সে সময় আমাকে বাইরের প্রকৃতি ভাক দিয়েছিল। মনে আছে মধ্যাহ্নে লুকিয়ে একলা ছাদের কোণটি গ্রহণ করতুম। উন্মুক্ত নীলাকাশ, চিলের ডাক, আর পাড়ার গলির জনতার বিচিত্র ছোটাে ছোটো কলধ্বনির মধ্য দিয়ে বাড়ির ছাদের উপর থেকে ষে জীবনযাত্রার খণ্ড খণ্ড ছবি পেতুম তা আমার হৃদয়কে আলোড়িত করেছিল। এর মধ্যে মানবপ্রকৃতিরও একটা ডাক ছিল। দূর থেকে কখনো-বা লোকালয়ের উপর রাত্রের ঘুম-পাড়ানো স্বর, কখনো-বা প্রভাতের ঘুম-জাগানো গান, আর উৎসবকোলাহলের নানারকম ধ্বনি আমার হৃদয়কে উতলা করে দিয়েছিল। বর্ষার নবমেম্বাগমে আকাশের লীলাবৈচিত্ৰ্য আর শরতের শিশিরে ছোটো বাগানটিতে স্বাস ও নারিকেলরাজির ঝলমলানি আমার কাছে অপূর্ব হয়ে দেখা দিত। মনে আছে অতি প্রত্যুষে স্বর্ষোদ্বয়ের আবির্ভাবের সঙ্গে তাল রাখবার জন্ত তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে তার অপেক্ষা করেছি। সকালের সেই শিশিরের উপর সোনার আলো আমার হৃদয়ে নিবিড় গভীর আনন্দবেদনার সঞ্চার করেছে। বিশ্বজগৎ যেন আমাকে বার বার করে আহান করে বলেছে, “তুমি আমার আপনার। আমার মধ্যে যে সত্য আছে তা সকলের সঙ্গে ৰোগের প্রতীক্ষা রাখে, কিন্তু তবুও তোমার-আমায় এই বিরহের মধ্যেও মাধুর্য রয়েছে। তখনো এই বহির্বিশ্বের উপলব্ধি আমার মনের ভিতরে অস্পষ্টভাবে ঘনিয়ে উঠেছে। ছোটো ঘরের ভিতরকার মানুষটিকে বাইরের ডাক গভীরভাবে মূদ্ধ করেছিল। তার পর আমার মনে আছে যে, প্রথম যখন জামাদের শহরে ডেঙ্গুজর দেখা দিল, এই ব্যাধি আমার কাছে বেরিয়ে পড়ার মস্ত স্বযোগের মতো এল। গঙ্গার ধারে পেনেটির বাগানে আমরা বাস করতে লাগলুম। এই প্রথম অপেক্ষাকৃত নিকটভাবে প্রকৃতির স্পর্শ পেলাম। এ ষে কত মনোহয় তা ব্যত্ন করতে পারি না। আপনার